মায়ামি কোর্টহাউজের বাইরে ট্রাম্প সমর্থকদের অবস্থান

মেহরিন জাহান, টিবিএন ডেস্ক

জুন ১৩ ২০২৩, ১৫:৩৪

ডনাল্ড ট্রাম্পের আদালতে হাজিরার দিনে মায়ামিতে জড়ো হচ্ছেন সমর্থকরা। ছবি: সংগৃহীত

ডনাল্ড ট্রাম্পের আদালতে হাজিরার দিনে মায়ামিতে জড়ো হচ্ছেন সমর্থকরা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

২০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার সকালে হলিউড থেকে মায়ামি পৌঁছেছেন কেভিন রড্রিগুয়েজ। পরে আছেন সুয়েটশার্ট, যাতে লেখা- ‘যিসাস ইজ মাই সেভিয়ার, ট্রাম্প ইজ মাই প্রেসিডেন্ট’। হাত উঁচিয়ে দেখালেন তার পতাকা, তাতেও ডনাল্ড ট্রাম্পের ছবি।

ক্লাসিফায়েড নথি অব্যবস্থাপনার ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বিকালে মায়ামির কোর্টে হাজিরা দেবেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও প্রিয় নেতাকে সমর্থন জানাতে সকাল থেকে কোর্ট এলাকায় জড়ো হচ্ছেন রড্রিগুয়েজের মতো অনেকে।

আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লাল শিবির থেকে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এরইমধ্যে ব্যবসায়িক জালিয়াতি সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন আরেকটি দেওয়ানি মামলায়। তারপরেও সমর্থকরা তার পক্ষে অটল।

রড্রিগুয়েজ বলেন, ‘তারা (সরকার) জানে যে ট্রাম্পই ২০২৪ এর নির্বাচনে জিতবেন, এজন্যই তারা তাকে ভোট থেকে হটানোর চেষ্টা করছে… তারা আসলে ট্রাম্পকে ভয় পায়। তিনি সর্বকালের সেরা প্রার্থী।’

কোর্টহাউজের বাইরে সাদা টিশার্ট পরা কয়েক কৃষ্ণাঙ্গকে দল বেঁধে ঘুরতে দেখা যায়। টিশার্টে লেখা- ‘ব্ল্যাকস ফর ট্রাম্প’।

ভোরের আলো ফোটার আগেই গলায় ট্রাম্পের ছবির মালা ঝুলিয়ে আদালত চত্বরে হাজির হয়েছেন গ্রেগ ডনোভ্যান। এক হাতে ব্যানার ও আরেক হাতে তার ছোট্ট পতাকা। দুটোতেই লেখা- ‘ট্রাম্প ২০২৪’।

ডনোভ্যান বলেন, ‘আমি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গতকাল বিকাল ৪টায় এসে পৌঁছেছি.. আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। আমি চাই না এখানে ডিসির (ক্যাপিটল দাঙ্গা) মতো ঘটনা ঘটুক।


২০২৪ এর নির্বাচনের জন্য লাল শিবির থেকে কাকে এগিয়ে রাখবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিস্যান্টিস, সঙ্গে আর্নল্ড শোয়ার্যেনেগার হবেন সেক্রেটারি অফ স্টেইট।’

কোর্টে ট্রাম্পের হাজিরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোর্টহাউজের ওপর দিয়ে ঘুরছে বাহিনীর হেলিকপ্টার। বাইরে চারপাশ টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি।

আদালত চত্বরের সামনে কিছুদূরে ট্রাম্প সমর্থকদের পাশাপাশি জড়ো হয়েছেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরা। সেখানে লাইভস্ট্রিমিং নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।

এর আগে সমর্থকদের মায়ামিতে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে বলেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আশঙ্কায় বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মায়ামি পুলিশ চিফ ম্যানুয়েল মোরালেস।

তবে সমর্থকদের সামনে দিয়ে আদালতে প্রবেশ করবেন না ট্রাম্প। ডিফেন্স অ্যাটর্নি মিশেল সাসকাওয়ের জানান, সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা ট্রাম্পকে প্রাইভেট এন্টেন্স দিয়ে নিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘কোর্টে প্রবেশের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলও আছে। ট্রাম্পকে দেখা নাও পেতে পারেন সমর্থকরা।’


যা ঘটেছিল

গোপন নথি জব্দের মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ৩৭টি অভিযোগ এনেছেন ফেডারেল আইনজীবীরা। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট গত শুক্রবার অভিযোগপত্র প্রকাশ করে।

সেখানে বলা হয়েছে ২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর জাতীয় নিরাপত্তার তথ্য নিজের কাছে রেখে দেয়া সংক্রান্ত ৩১টি অভিযোগ, ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের একটি, নথি বা রেকর্ড আটকে রাখার একটি, নথি বা রেকর্ড বেআইনিভাবে গোপন করার একটি, ফেডারেল তদন্তে নথি গোপন করার একটি, গোপন করার পরিকল্পনার একটি এবং মিথ্যা বিবৃতি ও উপস্থাপনার একটিসহ মোট ৩৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোর বাড়ি থেকে গত বছরের আগস্টে উদ্ধার করা হয় ক্লাসিফায়েড নথিগুলো। রাষ্ট্রীয় নথির অব্যবস্থাপনা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট।


৪৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের কাছে থাকা নথিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ছিল ‘রাষ্ট্রের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পর্কিত’ নথি। সেগুলোতে অ্যামেরিকার পারমাণবিক অস্ত্র, অ্যামেরিকা ও এর মিত্রদের নিরাপত্তার দুর্বল দিক ও আক্রান্ত হলে অ্যামেরিকা সামরিক হামলার মাধ্যমে কীভাবে জবাব দেবে, সেসব পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।


অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্প নথিগুলো বক্সে ভরে মার-অ্যা-লাগোর বাড়ির বেডরুম, স্টোররুম, বাথরুম ও বলরুমে রেখে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কিছু বক্স তিনি নিউ জার্সির বেডমিনস্টার গলফ ক্লাবে সরিয়ে নেন।

নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়িক নথির জালিয়াতির সংক্রান্ত ৩৪টি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে আদালতে হাজিরার তিন মাসেরও কম সময় পর ফের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হলো।

এটি এখন পর্যন্ত অ্যামেরিকার কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে গুরুতর আইনি জটিলতা। এর আগে কোনো সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হননি।

এই তিন মাসের মধ্যে আবার সাবেক কলাম লেখক ই. জিন ক্যারলের দেওয়ানি মামলায় দোষি সাব্যস্ত হন ট্রাম্প, ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের রায় দেন বিচারক।

সবশেষ ফ্লোরিডার মামলায় সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগে দোষি সাব্যস্ত হলে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন