ট্রাম্পকে ঘিরে যত আইনি জটিলতা

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১৩ ২০২৩, ১৭:৪৩

নানা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে আছেন সাবেক অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক্স: বিবিসি

নানা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে আছেন সাবেক অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক্স: বিবিসি

  • 0

অ্যামেরিকার ইতিহাসে এবারই প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট বড় ধরনের আইনি জটিলতায় পড়লেন। তিনি হলেন রিপাবলিকান শিবিরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ডনাল্ড ট্রাম্প। তিন মাসের মধ্যে তিনি দুটি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন একটি দেওয়ানি মামলায়।

এখনও দুটি ঘটনায় তদন্ত চলছে তার বিরুদ্ধে।

সব মিলিয়ে ব্যাপক আইনি ঝামেলার পরেও ট্রাম্প একদম ফুরফুরে মেজাজে থাকার দাবি করছেন। বিভিন্ন সময় জোর গলায় বলেছেন, আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ফের হোয়াইট হাউযে বসবেন। কোনো বাধাই তাকে নির্বাচন থেকে পিছু হটাতে পারবে না।

ট্রাম্প সমর্থকরাও তাকে এগিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি গোপন নথি জব্দের ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর রয়টার্স এক জরিপ চালায়।

তাতে দেখা গেছে, লাল শিবির থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে চেয়েছেন ৪৩ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থক। ২২ শতাংশ প্রার্থী হিসেবে চেয়েছেন রন ডিস্যান্টিসকে। বাকি প্রার্থীদের পক্ষে ভোট পড়েছে অল্প কিছু।


ক্লাসিফায়েড নথি জব্দের ঘটনা

প্রেসিডেন্সি শেষে হোয়াইট হাউয ছাড়ার পরেও রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি ছিল ট্রাম্পের জিম্মায়। সেগুলো গত আগস্টে তার ফ্লোরিডার মার-অ্যা-লাগোর বাড়ি থেকে জব্দ করে এফবিআই। তার মাধ্যমে ক্লাসিফায়েড নথির অব্যবস্থাপনা হয়েছে কিনা- তা জানতে তদন্ত শুরু করে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট।

ফেডারেল আইনজীবীরা ট্রাম্পকে গত শুক্রবার ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করেন। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত অভিযোগপত্রের টাইটেলে বলা হয়েছে, ‘ইউনাইটেড স্টেইটস অফ অ্যামেরিকা ভার্সেস ডনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্ড ওয়াল্ট নাউটা’।

নাউটা তার ব্যক্তিগত সহকারী, তাকেও গোপন নথির অব্যবস্থাপনায় জড়িত থাকার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অপরাধের অভিযোগ আনা হলো।

৪৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের কাছে থাকা নথিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ছিল ‘রাষ্ট্রের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পর্কিত’ নথি। সেগুলোতে অ্যামেরিকার পারমাণবিক অস্ত্র, অ্যামেরিকা ও এর মিত্রদের নিরাপত্তার দুর্বল দিক ও আক্রান্ত হলে অ্যামেরিকা সামরিক হামলার মাধ্যমে কীভাবে জবাব দেবে, সেসব পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। ট্রাম্প নথিগুলো বাক্সে ভরে মার-অ্যা-লাগোর বাড়ির বেডরুম, স্টোররুম, বাথরুম ও বলরুমে রেখে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে কিছু বাক্স তিনি নিউ জার্সির বেডমিনস্টার গলফ ক্লাবে সরিয়ে নেন।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর জাতীয় নিরাপত্তার তথ্য নিজের কাছে রেখে দেয়া সংক্রান্ত ৩১টি অভিযোগ, ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রের একটি, নথি বা রেকর্ড আটকে রাখার একটি, নথি বা রেকর্ড বেআইনিভাবে গোপন করার একটি, ফেডারেল তদন্তে নথি গোপন করার একটি, গোপন করার পরিকল্পনার একটি এবং মিথ্যা বিবৃতি ও উপস্থাপনার একটিসহ মোট ৩৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে।


স্টর্মি ড্যানিয়েল বিতর্ক

পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলকে হাশ মানি দেয়ার জেরে ব্যবসায়িক জালিয়াতির অপরাধে গত মার্চে অভিযুক্ত হন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরি তাকে ৩৪টি ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করে। আদালতে গত এপ্রিলে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতারও হন তিনি, প্রথমবারের মতো আসামি হিসেবে বসেন বিচারকের সামনে।

পরে অবশ্য বিনা জামিনে ছাড়া পান তিনি।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প হয়েছেন অ্যামেরিকার ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট বা সাবেক প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে।

এই মামলার বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে।


ক্যাপিটল দাঙ্গা

ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার ঘটনায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার তদন্ত করে কংগ্রেশনাল কমিটি। এরপর তাকে দাঙ্গা উসকে দেয়ায় অভিযুক্ত করে কমিটি। সেই প্রতিবেদন পাঠানো হয় জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে।

ডিপার্টমেন্টে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলছে অপরাধমূলক তদন্ত। এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তদন্ত শেষে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে কিনা- সে সিদ্ধান্ত জানাবে ডিপার্টমেন্ট।


নির্বাচনের ফলে প্রভাব বিস্তার

জর্জিয়ায় ২০২০ সালের ইলেকশনের ফলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প- এমন অভিযোগ তদন্ত করছেন প্রসিকিউটররা। এ ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক তদন্ত চলছে।

২৬ সদস্যের গ্র্যান্ড জুরি তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এই গ্রীষ্মেই প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।


যৌন হেনস্তার মামলা

সাবেক কলাম লেখক ই. জিন ক্যারলের করা দেওয়ানি মামলায় গত মে মাসে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ক্যারলকে যৌন নিপীড়ন ও মানহানির দায়ে ট্রাম্পকে ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জাজ।

অ্যামেরিকার কোনো আদালত এই প্রথম দেশটির কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে সেক্স প্রিডেটর বা যৌন শিকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে দণ্ড ঘোষণা করে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন