ক্যানসার ওষুধের স্বল্পতায় সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা

টিবিএন ডেস্ক

জুন ৫ ২০২৩, ২৩:০৬

কিমোথেরাপি ট্যাবলেট ক্যাপসিটাবাইন। ছবি: সংগৃহীত

কিমোথেরাপি ট্যাবলেট ক্যাপসিটাবাইন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দেয়া তথ্য থেকে এবিসি নিউযের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বাজারে ক্যানসারের চিকিৎসায় অতিপ্রয়োজনীয় অন্তত ১১টি ওষুধের স্বল্পতা রয়েছে। চিকিৎসকেরা বাধ্য হচ্ছেন রোগীকে ফিরিয়ে দিতে।

অ্যামেরিকা জুড়ে হাজারো ক্যানসার রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না। যে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ওভারিয়ান ও মাথা ও কাঁধের ক্যানসারের জন্য জরুরি কারবোপ্লাটিন, এক ধরনের লিউকিমিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাজাসাইটিডিন ও ত্বকের ক্যানসারেরে চিকিৎসার ব্যবহৃত ডেকারবাজাইন।

ওষুধ স্বল্পতার ভুক্তভোগীদের একজন ইলিয়নয়ের নর্থব্রকবাসী গ্রেগ ডি স্টেফানো। সম্প্রতি তার কাঁধে চতুর্থবারের মতো ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু মে মাসে চিকিৎসকেরা তাকে জানান বৈশ্বিক স্বল্পতা থাকায় তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কারবোপ্লাটিন আর সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডি স্টেফানো এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা হতাশ কারণ আমরা শুধু ক্যানসারের বিপক্ষে লড়াই করছি না এখন আমাদের ক্যানসারের ওষুধের স্বল্পতার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।’

এমন অভিজ্ঞতা ডি স্টেফানোর একার নয়। এমন কয়েক হাজার ক্যানসার রোগী ওষুধের স্বল্পতায় উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। অ্যামেরিকান ক্যানসার সোসাইটি মে মাসে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, সরবরাহ স্বল্পতায় ভোগা শীর্ষ পাঁচটি ওষুধের তালিকায় কিমোথেরাপির ওষুধ রয়েছে। রোগীদের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্কতা জানিয়েছিল সংস্থাটি।

দ্য ওহাইয়ো স্টেইট ইউনিভার্সিটি কম্প্রিহেনসিভ ক্যানসার সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর অফ ফার্মেসি জুলি ক্যানারলি-শাহ এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে মাঝে মধ্যেই আমি ওষুধের স্বল্পতা দেখেছি। তবে গত ছয়মাস ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করাটা আমার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল।

‘একটা ওষুধ যেটা একজন ক্যানসার রোগীর জীবন রক্ষা কিংবা দীর্ঘায়িত করতে পারে, স্বল্পতার কারণে তাকে সে ওষুধ দিতে না পারাটা অত্যন্ত হতাশাজনক।’

কোনো কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ একেবারেই নেই। যেগুলোতে আছে সেখানে সংকট সামাল দিতে চিকিৎসকেরা ওষুধের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন কিংবা প্রাধান্যের ভিত্তিতে রোগীকে ওষুধ দিচ্ছেন।

নিউ জার্সির ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ নিউয়ার্কের গাইনোকোলোজিক অনকোলজিস্ট মার্ক আইনস্টাইন এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা একরকম লাইফসাপোর্টে আছি। আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ পাব কিনা জানি না, যেগুলো আছে সেগুলো আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দিচ্ছি। সীমাবদ্ধতা থাকায় ও বিকল্প না থাকায় ঠিক করে দিতে হচ্ছে যে কে কোন ওষুধটা আগে পাবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে দেশজুড়ে ক্যানসার ওষুধ স্বল্পতায় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনেরিক ওষুধের জন্য স্বল্প লাভ, শ্রম ও সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত জটিলতা।

ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনার লাইনবার্জার কমপ্রিহেনসিভ ক্যানসার সেন্টারের চিকিৎসক হ্যানা সানোফ বলেন, ‘যে ওষুধগুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না এগুলো সব পুরনো কিমোথেরাপির ওষুধ, জেনেরিক ও স্বস্তা। যে কারণে ওষুধ নির্মাতাদের এখানে আর্থিক লাভের পরিমাণ খুব কম। 

‘ভারত ও চায়না থেকে আমাদের প্রচুর ওষুধ আসে। কিছুদিন আগে সেখানে বড় কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সাপ্লাই চেইন এমনিতেই দুর্বল ছিল তার মধ্যে ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া আরও সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

আপাত সমাধান হিসেবে, যে ওষুধগুলোর স্বল্পতা রয়েছে তার বিকল্প কার্যকরী ও নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছে সোসাইটি অফ গাইনোকলজিক অনকোলজি। একই সঙ্গে তারা ওষুধগুলোর সম্ভাব্য স্বল্প ডোজ ও দুই ডোজের মধ্যে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ব্যবধান রাখতেও বলেছে সংস্থাটি।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে চিকিৎসকেরা ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পরবর্তী সাপ্লাই কবে আসবে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা চাইছেন। প্রয়োজনে তারা চান জেনেরিক ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়। এফডিএকে জরুরি ওষুধের শেলফ লাইফ বৃদ্ধির উপায়ও বের করার আহ্বান জানান তারা। 


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন