উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর স্বাস্থ্যকর বিটরুট জুস

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫ ২০২৫, ৭:১৯

বিটরুট জুসে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রেট থাকে। ছবি: হেলথ

বিটরুট জুসে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রেট থাকে। ছবি: হেলথ

  • 0

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনির ক্ষতির মতো বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি নীরব ঘাতক। স্পষ্ট কোনো লক্ষণ ছাড়াই বিশ্বজুড়ে মিলিয়ন মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে এটি। নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনির ক্ষতির মতো বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।

বছরের পর বছর ধরে ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদরা রক্তচাপ এবং হৃদরোগের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে বিটরুট জুস হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার।

গবেষণা বলছে, বিট্রুট জুস সিস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় ৩ দশমিক ৫ এমএমআইচজি এবং ডায়াস্টোলিক প্রায় ১ দশমিক ৩ এমএমএইচজি কমায়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা কিডনির সমস্যা থাকা মানুষদের মধ্যে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৭–১২ এমএমএইচজি পর্যন্ত কমেছে।

বয়স্কদের ওপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে দিনে দুইবার বিটরুট জুস খাওয়া রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেছে।

বিটরুট জুসে প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। এটি রক্তনালী শিথিল ও প্রশস্ত করে, ফলে রক্তচাপ কমে।

প্রতিদিন ৭০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার জুস পান শরীরের জন্য উপকারী। এর প্রভাব কখনও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেখা যায়। তবে নিয়মিত খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।দিনে এক কাপ বা ২৫০ মিলিলিটার এর বেশি জুস না খাওয়াই ভালো, এতে নাইট্রেট বা অক্সালেট অতিরিক্ত লোড হবে না যা কিডনির ওপর চাপ ফেলতে পারে।

যদি কিডনিতে পাথর বা হজমে সমস্যা থাকে, তাহলে হালকা ভাপ দিয়ে বিট নরম করে জুস বানানো ভালো। কিডনিতে সমস্যা বা পাথরের ঝুঁকি থাকলে সপ্তাহে ২–৩ বারই পান করা উচিত।

দোকানের বিট শট বা প্রক্রিয়াজাত জুসে অতিরিক্ত চিনি ও লবণ থাকে, তাই তাজা তৈরি করা জুসই ভালো।

রক্তচাপ ছাড়াও বিটরুট জুস আরও অনেক বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারিতা রয়েছে। যেমন-

স্ট্যামিনা ও ব্যায়ামের পারফরম্যান্স বাড়ায়: বিট্রুটে থাকা নাইট্রেট শরীরে অক্সিজেন ব্যবহার আরও কার্যকর করে, তাই অনেক অ্যাথলেট ওয়ার্কআউটের আগে বিটরুট জুস পান করেন।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রক্তনালীকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

পাচনতন্ত্রকে সহায়তা করে: বিটরুট জুস প্রাকৃতিক ফাইবারের উৎস, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: গবেষণায় দেখা গেছে, নাইট্রিক অক্সাইড মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বিটরুট জুসের কিছু সতর্কতা

যদিও বিটরুট জুসের অনেক উপকার রয়েছে। তবে উচ্চ নাইট্রেট থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত পরিমাণে এই জুস খেলে কিডনিতে চাপ পড়তে পারে। কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি থাকা ব্যক্তিদের বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ বিটে অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে জমে পাথরের কারণ হতে পারে।

অন্যান্য সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

বিটুরিয়া: জুস খাওয়ার পরে প্রস্রাবে লাল বা গোলাপি রঙ দেখা দিতে পারে। এটি ক্ষতিকর নয়, শুধু অপ্রত্যাশিত মনে হতে পারে।

পেটে সমস্যা: কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জুস ডায়রিয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া: যারা ইতোমধ্যেই রক্তচাপ কমানোর ওষুধ বা ব্লাড থিনার নিচ্ছেন, তাদের জন্য প্রতিদিন বিটরুট জুস নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।