
নিউ ইয়র্কে প্রাদুর্ভাব হওয়া লিজিওনেয়ারস কী, এটি কীভাবে ছড়ায়

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৫ ২০২৫, ১২:৫১ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৭ ২০২৫, ১২:২১

লিজিওনেয়ারস্ একটি গুরুতর নিউমোনিয়া যা লেজিওনেলা ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়। ছবি: ইয়াহু
- 0
৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তি, ধূমপায়ী, এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন নিউ ইয়র্কবাসীরা এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।
গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক সিটির হারলেম এলাকায় ছড়িয়ে পড়া লিজিওনেয়ারস্ সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২৫ জুলাই শুরু হওয়া এই প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ জনের মৃত্যু এবং ৫৮ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
লিজিওনেয়ারস্ কি?
লিজিওনেয়ারস্ একটি গুরুতর নিউমোনিয়া যা লেজিওনেলা ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়। লেজিওনেলা নিউমোফিলা ব্যাকটেরিয়া লিজিওনেয়ারস্ রোগ নামেও পরিচিত। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত উষ্ণ পানিতে জন্মায়। লিজিওনেলা ব্যাকটেরিয়া মূলত বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র পানির ফোঁটার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করলে মানুষ লিজিওনেয়ারস্ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
লিজিওনেয়ারস্ রোগের লক্ষণ:
এবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্ক হেলথ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত), মাথাব্যথা, ঠান্ডা লাগা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি এবং মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব, বা ডায়রিয়ার মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিশেষ করে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তি, ধূমপায়ী, এবং দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্ক সিটির হারলেম অঞ্চলের জিপ কোড ১০০২৭, ১০০৩০, ১০০৩৫, ১০০৩৭, এবং ১০০৩৯ সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে লিজিওনেয়ারস্।
ভারপ্রাপ্ত হেলথ কমিশনার মিশেল মোর্স বলেন, ‘এই জিপ কোডগুলোতে যাদের ফ্লুর মতো লক্ষণ রয়েছে তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, লিজিওনেয়ারস্ রোগ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে কার্যকরভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। তবে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রাপ্তবয়স্কদের মতো উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নিউ ইয়র্কবাসীদের এবং যারা ধূমপান করেন বা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে ভুগছেন, তাদের তাদের লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন থাকা উচিত। এবং লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই রোগটি ছোঁয়াচে নয়। অর্থাৎ একজন থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হতে পারে না এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের মাধ্যে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, লিজিওনেয়ারস্ রোগটি প্লাম্বিং সিস্টেমের কারণে হতে পারে যেখানে লিজিওনেলা ব্যক্টেরিয়া বৃদ্ধির জন্য দায়ী অনুকূল পরিবেশ থাকে। যেমন কুলিং টাওয়ার, ওয়ার্লপুল স্পা, হট টাব, হিউমিডিফায়ার, গরম পানির ট্যাঙ্ক এবং বৃহৎ এয়ার-কন্ডিশনিং সিস্টেমের বাষ্পীভবনকারী কনডেন্সার।
১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে ফিলাডেলফিয়ার বেলভিউ-স্ট্র্যাটফোর্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত পেনসিলভানিয়া আমেরিকান লিজিয়ন কনভেনশনে প্রথম এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ায়।