১০ হাজার প্রসবে সাহায্য করেছেন যে ধাত্রী

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২ ২০২৩, ১৯:০১

কাথিজা বিবি। ছবি: বিবিসি

কাথিজা বিবি। ছবি: বিবিসি

  • 0

ভারতের তামিলনাড়ুতে কাথিজা বিবি নামের একজন নার্স ১০ হাজার নবজাতকের প্রসবে সাহায্য করার পর সম্প্রতি অবসরে গেছেন। এত শিশুর সফল প্রসবে সাহায্য করায় তিনি সরকারি পুরস্কার পেয়েছেন।

৬০ বছর বয়সী কাথিজা বিবি বলেন, ‘আমি গর্বিত, কারণ যে ১০ হাজার শিশুর প্রসব করতে সাহায্য করেছি তার একটিও আমার জানা মতে মারা যায়নি।’

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা. সুব্রামানিয়ান জানান, কাথিজার চাকরিজীবনে কোনো শিশুর মৃত্যুর রেকর্ড নেই। এজন্য সম্প্রতি তিনি একটি সরকারি পুরস্কার পেয়েছেন।

কাথিজা তিন দশক ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেছেন। ভারত উচ্চ মাতৃমৃত্যু হারের দেশ থেকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে এখন শিশুমৃত্যু হার বৈশ্বিক হারের কাছাকাছি।

কাথিজা জানান, তিনি মেয়ে শিশু জন্ম নেয়া এবং কম সন্তান নেয়ার ব্যাপারে মানুষের মনোভাবের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।

কাথিজা ১৯৯০ সালে যখন কাজ শুরু করেন তখন তিনি নিজেই গর্ভবতী ছিলেন।

এই নারী বলেন, ‘আমি সাত মাসের গর্ভবতী ছিলাম। তবু আমি অন্য নারীদের সাহায্য করতাম। দুই মাসের একটি ছোট মাতৃত্বকালীন বিরতির পর আমি কাজে ফিরে আসি। আমি জানি নারীরা প্রসবের সময় কতটা উদ্বিগ্ন হন। তাই তাদের মনে স্বস্তি আনা এবং আত্মবিশ্বাসী করা আমার প্রথম অগ্রাধিকার।’

কাথিজার অনুপ্রেরণার পেছনে আছেন তার মা জুলাইকা। তিনিও একজন গ্রাম্য নার্স ছিলেন। কাথিজা বলেন, ‘আমি আমার ছোটবেলায় সিরিঞ্জ দিয়ে খেলতাম। হাসপাতালের গন্ধে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

অল্প বয়স থেকেই কাথিজা দরিদ্র ও অর্ধ-শিক্ষিত গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে তার মায়ের কাজের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সে সময় বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা নগণ্য ছিল এবং সমস্ত নারীরা রাজ্যের প্রসূতি হোমের উপর নির্ভর করতেন, এখন যা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

কাথিজা এই অগ্রগতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী শিক্ষার বিস্তারে সরকারি বিনিয়োগকে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণ দিনে আমি একবার দুটি শিশুর প্রসবের সাহায্য করতে পারতাম। আমার জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন ছিল ২০২০ সালের ৪ মার্চ। সেটি ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং লোকজন আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল।

‘ক্লিনিকের ভিতরে গিয়ে দেখি দুজন প্রসব বেদনা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সাহায্য করার পর আরও ছয় জন আমাদের ক্লিনিকে আসেন। সেদিন আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন বাচ্চাদের কান্না শুনতে পাচ্ছিলাম। এটি আমার জন্য ছিল এক চমৎকার অনুভূতি।’

কাথিজা অনুমান করেন তিনি ৫০ জোড়া জমজ এবং একবার একসঙ্গে তিনটি শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘ধনী পরিবারের নারীরা এখন প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে পছন্দ করেন। এজন্য সিজার বিভাগের সামনে ভিড় দেখা যায়।

‘আমার মা প্রসবের সময় অনেক মৃত্যু দেখেছেন। সিজারিয়ান অনেক জীবন বাঁচিয়েছে। যখন আমি কাজ শুরু করি মানুষ তখন অস্ত্রপচারকে ভয় পেত, তবে এখন অনেকে প্রাকৃতিক উপায়ের প্রসবকে ভয় পান এবং অস্ত্রোপচার বেছে নিচ্ছেন।’

গ্রামীণ পরিবারের আয় তিন দশকে যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। উল্লেখযোগ্য একটি পরিবর্তন হচ্ছে স্বামীরা সন্তান প্রসবের সময় সাগ্রহে স্ত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতে চান।

কাথিজা বলেন, ‘আমি খারাপ সময় এবং ভালো সময় দুটিই দেখেছি। কিছু স্বামী কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে স্ত্রীর কাছেও যেতেন না। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় কন্যা সন্তানের জন্মের পরে স্ত্রী বিপাকে পড়ে যেতেন, অঝোরে কাঁদতেন।’

নব্বইয়ের দশকের লিঙ্গ নির্ধারক গর্ভপাত এতটাই প্রকট হয়েছিল যে ভারত সরকার ডাক্তারদের জন্য বাবা-মায়ের কাছে শিশুদের লিঙ্গ প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছিল। কাথিজা বলেন, ‘বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অনেক দম্পতি লিঙ্গ নির্বিশেষে মাত্র দুটি বাচ্চাতেই সন্তুষ্ট থাকছে।’

অবসর গ্রহণের পর কাথিজার পরবর্তী জীবনের জন্য কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেই। তবে তিনি বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজের অভাব অনুভব করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় নবজাতকের তীক্ষ্ণ প্রথম কান্না শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘নারীরা একটি বেদনাদায়ক প্রসবের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও সন্তানের কান্না শুনে সব ভুলে হাসতে শুরু করেন। এই দৃশ্যটি দেখা আমার জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল। এত বছর ধরে এটি আমার জন্য একটি প্রাঞ্জল যাত্রা ছিল।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন