
স্ক্রুওয়ার্ম আতঙ্ক: মাংসখেকো পরজীবীটি সম্পর্কে যা জানা জরুরি

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭ ২০২৫, ১২:৪১ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৩ ২০২৫, ১০:১৯

চোখ, নাক এবং মুখেও পরজীবীটির ম্যাগট বা লার্ভা পাওয়া যেতে পারে। ছবি: সিবিএস নিউজ
- 0
ক্ষতস্থানে বা শরীরের অন্য কোথাও পোকামাকড় দেখতে পান বা অনুভব করেন, তাহলে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এ সপ্তাহের শুরুতে অ্যামেরিকায় প্রথমবারের মতো মানুষের দেহে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামের মাংসখেকো পরজীবী শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এইচএইচএস।
এইচএইচএসের একজন মুখপাত্র এবিসি নিউজকে জানান, মেক্সিকো এবং মধ্য অ্যামেরিকার দেশগুলোতে গবাদি পশুর মধ্যে এই পরজীবীর প্রাদুর্ভাব থেকে এই সংক্রমণের উৎপত্তি।
এই সংক্রমণ সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার, তা হল এটি কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণগুলো কী এবং কীভাবে এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।
নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম কী?
নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম (এনডব্লিউএস) হল এক ধরণের পরজীবী মাছি যা জীবন্ত টিস্যু খায় এবং মায়িয়াসিস সৃষ্টি করতে পারে যা মূলত লার্ভা বা ম্যাগটসের আক্রমণ।
এই পরজীবী মাছি অনেক ধরণের প্রাণীকে আক্রমণ করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে গবাদি পশু, পোষা প্রাণী, বন্যপ্রাণী এবং বিরল ক্ষেত্রে, মানুষ।
লক্ষণ
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন -সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, এনডব্লিউএস সংক্রমণের ফলে ত্বকের ক্ষত তৈরি হয় যা সময়ের সাথে সাথে নিরাময় হয় না। ত্বকে বেদনাদায়ক ক্ষত বা ঘা, খোলা ঘা থেকে রক্তপাত, ঘায়ে পোকামাকড় অনুভব করা বা দেখা, অথবা আক্রান্ত স্থান থেকে দুর্গন্ধ সহ বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ফেডারেল হেলথ অর্গানাইজেশন জানায়, চোখ, নাক এবং মুখেও পরজীবীটির ম্যাগট বা লার্ভা পাওয়া যেতে পারে।
টাফ্টস মেডিসিন হেলথ সিস্টেমের প্রধান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শিরা ডোরন এবিসি নিউজকে বলেন, নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্মের লার্ভা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
সিডিসি বলছে, বর্তমানে শুধুমাত্র ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের কোন প্রতিকার নেই তবে এনডব্লিউএস সংক্রমণের জন্য কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে।
যদি কেউ মনে করেন যে তিনি সংক্রামিত হতে পারেন অথবা ক্ষতস্থানে বা শরীরের অন্য কোথাও পোকামাকড় দেখতে পান বা অনুভব করেন, তাহলে তাদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সিডিসি জানায়, একজন চিকিৎসককে ম্যাগটগুলো অপসারণ করতে হবে। এরজন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। সংস্থাটি রোগীদের ম্যাগটগুলো নিজে নিজে অপসারণ করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।
সংক্রমণ রোধ করার উপায়
ডোরেন বলেন, যে কেউ পৃথিবীর যেকোনো দেশে ভ্রমণ করলে বা এনডব্লিউএস বেশি পাওয়া যায় এমন জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে খোলা ক্ষত ঢেকে রাখা জরুরি। পাশাপাশি ইপিএ অনুমোদিত মশা বা পোকা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
তিনি পরামর্শ দেন, লম্বা হাতাওয়ালা জামা, লম্বা প্যান্ট, প্যান্ট মোজার ভেতরে গুঁজে রাখতে। এই ধরণের সাধারণ প্রতিরোধ কৌশলগুলো কাজে দেয়। এগুলো শুধু স্ক্রুসওয়ার্ম নয়, নানান ধরণের পোকামাকড়ের কামড় থেকেও রক্ষা করে।
বর্তমানে পরজীবীটিকে অ্যামেরিকায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। যার অংশ হিসেবে টেক্সাসে একটি জীবাণুমুক্ত মাছি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক লরি ফেরিন্স বলেন, ১৯৬৬ সালে অ্যামেরিকা স্ক্রুওয়ার্ম নির্মূল করে এবং ২০১৭ সালে ফ্লোরিডা ‘কিসে’ প্রাদুর্ভাব ছাড়া অ্যামেরিকা তুলনামূলকভাবে পরজীবী মুক্ত।
ফ্লোরিডায় কিসের সংক্রমণের সময় কেবল প্রাণীদের মধ্যেই সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। সেসময়ে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেনি। আর তাই মানুষের সংক্রমণ হওয়া খুবই বিরল বলে মনে করেন ফেরিন্স।
অ্যামেরিকার প্রাণীদের মধ্যে স্ক্রুওয়ার্ম শনাক্ত করা হয়নি। ফেরিন্স বলেন, অ্যামেরিকায় বর্তমানে সংক্রমণের ঝুঁকি কম, তাই বড় উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে সতর্ক থাকুন। তবে বর্তমানে এখানে কোনো সক্রিয় সংক্রমণের চিহ্ন নেই এবং অ্যামেরিকায় স্থানীয়ভাবে সংক্রমণও ঘটেনি।’