হার্ট দুর্বল কি না বুঝে নিন ৫ লক্ষণে

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৬ ২০২৫, ৯:১২ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ১৩ ২০২৫, ১০:০৪

বয়স্ক থেকে অল্প বয়সি প্রায় সব বয়সের মানুষের হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া

বয়স্ক থেকে অল্প বয়সি প্রায় সব বয়সের মানুষের হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া

  • 0

বুকে ব্যথা হওয়ার মানেই ধরে নেয়া হার্ট অ্যাটাক হয়েছে যা একদমই সঠিক নয়।

যত দিন যাচ্ছে তত হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। বয়স্ক থেকে অল্প বয়সি প্রায় সব বয়সের মানুষের হার্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে। হৃদরোগের কথা ভাবলেই প্রথম লক্ষণ হিসেবে আমরা বুঝি বুকে ব্যথা।

তবে বদহজম, আঘাত এমনকি কাশি থেকেও বুকে ব্যথা হতে পারে। তাই বুকে ব্যথাই হৃদরোগের একমাত্র লক্ষণ নয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় কোন ব্যথা হয় না। তাই বুকে ব্যথা ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা হার্টের দুর্বল অবস্থার আভাস দেয়।

হার্ট দুর্বল কিনা বুঝতে আসুন জেনে নিই দুর্বল হার্টের এমনই ৫টি লক্ষণ সম্পর্কে-

অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট:

শ্বাসকষ্ট হৃদরোগের সম্মুখীন হওয়ার একটি সাধারণ লক্ষণ। দুর্বল হার্টের অপর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালনের ফলে ফুসফুসে তরল জমা হয়। ফলে হাঁটতে বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্মের সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় রাতে হঠাৎ হাঁপানি অনুভব হয়। সোজা হয়ে শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অনেকে অতিরিক্ত বালিশ নিয়ে ঘুমান।

সময়ের সাথে সাথে এই লক্ষণটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তাই শ্বাস নেওয়ার জন্য বারবার বিরতির প্রয়োজন হলে এবং ঘুমের সময় অতিরিক্ত বালিশের প্রয়োজন সম্ভাব্য হার্টের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। এই লক্ষণ দেখা দিলে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা:

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামের পরেও যদি সীমাহীন ক্লান্তি অনুভব হয় তবে এটি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা দুর্বল হওয়ার একটি ইঙ্গিত। হৃদযন্ত্র শরীরের অঙ্গ এবং পেশীগুলোতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবারহ করে থাকে। হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের অপর্যাপ্ত সরবরাহ ক্লান্তি এবং দুর্বলতা তৈরি করে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা কোন সাধারণ জিনিস তোলার সময় যদি আগের চেয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই তা অবহেলা করা উচিত নয়।

কেননা এ ধরনের ক্লান্তি সাধারণ ক্লান্তি অনুভবের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে। শক্তি কমে যাওয়া ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো এক সময় অত্যধিক কঠিন বলে মনে হয় এবং এসব কাজ করতে ঘন ঘন বিরতির প্রয়োজন পড়ে। এমনটি হলে অবশ্যই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

পা, গোড়ালি বা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া:

একটি দুর্বল হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে সারা শরীরে তরল জমা হয়। ফলে সারা শরীরে ফোলাভাব দেখা দেয়। যার সাথে পা, গোড়ালি এবং পায়ে ফোলাভাবের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার সময় পায়ের ফোলাভাব আরও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং শরীরের নিচের দিকে ভারী অনুভূতির সাথে সাথে অস্বস্তি তৈরি করে।

ফোলাভাব দ্রুত বৃদ্ধি পেলে হৃদপিণ্ডের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাই তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

মাথা ঘোরা, হালকা মাথাব্যথা বা অজ্ঞান হওয়া:

হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন ফাংশন দুর্বল হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের ফলে মাথা ঘোরা, বা মাথা ঘোরা থেকে অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। অপর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের কারণে শরীর দুর্বল বোধ হয়। সে সাথে কাঁপুনিও অনুভূত হয়।

বিশেষ করে বিশ্রাম শেষে বা কোনও শারীরিক কার্যকলাপ শেষে যদি দুর্বলতা বা কাঁপুনি অনুভূতি হয় তবে একদমই অবহেলা নয়।

এই লক্ষণগুলো খুব দ্রুত দেখা দেয় এবং রোগীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লক্ষণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে হৃদপিণ্ড আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বিপজ্জনক হৃদরোগের জটিলতা এড়াতে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।

অনিয়মিত বা দ্রুত হৃদস্পন্দন:

হৃদস্পন্দনের ধরণ থেকে হৃদস্পন্দনের সুস্থতা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া) বা অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদস্পন্দন দুর্বল হার্টের একটি লক্ষণ। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ফলে হার্টের স্বাভাবিক স্পন্দন কমে যায় যা ব্যথা না থাকা সত্ত্বেও বুকের ভেতরে ঝাঁকুনি এবং ধড়ফড়ের অনুভূতি তৈরি করে।

বিশ্রাম নেয়ার পর কিংবা বা শারীরিকভাবে নড়াচড়া না করলেও কোন সতর্কতা ছাড়াই ধড়ফড় শুরু হয় এবং কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর ফলে মাথা ঘোরা এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি হয়। তাই এমন অনুভব হলে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্যে হার্টের পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ এ লক্ষণগুলো হৃদস্পন্দনের কার্যকারিতা নষ্টের ইঙ্গিত।

হার্ট সুস্থ রাখতে করণীয়:

হার্ট সুস্থ রাখতে ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ হৃদরোগ-প্রতিরোধী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি অধিক পরিমাণে লবণ, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে সপ্তাহে কয়েকবার কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মাঝারি ব্যায়াম করা উচিত।

ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান হার্টকে আরও অসুস্থ করে তোলে। তাই এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, ধ্যান এবং যোগব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

নিয়মিত চিকিৎসা, হার্ট পরীক্ষা এবং নির্ধারিত ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

আদর্শ ওজন বজায় রাখলে আপনার হৃদপিণ্ড তার প্রয়োজনীয় কাজ কোন বাঁধা ছাড়াই করতে সক্ষম হবে। তাই স্থূলতার বিষয়ে সচেতন থাকুন।