খাদ্যাভাস বদলে হরমোনের সমস্যা দূর হয় না

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৫ ২০২৩, ৪:২৫

হরমোন পরিবর্তনের ফলে নারীরা দেহে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

হরমোন পরিবর্তনের ফলে নারীরা দেহে জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

নারীদের ভালো বোধ না করার জন্যে অধিকাংশ সময়ের তাদের হরমোন দায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কথা বলার লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

অনেক ইনফ্লুয়েন্সার নিশ্চয়তা দেন যে, কাঁচা গাজরের সালাদ খেলে এস্ট্রোজেনের বাড়তি প্রবাহে ভারসাম্য আনা যাবে। কেউ আবার বলেন পিরিয়ডের ব্যাথা বা চুল পড়া বন্ধ করতে খালি পেটে কফি খাওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে এগুলোর কোনোটা সঠিক তো নয়ই, বিজ্ঞানসম্মতও নয়।

দেহের বৃদ্ধি, বিপাক, প্রজনন ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণসহ হরমোনের অনেকগুলো কাজ রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভিনিয়ার স্কুল অফ মেডিসিনের হরমোন বিশেষজ্ঞ অ্যান কাপোলা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেন, হরমোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা হচ্ছে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে বিপাক বা মেটাবলিজমকে সমন্বয় করা।

কিভাবে কাজ করতে হবে তা বলার জন্য গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন রক্ত ​​​​প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বার্তা বহন করে। গ্ল্যান্ড ও নানা অঙ্গের জটিল নেটওয়ার্কটি এন্ডোক্রাইন সিস্টেম হিসাবে পরিচিত।

অনেক সময় হরমোনের ঘনত্বের পরিবর্তন শারীরিক প্রভাব ফেলে। একজন নারীর জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপের (বয়ঃসন্ধি থেকে মেনোপজ পর্যন্ত) মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের সময় ওঠানামা করে সেক্স হরমোন। এই হরমোনের পরিবর্তনের সময়, মেজাজ পরিবর্তন, ওজনের ওঠানামা, যৌন চাহিদার পরিবর্তন ও দেহে জ্বালা-পোড়ার মতো লক্ষণ অনুভব করতে পারেন।

এছাড়া, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের অসুখের কারণে হরমোনে অসমতার জন্য গুরুতর এনডোক্রাইন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এস্ট্রোজেনের আধিক্যের কারণে দেখা দিতে পারে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের (পিএসিওএস)।

কাপোলার মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমনটা বলা হয় যে খাদ্যাভাসে সামান্য পরিবর্তনের ফলে এনডোক্রাইন সমস্যা দূর হবে সেটা ঠিক নয়।

দেহকে ভারসাম্য দেয় হরমোন

টিকটকার বা ইউটিউবাররা ব্রণ, ক্লান্তি ও ওজন বৃদ্ধির জন্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতাকে দায়ি করে। হজম ও ঘুমের সমস্যা, শরীরের ব্যথা ও উদ্বেগও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। সম্মিলিতভাবে সমস্যাগুলোকে অনলাইনে ‘অ্যাড্রিনাল ফ্যাটিগ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এসবের জন্য দায়ী নয়।

কাপোলা বলেন, ‘এতো সহজে অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড কাজ করা বন্ধ করে দেয় না। এসব গ্ল্যান্ডের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেয়া আচে। সবার দুটো করে অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থাকে। মানুষের সবগুলো কাজ করতে পুরো একটারও দরকার হয় না।‘

একই ব্যাপার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। কাপোলা জানান, মানবদেহ সচল রাখতে পূর্ণক্ষম থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের মাত্র ২০ শতাংশ দরকার হয়। ফলে, অ্যাড্রিনার ফ্যাটিগের ধারণাটাই ভ্রান্ত।

উপরোক্ত লক্ষণগুলোর জন্য হরমোনের প্রভাব কাজ করতে পারে। তবে ঘুম, স্ট্রেস, খাদ্যাভাস ও ঘরে-বাইরে কর্মক্ষম থাকার ওপরও এগুলো নির্ভরশীল। অন্যের সীমাহীন স্ফূর্তি দেখেও নিজেকে নির্জীব মনে হতে পারে।

কাপোলা জানান, এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নির্দিষ্ট কোনো ডায়েটে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। বা কোনো ক্ষেত্রে ডায়েট সাহায্য করবে এমন কোনো উপায়ও নেই।

তিনি বলেন, ‘হরমোনের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত বিষয় যেটা হচ্ছে তা হলো, এর কাজই হচ্ছে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে সেটাতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করে তারা। কোনো কারণে কোনো কিছু অস্বাভাবিক হয়ে পড়লে হরমোনই একমাত্রেও সবকিছু স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে।‘

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, রক্তে যদি থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) এর মাত্রা হ্রাস পায় তাহলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে সয়ংক্রিয়ভাবে টিএসএইচ নির্গত হয়। মাত্রা বেড়ে গেলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ইনসুলিন। রক্তে যদি গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত ইনসুলিন যকৃতকে নির্দেশ দেয় বাড়তি গ্লুকোজ জমা রাখতে, যেন মাত্রা কমে গেলে আবার তা ছেড়ে দিতে পারে।

মূলত হরমোন দেহের কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। হরমোনের তারতম্যে দেহে কোনো পরিবর্তন আসে না।

অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যান

ইন্টারনেট ব্যবহার না করে, আপনার জীবনে আর কী ঘটছে যার কারণে এমনটা হচ্ছে সেটার ওপর ভিত্তি করে কাপোলা আপনার নিজের লক্ষণগুলির একটি তালিকা তৈরির পরামর্শ দেন। আপনার সমস্যাগুলোর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। স্ট্রেসের কারণে মাথা ভার হয়ে থাকতে পারে, খাবারের কারণে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার চিকিত্সকের কাছে সেই তালিকাটি নিয়ে যান।

তার মতে এই তালিকা করা জরুরি। একজন ডাক্তার রোগীর ইতিহাস ঘেটে দেখেন, পরীক্ষা করেন ও লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে আরও পরীক্ষা করতে দেন। উদাহরণস্বরূপ, থাইরয়েডের সমস্যা সাধারণ ও রক্ত ​​পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। যদি সবকিছু ঠিকঠাক দেখায়, তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে যে চিকিৎসার কোনো কারণ নাও থাকতে পারে।

হরমোন ব্যালান্সের জন্য টিকটকাররা সময়মতো ঘুমানো ও পরিমিত খাদ্যাভাসের যে পরামর্শ দেন তার সবই যে খারাপ তা নয়। এগুলো আদতে স্বাস্থ্যের জন্য সামগ্রিকভাবে ভালো কিছু অভ্যাস। নির্দিষ্ট করে হরমোন সমস্যা দূর করার জন্যে নয়।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন