
জেনে নিন লিভারের রোগের চারটি ধাপ ও লক্ষণ

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১ ২০২৫, ২৩:৪৮

সিরোসিসের অর্থ হলো লিভাবের মারাত্মক ক্ষতি। এ ধাপে লিভারে ক্ষতচিহ্ন মারাত্মক আকারে দেখা দেয়। ছবি: এনডিটিভি
- 0
লিভারের রোগ সাধারণত চারটি ধাপে ক্রমাবনতির দিকে যায়।
মানবদেহের শক্তিশালী অঙ্গ লিভার, যেটি সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ভালো থাকার ওপর কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। অঙ্গটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের একটি হলো রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা। এর বাইরে এটি শর্করা, চর্বিযুক্ত ও প্রোটিনজাতীয় খাবার বিপাকে সহায়তার পাশাপাশি এগুলোকে শক্তি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে রূপান্তর করে।
শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি জমা রাখে লিভার। অঙ্গটি প্রোটিন সংশ্লেষণ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
যেসব বিষাক্ত পদার্থ প্রক্রিয়াজাত করে লিভার, সেগুলোই হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির ক্ষতির কারণ।
শরীরে অতিরিক্ত বিষ লিভারের সামর্থ্যকে ভারাক্রান্ত করার পাশাপাশি এর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে।
ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বিগত বছরগুলোতে লিভারের রোগের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক কসরতের অভাব, ক্রমবর্ধমান স্থূলতার হার, ব্যাপক পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন এবং কিছু ওষুধ দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার এর প্রধান কারণ।
চার ধাপ
লিভারের রোগ সাধারণত চারটি ধাপে ক্রমাবনতির দিকে যায়। এসব স্তর ও লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলো টিবিএনের পাঠকদের জন্য।
১. প্রদাহ
প্রাথমিক এ ধাপে লিভার স্ফীত বা এতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। নানা কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, অ্যালকোহল সেবন বা অটোইমিউন রোগ।
প্রদাহ অব্যাহত থাকলে লিভারের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
লক্ষণ
লিভারের প্রদাহে ভোগা বেশির ভাগ ব্যক্তি লক্ষণ দেখেন না, তবে আক্রান্ত কেউ কেউ ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথা বা লিভারের কর্মকাণ্ডে সামান্য বিঘ্ন অনুভব করতে পারেন।
২. ফাইব্রোসিস
প্রদাহ অব্যাহত থাকলে লিভারে ক্ষতচিহ্ন বা ফাইব্রোসিস দেখা দেয়। এই ক্ষতযুক্ত টিস্যু লিভারকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ
এ ধাপে লক্ষণ সামান্য হতে পারে। ফলে কারও পক্ষে ফাইব্রোসিস শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তির ক্লান্তি ও অস্বস্তির অবস্থার অবনতি হতে পারে।
এ ধাপে রক্ত পরীক্ষায় লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ ধরা পড়তে পারে।
৩. সিরোসিস
সিরোসিসের অর্থ হলো লিভাবের মারাত্মক ক্ষতি। এ ধাপে লিভারে ক্ষতচিহ্ন মারাত্মক আকারে দেখা দেয়। এর ফলে লিভারের সুস্থ টিস্যুর উল্লেখযোগ্য অংশে জায়গা করে নেয় ক্ষতযুক্ত টিস্যু।
সিরোসিস পোর্টাল হাইপারটেনশন কিংবা লিভার ফেইলিউরের মতো মারাত্মক জটিলতার কারণ হতে পারে। এ ধাপে লিভারের যথাযথ কর্মকাণ্ড খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
লক্ষণ
এ ধাপে লিভারের রোগের লক্ষণগুলো খুব সহজে শনাক্ত করা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি তলপেট বড় হয়ে যাওয়া, সংশয়, রক্তপাত কিংবা সহজেই আঘাত পাওয়ার মতো সমস্যা দেখতে পারেন।
৪. এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ (ইএসএলডি)
এ ধাপে এসে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার। একে আর কার্যকরভাবে সচল রাখা যায় না। ধাপটি প্রায়ই প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি করা জটিলতাগুলো সামনে আনে। এ ধরনের ধাপে থাকা রোগী দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
কয়েকটি বিষয় বোঝাতে ইএসএলডি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লিভার বিকল, স্টেজ ফোর হেপাটাইটিস সি এবং অবনতিশীল সিরোসিস।
লক্ষণ
চতুর্থ ধাপের লক্ষণগুলো সাধারণত মারাত্মক, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে হেপাটিক এনসেফ্যালোপ্যাথিজনিত সংশয়, ক্রমাগত জন্ডিস, পা ও তলপেট মারাত্মক ফুলে যাওয়া এবং একাধিক অঙ্গ বিকল।