পর্যাপ্ত পানি পান করেন না? ৯টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানা উচিত আপনার

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১ ২০২৫, ২২:৫৪

গ্লাসে ঢালা স্বচ্ছ পানি। ছবি: হার্ভার্ড হেলথ

গ্লাসে ঢালা স্বচ্ছ পানি। ছবি: হার্ভার্ড হেলথ

  • 0

ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যেসব মানুষ দৈনিক দেড় লিটারের কম পানি পান করেন, তাদের দেহে প্রাথমিক স্ট্রেস বা চাপ হরমোন কর্টিসোল বেড়ে যায়।

সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যাপ্ত পানি পান। বিপরীতে প্রয়োজনীয় পানি পান না করলে শুধু তৃষ্ণা অনুভব কিংবা মাথাব্যথাই নয়, সমস্যা দেখা দিতে পারে আরও অনেক। এমনকি সামান্য পানিশূন্যতা আপনার দেহ ও মনে অপ্রত্যাশিত প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যেসব মানুষ দৈনিক দেড় লিটারের কম পানি পান করেন, তাদের দেহে প্রাথমিক স্ট্রেস বা চাপ হরমোন কর্টিসোল বেড়ে যায়।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এসসিএমপি জানায়, গবেষণাটিতে ৩২ জন অংশগ্রহণকারীকে দুটি দলে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে একটি দলের অংশগ্রহণকারীরা দিনে নির্দেশিত ছয় থেকে আট কাপ বা মোটামুটি দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করেন। অন্যদিকে অপর দলটির সদস্যরা তা করেননি।

দুটি দলের অংশগ্রহণকারীদেরই আকস্মিক চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। তারপর তাদের মেন্টাল অ্যারিথমেটিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

মানসিক চাপ সংবলিত পরীক্ষার আগে ও পরে দুই দলের সদস্যদের লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, যারা কম পানি পান করেছেন, তাদের কর্টিসোলের স্তর বেশি।

গবেষণার এ ফলের বাইরে শরীরে পানিশূন্যতার বিস্ময়কর আর কী কী প্রভাব রয়েছে, তা নিচে তুলে ধরা হলো।

১. নিশ্বাসে দুর্গন্ধ

যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য লন্ডন জেনারেল প্র্যাকটিসে কর্মরত ডাক্তার নাভিদ আসিফ জানান, সূর্যের সংস্পর্শে এলে কিংবা ব্যায়াম করলে যে পানিশূন্যতা হয়, তা থেকে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা, মাথা ঘোরা, মূত্র উৎপাদন কম হওয়া, মূত্রের রং গাঢ় হওয়া কিংবা মুখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। এর বাইরে কম জানাশোনা কিছু বিষয় রয়েছে, যা ঘটতে পারে পানিশূন্যতা পূরণ না হলে।

তিনি জানান, পানিশূন্যতার ফলে লালা কমে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। সাধারণত এ লালা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

২. চিনির প্রতি লালসা

আসিফ জানান, পানিশূন্যতার ফলে চিনির প্রতি লালসা জাগা সাধারণ। কারণ শক্তির জন্য গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে পরিণত করতে লিভারের দরকার পানি। এর শূন্যতা শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

৩. অ্যালার্জির অবনতি ঘটায়

আসিফ জানান, পানিশূন্যতার ফলে রক্তে সুনির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিকের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এটা সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে অ্যালার্জি পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।

৪. ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা ও পেশিতে টান

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যামের জেনারেল প্র্যাকটিশনার ডাক্তার নাদিরা আউয়াল জানান, শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব আছে পানিশূন্যতার।

তিনি জানান, স্নায়ুর সংকেত ও পেশিতে টানের মতো জৈবিক অনেক তৎপরতার জন্য দরকার সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্লোরাইডের মতো ইলেকট্রোলাইটের। শরীর পানিশূন্য থাকলে অত্যাবশ্যকীয় এসব ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। এ ভারসাম্যহীনতা থেকে পেশিতে ছোটখাটো টান, স্প্যাজম কিংবা চরম পরিস্থিতিতে জ্ঞান হারানোর মতো অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

৫. চামড়ায় অকাল বার্ধক্য

নাদিরা আউয়াল জানান, চামড়ার নমনীয়তা ও স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীর ক্রমাগত পানিশূন্য থাকলে চামড়া শুষ্ক ও কম নমনীয় হয়, যা চামড়ার জ্বালা কিংবা ক্ষতির কারণ হয়। এটি একটা সময় গিয়ে অকাল বার্ধক্য ও চামড়ার সমস্যার ঝুঁকির ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণ হয়।

৬. রক্তচাপ কমে যাওয়া

নাদিরা আউয়াল জানান, শরীর তরল হারালে রক্তের মাত্রা কমে আসে, যা রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। রক্তচাপের এ কমে আসা শরীরজুড়ে টিস্যুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।

তিনি জানান, মারাত্মক পরিস্থিতিতে পানিশূন্যতা হাইপোভোলেমিক শক কিংবা জীবনশঙ্কা তৈরি করতে পারে। এ অবস্থায় শরীরের প্রয়োজন পূরণে যথাযথ রক্ত পাম্প করতে পারে না হৃৎপিণ্ড।

৭. মানসিক সক্ষমতাজনিত প্রভাব

মানসিক সক্ষমতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে পানিশূন্যতা। পানির স্তরে পরিবর্তনের বিষয়ে মস্তিষ্ক অতি সংবেদনশীল। এমনকি সামান্যতম পানিশূন্যতা মানসিক সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

নাদিরা আউয়াল জানান, গবেষণায় দেখা গেছে যে, মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে পানিশূন্যতা।

এ ছাড়া পানিশূন্যতা কোনো ব্যক্তির মধ্যে সংশয় তৈরি করতে পারে। বিশেষত গাড়ি চালানো কিংবা কোনো মেশিন পরিচালনার সময় এ সমস্যার প্রভাব হতে পারে মারাত্মক।

৮. শারীরিক শক্তির অবনতি

নাদিরা আউয়াল জানান, প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান না করলে প্রায়ই ক্লাান্তির পাশাপাশি শারীরিক পারফরম্যান্সের অবনতি ঘটে। শরীরের কোষগুলোতে পুষ্টি ও অক্সিজেন পৌঁছায় পানি। যখন পানির স্তর কমে আসে, তখন এ প্রক্রিয়ার সক্রিয়তা কমে আসে। এর ফলে শক্তি কমে আসার পাশাপাশি শারীরিক পারফরম্যান্স দুর্বল হয়।

তিনি আরও জানান, পানিশূন্যতা দৌড়বিদদের পারফরম্যান্সে সমস্যার পাশাপাশি ব্যায়ামের সময় আহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

৯. কিডনির পাথর ও মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি

ক্রমাগত পানিশূন্যতার ফলে ঝুঁকিতে পড়ে কিডনি। প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি পান মূত্রে খনিজ ও বর্জ্য পদার্থ জমানো বাড়িয়ে কিডনিতে পাথর জমানোর ঝুঁকি তৈরি করে। এটি একটি সময় গিয়ে মূত্রনালিতে জমাটবদ্ধ হয়।

তিনি আরও জানান, নিয়মিত পানিশূন্যতা মূত্রনালির সংক্রমণ এবং সম্ভবত কিডনির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।