বাইডেনের অভিশংসন দেখতে মুখিয়ে ট্রাম্প

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২৭ ২০২৩, ১৭:২১

জো বাইডেন ও ডনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

জো বাইডেন ও ডনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

  • 0

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত হতে পারে- হাউয স্পিকারের এমন ঘোষণার পর থেকে এর পক্ষে জোরাল সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিকানরা। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের অভিশংসন দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। তার সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন লাল শিবির থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতাপ্রত্যাশী প্রতিদ্বন্দ্বীরাও।

আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লাল শিবির থেকে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। নিজ দলে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্টিস বাইডেনের অভিশংসনের ইস্যুতে তার সঙ্গে একমত।

ডিস্যান্টিস বলেছেন, বাইডেনের অভিশংসন তদন্ত শুরুর পক্ষে সমর্থন দেয়া রিপাবলিকানরা অধিকার বলেই মনে করেন। এই পার্টির আরেক প্রার্থিতাপ্রত্যাশী নিকি হেইলি বলেছেন, এই তদন্তের পক্ষে সমর্থন দেয়া রিপাবলিকানদের জন্য ন্যায্য।

নিউ ইয়র্কের রিপ্রেজেন্টিটিভ ও ফোর্থ র‍্যাঙ্কিং হাউয রিপাবলিকান নেতা এলিস স্টেফানিক জানান, বাইডেনের অভিশংসন তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখবে না হাউয রিপাবলিকানরা।

ছেলের ব্যবসায়িক লেনদেনের জের ধরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিশংসনের মুখে ঠেলে দেয়ার পক্ষে সমর্থন এখন হাউযের কট্টর ডানপন্থি রিপাবলিকানদের পাশাপাশি মূলধারার রিপাবলিকান পার্টিতেও জোরাল হয়েছে। হাউয স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ফক্স নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাইডেনের বিরুদ্ধে হাউযে অভিশংসন তদন্ত শুরু হতে পারে।

হাউয রিপাবলিকানদের সঙ্গে বুধবার এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি বলেছেন, বাইডেনকে অভিশংসনের পরিকল্পনা এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তিনি জানান, ছেলে হান্টার বাইডেনের লেনদেনের সঙ্গে বাইডেনের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা বা তিনি কোনো কিছু জানতেন কিনা- সে বিষয়ে এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে। অভিশংসনের মুখে তাকে দাঁড় করাতে হলে যথাযথ ও পরিপূর্ণ তথ্য হাতে থাকা প্রয়োজন।

ওকলাহোমার রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টিটিভ টন কোল বলেন, ‘বাইডেনদের বিষয়ে আমাদের হাতে কী কী তথ্য আছে বা কী কী নেই, সেসব পর্যালোচনা করেছেন স্পিকার। আমরা এখনও অনেক কিছু জানি না। এও নিশ্চিত না যে হান্টারের লেনদেনের কোনো ভাগ সরাসরি প্রেসিডেন্ট বাইডেন পেয়েছেন কিনা… এসব নিয়েই তদন্ত হবে।'

জর্জিয়ার রিপ্রেজেন্টিটিভ মার্জোরি টেইলর গ্রিন বলেছেন, ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ম্যাকার্থি তাদেরকে বাইডেনের অভিশংসন তদন্তের পক্ষে সমর্থন দেয়ায় আহ্বান জানিয়েছেন। সবাই তাতে সাড়াও দিয়েছেন।

বাইডেনকে অভিশংসনের মুখে ঠেলে দেয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাহী ক্ষমতার ওপর কংগ্রেসের এই বিরল নিয়ন্ত্রণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে রিপাবলিকানরা।

অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন। প্রথমবার সেটি ঘটে ২০১৯ সালে। সে সময় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যেলেনস্কিকে ফোন করে তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য চাপ দেন। সেটি না করলে অ্যামেরিকার সামরিক সহায়তা হাতছাড়া হবে বলে যেলেনস্কিকে হুমকি দেন। এরপর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তার সমর্থকদের হামলা চালানোর জেরে দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হন তিনি।

দুইবার হাউযে ডেমোক্র্যাটদের হাতে অভিশংসিত হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পুষে রেখেছেন ট্রাম্প। হাউয স্পিকার ম্যাকার্থি অবশ্য বলেছেন, ট্রাম্পের অভিশংসনগুলো মুছে ফেলা যেতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা গত জুনে তুলেছিলেন কংগ্রেসওমেন এলিস স্টেফানিক ও মার্জোরি টেয়লর গ্রিন।

তবে ট্রাম্প এতটুকুতে সন্তুষ্ট নন। তিনি বাইডেনকেও অভিশংসনের মুখোমুখি হতে দেখতে চাইছেন।

বাইডেনকে দুর্নীতিগ্রস্ত উল্লেখ করে ট্রাম্প সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে বলেছেন, "তারা আমাকে একটি ‘যথাযথ’ ফোন কলের জন্য অভিশংসিত করেছে। অথচ এখন বাইডেনের অভিশংসন হচ্ছে না।”

আইওয়ায় গত সপ্তাহে ফক্স নিউজ টাউন হলে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন তারা বাইডেনের অভিশংসন করছেন না? কেন তাকে অভিশংসনের আওতায় আনা হচ্ছে না?’

বিভিন্ন কমিটির হাউয রিপাবলিকানরা এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার ছেলের তদন্ত করছেন। তারা ধারণা করছেন, হান্টার বাইডেনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে সব জানেন বাইডেন। কিছু বিষয়ে হয়ত বাইডেন জড়িতও ছিলেন।

কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা আইআরএসের দুই হুইসেলব্লোয়ারের সাক্ষ্যকে বাইডেনের অভিশংসন তদন্ত শুরুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন। ওই দুজন গত সপ্তাহে জানান, বাইডেন ও হান্টারের বিষয়ে তদন্তে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট উদাসীন ছিল।

রিপাবলিকানরা সম্প্রতি এফবিআইয়ের একটি আনক্লাসিফায়েড নথি প্রকাশ করে দাবি করেন, ইউক্রেইনের বিতর্কিত বেসরকারি এনার্জি ফার্ম বুরিসমার বোর্ড সদস্য থাকাকালে এর সিইওর কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন হান্টার। এফবিআই অবশ্য জানিয়েছে, ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।


আগামী নির্বাচনের দৌঁড়ে লাল শিবিরে ট্রাম্পের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস ক্রিস্টি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। বাইডেনের পরিবারের যে কারও বা সবার সবকিছু তদন্তের এখতিয়ার আছে- এমন একজন স্পেশাল কাউন্সেল এখন আমাদের দরকার।’

বাইডেনের বিরুদ্ধে হাউয রিপাবলিকারদের অভিশংসন তদন্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউয।

প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে এই সপ্তাহে বলেছেন, ‘তারা যা করতে চায় তা করতে পারে, তবে আমরা আমাদের কাজে মনোনিবেশ করে যাব… অ্যামেরিকান পরিবারগুলোর কাছে যেসব বিষয়ের মূল্য আছে, সেগুলোকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে দেখি।’

বাইডেন বারবারই দাবি করে আসছেন যে, ছেলের বৈদেশিক ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কখনও কোনো আলাপ হয় না।

হাউযের সব রিপাবলিকানরাই যে বাইডেনের অভিশংসন তদন্তের পক্ষে, তা নয়। তবে যারা এতে আপত্তি তুলবেন, তারা আবার ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন।

বাইডেনের অভিশংসন তদন্তে আগ্রহ নেই- এমন রিপাবলিকানদের এরইমধ্যে চিহ্নিত করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে আছেন টেক্সাসের জন কর্নিন ও ইউটাহর মিট রমনি।

ট্রাম্প এই সপ্তাহে টেক্সাসের জন কর্নিন এবং ইউটাহর মিট রমনিসহ অন্যান্য রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা অবশ্য অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

সেনেট রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বুধবার বলেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন যে চেম্বার ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ট্রাম্প দুইবার অভিশংসিত হওয়ায় হাউয রিপাবলিকানরা এখন সুযোগ পেয়ে বাইডেনের অভিশংসন তদন্ত দেখতে মুখিয়ে আছেন।

তবে কেনটাকির এই রিপাবলিকান নেতা এই সতর্ক করে বলেছেন, এই উদ্দীপনার ফল ইতিবাচক নাও হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘অভিশংসন সাধারণ নয়, বরং বিরল ঘটনা হওয়া উচিত। আমার মনে হয় বার বার অভিশংসনের ঘটনা দেশের জন্য ভালো কিছু নয়।’

হাউয ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনকে অভিশংসনের প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক চরমপন্থা হিসেবে দেখছেন ও এর বিরোধিতা করা হবে বলে আভাস দিয়েছেন।

নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক রিপ্রেজেন্টিটিভ ড্যান গোল্ডম্যান ২০১৯ সালে হাউযে ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসন তদন্তের চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন।

তিনি বাইডেনের অভিশংসনের আশঙ্কার বিষয়ে বলেন, 'আমি খুব ভালো করেই জানি যে, কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তথ্য ও প্রমাণ খতিয়ে দেখা কতটা জরুরি। অথচ রিপাবলিকানরা ঠিক এর উল্টোটা করছে। তারা এখন যে বিষয়ে কথা বলছে সেটি মূলত রাজনৈতিক প্রতিশোধ। এর মধ্যে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তারা কংগ্রেসের অভিশংসন ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করছে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন