
৩০ পার হলেই বাড়ে ৫ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৬ ২০২৫, ১১:৩৪ হালনাগাদ: অক্টোবর ১৮ ২০২৫, ২০:১০

৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে ক্যান্সারের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছবি: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
- 0
৩০ ও ৪০-এর দশকে ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি একটি উদ্বেগজনক বিষয়।
বর্তমান সময়ে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে ক্যান্সারের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এই প্রবণতার পেছনে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, ও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাবকে দায়ী করছেন। সঠিক সময়ে স্ক্রীনিং ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ক্যান্সারগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সম্ভব, যা চিকিৎসার সফলতা বাড়াতে সহায়ক।
কোন ৫ ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে ৩০ থেকে৪০ বছর বয়সি মানুষদের চলুন নেয়া যাক-
স্তন ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সারের বিকাশ ঘটে স্তন কোষ থেকে, যা সাধারণত প্রথমে নালী বা লোবিউলে দেখা যায়। এই অবস্থাটি মূলত নারীদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে, তবে পুরুষদেরও এই ধরণের ক্যান্সার হতে পারে, যদিও এটি বিরল।
থাইরয়েড ক্যান্সার
ঘাড়ে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থাইরয়েড ক্যান্সারের সূচনা হিসেবে কাজ করে। থাইরয়েড ক্যান্সারের চারটি প্রধান ধরণ হল প্যাপিলারি, ফলিকুলার, মেডুলারি এবং অ্যানাপ্লাস্টিক থাইরয়েড ক্যান্সার।
থাইরয়েড ক্যান্সার ধীর গতিতে বিকশিত হয়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণের মাধ্যমে এটি নিরাময়যোগ্য। এছাড়া তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থেরাপি মাধ্যমেও এই ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হয়।
মেলানোমা
এটি ত্বকে অবস্থিত মেলানোসাইট কোষ থেকে শুরু হয়, যেগুলো রঙ বা পিগমেন্ট তৈরি করে। যখন এই কোষগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন এর ফলে মেলানোমা নামক এক ধরণের বিপজ্জনক ত্বকের ক্যান্সার হয়। এই অবস্থা সাধারণত তিল এবং নতুন গাঢ় দাগ দিয়ে শুরু হয়। ত্বকের ক্যান্সারের সতর্কতা লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে আঁচিলের আকার পরিবর্তন, রঙের পরিবর্তন, আকৃতি পরিবর্তন বা নতুন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির উত্থান। আগেভাগে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচারে সহজে ক্যানসার কোষ সরানো যায়। অগ্রসর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি বা কেমোথেরাপি প্রয়োজন হয়।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার
কোলন ক্যান্সার কোলন বা মলদ্বারে শুরু হয় যা পলিপের মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে রূপান্তরিত হয়। যেসব রোগীর অন্ত্রের অভ্যাসের পরিবর্তন, মলে রক্ত, পেটে ব্যথা এবং অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাসের অভিজ্ঞতা হয় তাদের কোলন ক্যান্সার হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই অবস্থা শনাক্ত করার জন্য কোলনস্কোপির মাধ্যমে স্ক্রিনিং অপরিহার্য পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও টার্গেটেড থেরাপি।
লিম্ফোমাস
লিম্ফাটিক সিস্টেমে উৎপত্তি হওয়া ক্যান্সার যা ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সাধারণ। এটি দুই ধরনের হতে পারে—হজকিন ও নন-হজকিন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ লিম্ফোসাইটকে আক্রান্ত করে। উপসর্গগুলো হলো—গলা বা কুঁচকিতে গাঁঠ, জ্বর, রাতে ঘেমে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া। চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারের ধরন ও স্টেজের ওপর—ব্যবহৃত হয় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, টার্গেটেড থেরাপি ও স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট।
৩০ ও ৪০-এর দশকে ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি একটি উদ্বেগজনক বিষয়। তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সারগুলোর প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সম্ভব, যা চিকিৎসার সফলতা বাড়াতে সহায়ক। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
এক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। দৈনিক ব্যায়াম ও শারীরিক সক্রিয়তাও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় তাই এগুলো পরিহার করা উচিত। ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার ও অতিরিক্ত সূর্যের রশ্মি থেকে দূরে থাকা ত্বক ক্যান্সর প্রতিরোধে সহায়ক।
প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ক্যান্সারের প্রাথমিক শনাক্তকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।