
দেহে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস, বুঝবেন এই ৭ লক্ষণে

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪ ২০২৫, ৭:২৭ হালনাগাদ: নভেম্বর ৩ ২০২৫, ১৯:০৫

ডায়াবেটিস রাতারাতি দেহে বাসা বাঁধে না। ছবি: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
- 0
কারো শরীরে ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রা থাকলে বিশেষ করে পেটের চারপাশে চর্বি জমতে পারে।
আমাদের দেহ ডায়াবেটিস রাতারাতি বাসা বাঁধে না। রোগ নির্ণয়ের অনেক আগে থেকেই, এটি নীরবে সংকেত পাঠায়। ছোট ছোট এসব পরিবর্তন যা প্রায়শই অবহেলা করা হয়। অথবা ক্লান্তি, বার্ধক্য বা চাপ বলে ভুল করা হয়।
যদি সঠিক সময়ে এই সূক্ষ্ম সংকেতগুলো পর্যবেক্ষণ করা যায় তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে এই লক্ষণগুলো ডায়াবেটিস শনাক্তে সাহায্য করতে পারে।
চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিসের ৭টি আগাম ইঙ্গিত-
স্পষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন পরিবর্তন
হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের সতর্ক সংকেত হতে পারে। কারো শরীরে ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রা থাকলে বিশেষ করে পেটের চারপাশে চর্বি জমতে পারে। অন্যদিকে, শরীর যদি সঠিকভাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারে, তখন শক্তির জন্য পেশি ভাঙতে শুরু করে। যেকোনো অপ্রত্যাশিত ওজন পরিবর্তন প্রায়ই বিপাকীয় ভারসাম্যের সমস্যা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
ঘাড় বা বগলের চারপাশে ত্বক কালো হয়ে যাওয়া
ঘাড়, বগল বা কুঁচকির আশেপাশে হালকা মসৃণ, বা গাড় কালো দাগ শুধুই সৌন্দর্যের সমস্যা নয়। এটি অ্যাক্যানথোসিস নিগ্রিকানস নামে পরিচিত এবং প্রায়ই ইঙ্গিত দেয় যে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেশি। এই ত্বকের পরিবর্তন শরীরের একটি নীরব সংকেত, যা বোঝাতে চায় যে শরীর ঠিকভাবে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
অবিরাম তৃষ্ণা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব
যখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তখন কিডনি অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় নেয়। এর ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সঙ্গে অনেক তৃষ্ণা পায়। অনেকেই এটিকে শুধু পানিশূন্যতা বা গরমের কারণে হয়ে থাকে বলে মনে করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি শরীরের সতর্কবার্তা যে রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে।
ফোলা বা ফুলে থাকা পা যা কমে না
গোড়ালি বা পায়ের চারপাশের দীর্ঘস্থায়ী ফোলা প্রাথমিক সতর্কবার্তা হতে পারে। যখন রক্তে চিনি ওঠানামা করে, তখন এটি রক্ত সঞ্চালন এবং কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, ফলে দেহে তরল জমতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ গ্লুকোজ রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে ফোলা বাড়ে। লক্ষ্য করার বিষয়, এটি প্রায়শই সন্ধ্যায় বা দীর্ঘ সময় বসার পরে আরও বাড়তে থাকে।
মোটা ঘাড় যা ভারী মনে হয়
হঠাৎ ঘাড় মোটা বা চর্বি জমা হওয়া শুধুমাত্র ওজন বৃদ্ধির বিষয় নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাড়ের পুরুত্ব ইনসুলিন প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত হতে পারে। যখন ঘাড়ে চর্বি জমতে শুরু করে, তা শরীরের সতর্কবার্তা যে ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ চর্বি হিসেবে জমছে। ঘাড় এবং কাঁধের এই চর্বি মূলত মেটাবলিক সিন্ড্রোম ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
পিঠের উপরের দিকে ছোট কুঁজ তৈরি
পিঠের উপরের দিকে হালকা ঢেউ বা “বাফেলো হাম্প” দেখা দিতে পারে, যা মূলত হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে চর্বি জমার ফলে হয়। বিশেষ করে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এমনটি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস বা ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত। সাধারণত এটি কুশিং সিনড্রোমের সঙ্গে যুক্ত হলেও, প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। শরীর এই চিহ্ন দিয়ে জানাচ্ছে যে হরমোন এবং বিপাকের কার্যকারিতা সঠিকভাবে মিলছে না।
হাত-পায়ে ঝিনঝিন বা অনুভূতি কমে যাওয়া
হাত বা পায়ে হালকা ঝিনঝিন, সূঁচের মতো অনুভূতি, অথবা মাঝে মাঝে অসাড়তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। এগুলো রক্তের চিনি ওঠানামার কারণে স্নায়ুতে চাপ পড়ার প্রাথমিক চিহ্ন। এ ধরনের লক্ষণ উপেক্ষা করলে তা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে পরিণত হতে পারে।
জীবনধারার পরিবর্তন দিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ শুরু হয় ছোট, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস থেকে। সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম—সবই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ও পানীয় এড়ানো রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনগুলো জীবনধারায় অন্তর্ভুক্ত করলে তা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করে।