সিফিলিস এবং স্ট্রেপ থ্রোটের মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক।
এফডিএ জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকেই বাজারে পেনিসিলিনের সরবরাহ কমেছে। এর আগে স্ট্রেপ থ্রোটের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরেকটি অ্যান্টিবায়োটিক ইউএস লিকুইড অ্যামোক্সিসিলিনের সরবরাহের ঘাটতির কথা জানিয়েছিল এফডিএ। এবার এ তালিকায় যুক্ত হলো পেনিসিলিন।
সিফিলিসের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের পছন্দের ওষুধ পেনিসিলিন। পেনিসিলিন জি বেনজাথিন নামে পরিচিত এই ইনজেকশন প্রাপ্তবয়স্কের পাশাপাশি শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্যও ব্যবহার করা হয়। এফডিএ বলছে, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য ডোজ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
মিনেসোটা, নর্থ এবং সাউথ ডাকোটাকেন্দ্রিক মেডিক্যাল সিস্টেম স্যানফোর্ড হেলথের চিফ ফিজিশিয়ান ডক্টর যেরেমি কাউয়েলস বলেন, ’পেনিসিলিন জি বেনজাথিনের চমৎকার বিষয় হলো, আপনি এটি একজন গর্ভবতী মাকে দিতে পারেন এবং তার সিফিলিস থাকলে এটি গর্ভের শিশুরও চিকিৎসা দেবে।‘
তিনি জানান, তার নেটওয়ার্কের ফার্মাসিস্টরা গত শীত থেকেই পেনিসিলিনের সীমিত সরবরাহ পাচ্ছেন।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) গত বছরের ডেটা অনুসারে, ২০২১ সালে অ্যামেরিকায় সিফিলিস কেস ৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। যৌন রোগের সংক্রমণের ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, এমনকি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও হতে পারে।
এফডিএর বরাতে এনবিসি নিউজ বলছে, বাজারে পেনিসিলিনের ঘাটতির কারণে বর্ধিত চাহিদা তৈরি হয়েছে।
তবে অ্যামেরিকায় পেনিসিলিনের একমাত্র সরবরাহকারী ফাইজার ফারমাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি পেনিসিনলিন প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটার জন্য অ্যামোক্সিসিলিনের ঘাটতিকে দায়ী করছে। কারণ চিকিৎসকেরা অ্যামোক্সিসিলিনের পরিবর্তে পেনিসিলিন সুপারিশ করছেন। কোম্পানিটির ধারণা, সিফিলিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পেনিসিলিনের চাহিদাকে আরও তীব্র করেছে।
ফাইজারের দাবি আগের তুলনায় অনেক বেশি পেনিসিলিন ইনজেকশন বাজারজাত করেও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
অ্যামেরিকায় শরৎ ও শীতকালে শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। কোভিড নাইন্টেনের মতো ভাইরাস, শ্বাসযন্ত্রের সিনসাইটিয়াল ভাইরাস কিংবা সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে অ্যামোক্সিসিলিন ব্যবহৃত হয়।
করোনা মহামারির সময়েই অ্যামোক্সিসিলিনের ঘাটতি শুরু হয়।
অ্যামেরিকায় স্ট্রেপ থ্রোটে আক্রান্তের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সিডিসি এক আনফিশিয়াল জরিপের ভিত্তিতে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্ট্রেপ থ্রোটের রোগী রেজিস্টার করেছে।
গুরুতর স্ট্রেপ থ্রোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের চিকিৎসার জন্যও অ্যামোক্সিসিলিনের পরিবর্তে পেনিসিলিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স গত নভেম্বরে স্ট্রেপ থ্রোট রোগীদের জন্য অ্যামোক্সিসিলিনের বিকল্প হিসাবে পেনিসিলিন জি বেনজাথিন সুপারিশ করে।
এফডিএর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ওষুধের ঘাটতি সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ হেলথ-সিস্টেম ফার্মাসিস্টরা পেনিসিলিনের-পেনিসিলিন জি প্রোকেনের চরম ঘাটতির কথাও জানিয়েছেন।
সিনেট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির ডেমোক্র্যাটদের মার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নতুন ওষুধের ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩০ ভাগ।
অ্যামেরিকায় গত সাত মাস ধরে অ্যাটেনশন ডিফিসিট বা হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডারের ওষুধ অ্যাডেরালের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, এফডিএ বলছে, দুটি সাধারণ কেমোথেরাপিসহ চারটি ক্যানসারের ওষুধেরও অভাব রয়েছে।