মাছ-মাংসে বাড়তে পারে আয়ু
টিবিএন ডেস্ক
জুন ৮ ২০২৩, ২৩:৪৮
- 0
নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে মাছ-মাংস খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে পারে মানুষের আয়ু। মাছ ও মাংসে থাকা উপাদান টরিনের কারণে আসতে পারে এ অগ্রগতি।
বয়সের সঙ্গে প্রাণীদেহে টরিনের পরিমাণ কমতে থাকে। পরীক্ষাগারে প্রাণীদেহে টরিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেখা গেছে তাদের আয়ু ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে তাদের শারীরিক ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
গবেষক দল এও বলছেন, যেহেতু এটি এখনও মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়নি তাই এখনই টরিনের সাপ্লিমেন্ট যুক্ত খাবার বা এনার্জি ড্রিংক অধিক পরিমাণে খাওয়ার দরকার নেই।
বয়স্ক ও তরুণদের পার্থক্য বোঝার জন্য বিভিন্ন প্রানীর রক্তের কণিকা নিয়ে পরীক্ষা করেছে দলটি। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য বিজয় ইয়াদভ বিবিসিকে বলেন, ‘যে উপাদানগুলো নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায় তার একটি হচ্ছে টরিন। তরুণদের চেয়ে বৃদ্ধ প্রাণীর রক্তে এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ কম।’
টরিন শাকসবজিতে পাওয়া যায় না। এর উৎস হচ্ছে মাছ-মাংস। অথবা প্রাণীদেহ নিজেই এটি উৎপন্ন করে। গত ১১ বছর ধরে গবেষক দলটি বয়সের সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজে এর করার চেষ্টা করছে।
উন্নত স্মৃতিশক্তি
১৪ মাস বয়সী (মানবদেহের ৪৫ বছরের সমান) বেশ কিছু ইঁদুরের দেহে প্রতিদিন টরিন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্সে’ প্রকাশিত গবেষণায় পত্রে বলা হয়েছে এ পরীক্ষায় পুরুষ ইঁদুরের আয়ু বেড়েছে ১০ শতাংশ। স্ত্রী ইঁদুরের আয়ু বেড়েছে ১২শতাংশ।
ডাক্তার ইয়াদভ বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় টরিন সাপ্লিমেন্ট দেয়া ইঁদুরগুলোকে স্বাস্থ্যকর ও তরুণ মনে হচ্ছিল। এরা মেদহীন ছিল। এনার্জি খরচ এদের দেহে বেশি হয়েছে। ইঁদুরগুলোর হাড়ের ঘনত্ব ও স্মৃতিশক্তি বেশি থাকার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও অপেক্ষাকৃত তরুণদের মতো শক্তিশালী ছিল।’
একই পরীক্ষা ১৫ বছর বয়সী রেসার বানরের সঙ্গে করা হয় ও ৬ মাসের ডোজ দেয়া হয়। ডোজের সময় কম থাকার ফলে আয়ু বাড়ছে না কমছে সেটা পরীক্ষা করা না গেলেও বানরটির হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়া, ব্লাড সুগারের পরিমাণ ও ওজন সঠিক হওয়ার মতো লক্ষণ দেখেন গবেষকেরা। একই সঙ্গে এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আগের চেয়ে উন্নত হয়।
গবেষনার সঙ্গে জড়িত দ্য টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখের অধ্যাপক হেনিং ভাকারহেইজ বলেন, ‘প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছিল এ ফল। টরিন বয়স বাড়ার মূল ইঞ্জিনে কাজ করছিল।’
গবেষনায় ১২ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা নিয়ে দেখা গেছে যাদের রক্তে টরিনের পরিমান বেশি তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
ইঁদুর থেকে পাওয়া ডেটা যদি মানুষের ক্ষেত্রে হিসেব করা হয় তাহলে দেখা যায় ৭ থেকে ৮ বছর বাড়তি আয়ু পাবে মানুষ। তবে এর জন্য সঠিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দরকার।
শক্তির কেন্দ্র
গবেষক দলটির দাবি কোষের বয়স বাড়ার ক্ষমতা হ্রাস করে টরিন। কোষের চালিকাশক্তি মাইটোকন্ড্রিয়াকে এটি কর্মক্ষম রাখে। কিন্তু কিভাবে এটি কাজ করে তা এখনও অজানা।
যে কারণে এখনই মানুষের জন্য টরিনের বহুল ব্যবহারের উপযোগীতা দেখছেন না দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভিনিয়ার দুই বিজ্ঞানী জোসেফ ম্যাকগাউন ও জোসেফ বাউর।
বিবিসিকে তারা বলেন, ‘বেশি মাত্রায় টরিন গ্রহণ মানুষকে বাজে খাদ্যাভ্যাসের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। শাকসবজি গ্রহণের সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকা ও আয়ু বৃদ্ধির যোগসূত্র রয়েছে। সেটাতে ব্যাঘাত করে টরিনের সাপ্লিমেন্ট দিয়ে মানুষের আয়ু বাড়ানোর বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’