অসহ্য মাইগ্রেনে কী করবেন?

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২৫ ২০২৩, ১৯:৩৪

কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে তীব্র মাইগ্রেন কমানো যায়। ছবি: সংগৃহীত

কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে তীব্র মাইগ্রেন কমানো যায়। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

কমবেশি সবারই মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দীর্ঘ কাজের চাপে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। এতে মাথাব্যথা হতে পারে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ঠিকও হয়ে যায়।

তবে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মাইগ্রেন বিশেষ এক ধরনের মাথাব্যথা যা মাথার একপাশ থেকে শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে পুরো মাথায়। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। ফলে শুরু হয় তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা। সেই সঙ্গে শুরু হয় বমি বমি ভাব। কেউ কেউ মাইগ্রেনের ব্যথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মাইগ্রেন শুরু হয়ে থাকে। প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে এক জন এবং প্রতি ১৫ জন পুরুষের মধ্যে এক জনের মাইগ্রেন থাকে।

মাথাব্যথা হলে শুধু মাথায় ব্যাথা হয়, কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যায়। তবে মাইগ্রেন হয় দীর্ঘস্থায়ী। মাঝে মাঝে এর স্থায়িত্ব এক সপ্তাহেরও বেশি হতে পারে।

কীভাবে কমাবেন তীব্র মাইগ্রেন?

মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যবহার স্বাভাবিক। তবে ওষুধ ছাড়াও মাইগ্রেনের চিকিৎসায় আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন।

মাইগ্রেন শুরু হলে বিরতি নিন। যথাসম্ভব কাজকর্ম বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকুন।

মাইগ্রেন শুরু হলে যা করতে পারেন:

১. রুমের লাইট বন্ধ করুন: অতিরিক্ত আলো ও শব্দে মাইগ্রেনের ব্যথা তীব্র হয়। তাই যথাসম্ভব অন্ধকার ও শান্ত পরিবেশে থাকুন।

২. তাপমাত্রা থেরাপি নিন: মাইগ্রেনে মাথা ব্যথার সঙ্গে ঘাড় ও চোখে ব্যথা হয়। ব্যথা শুরু হলে ঘাড় ও মাথায় ঠান্ডা কিংবা গরম থেরাপি নিন। আইস প্যাক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হট প্যাক বা হিটিং প্যাডও আপনাকে আরামদায়ক অনুভূতি দিতে পারে।

৩. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খান: ক্যাফেইন মাইগ্রেনের প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে চা বা কফি খাওয়া উচিত অল্প পরিমাণে। কেননা ক্যাফেইন অনেক সময় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, যা পরে মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর চেয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিছু অভ্যাসের দিকে নজর দিন:

১. ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা: স্লিপিং সাইকেলে পরিবর্তন আনতে না পারলে মাইগ্রেন কমানো সম্ভব নয়। তাই ঘুমের জন্য সময় নির্ধারণ করা উচিত। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন।

২. দিন শেষে একটু আরাম করুন: সারাদিন ব্যস্ততার শেষে এমন কাজ করুন যেগুলো আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। যেমন- পছন্দের একটি বই পড়তে পারেন কিংবা গান শুনতে পারেন। অথবা হালকা গরম পানিতে গোসল সেরে নিতে পারেন। এতে আরামদায়ক অনুভুতি পাবেন।

তবে ঘুমের আগে ক্যাফেইন, ভারী খাবার, নিকোটিন ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৩. মনযোগ নষ্ট করা কাজ থেকে বিরত থাকুন: ঘুমের আগে মনযোগ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। ঘুমানোর আগে টিভি দেখবেন না। বিছানায় কাজ নিয়ে বসবেন না। রুমের দরজা বন্ধ রাখুন যাতে বাইরে থেকে কোনো আওয়াজ না আসে। আওয়াজ ঠেকাতে প্রয়োজনে ফ্যান ব্যবহার করুন।

৪. ঘুমানোর জন্য বেশি চেষ্টা করবেন না: ঘুম না এলে আমরা জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করে থাকি। এ কাজ করবেন না। যত বেশি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন দেখা যাবে তত বেশি ঘুমাতে দেরি হবে।

খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনুন:

অনেক সময় অনিয়মিত খাওয়া দাওয়ার জন্য মাইগ্রেন বাড়তে পারে। তাই মাইগ্রেন কমাতে-

১. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন

২. কোনো বেলার খাবার এড়িয়ে যাবেন না। প্রতিবেলা অল্প করে হলেও খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৩. মাইগ্রেন বেড়ে যায় এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেক খাবার খেলে মাইগ্রেন বেড়ে যায়। খাবারের সময় খেয়াল রাখবেন কোনো খাবার আপনার মাইগ্রেন বাড়িয়ে দেয় কি না। পরবর্তীতে এসব খাবার খাওয়া বন্ধ রাখুন।

নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস করুন:

অনেক সময় আপনার শরীরিক ক্রিয়াকলাপ এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে যা আপনার মস্তিষ্ককে ব্যথার সংকেতে বাধা দেয়। এই কেমিক্যালগুলো আবার উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে। ফলে এই দুইয়ের মিশ্রণ মাইগ্রেনকে আরও খারাপ করতে পারে।

এছাড়া স্থূলতা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও ডায়েটের মাধ্যমে মাইগ্রেন কমানো যায়। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে হালকা ব্যায়াম হয়। অতিরিক্ত ব্যায়ামে আবার মাইগ্রেন বাড়ে।

মানসিক চাপ কমান:

মানসিক চাপ ও মাইগ্রেন একসঙ্গে হয়ে থাকে। তাই মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

আমরা অনেক সময়ে মানসিক চাপ এড়াতে পারি না। তবে মাইগ্রেনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে বিরতি নিন। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিজেকে উপভোগ করুন। অন্তত ১৫ মিনিট নিজের জন্য রাখুন। সেই সময়টা আপনি নিজের পছন্দের কিছু করুন। এতে মানসিক প্রশান্তি পাবেন।

কিছুটা সময় আরাম করুন। কাজের চাপ কম নেয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য ধীরে ও গভীর শ্বাস নিন। এই অভ্যাস আপনার পেশীকে শিথীল করে মানসিক প্রশান্তি দেবে।

এছাড়া, বেশি রোদে ঘোরাঘুরি করবেন না এবং অতিরিক্ত কোলাহল এড়িয়ে চলুন। এসব আপনার মাইগ্রেন বাড়িয়ে তোলে।

সর্বোপরি জীবনে সবকিছুর ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করুন। মাইগ্রেন এমন একটি অবস্থা যা চাইলেও আপনি পুরোপুরি দূর করতে পারবেন না। তবে ছোট ছোট কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন