স্লিপ অ্যাপনিয়ার যত বিপত্তি

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৭ ২০২৩, ২২:৪৩

নাক ডাকা রোগে ভুগছেন প্রতি পাঁচ প্রাপ্ত বয়স্কের একজন। ছবি: সংগৃহীত

নাক ডাকা রোগে ভুগছেন প্রতি পাঁচ প্রাপ্ত বয়স্কের একজন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ইউরোপিয়ান রেসপাইরেটরি সোসাইটি পরিচালিত ইআরজে ওপেন রিসার্চের একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, প্রতি পাঁচজনের একজন অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াতে (ওএসএ) ভুগছেন।

ওএসএ আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই বিকট শব্দে নাক ডাকার পাশাপাশি সারারাত শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা ও বারবার ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতো লক্ষণগুলো অনুভব করে থাকেন।

এছাড়া, দেহে ক্লান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি ওএসএ উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো আরও বাড়িয়ে দেয়।

তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই ওএসএ আক্রান্ত ব্যক্তিরা আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারেন।

ইআরজে-এর গবেষণা জরিপে ২০ হাজার ১৫১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ফ্রেঞ্চের ভারী নাক ডাকা, অত্যধিক ঘুম, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার তথ্য নেয়া হয়েছে। গবেষণায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের ওএসএ সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে কতজন ওএসএ আক্রান্ত তা নির্ণয় করা হয়েছে।

এই স্বল্পসংখ্যক অংশগ্রহণকারীর তথ্য থেকে গবেষকরা সামগ্রিক ফ্রেঞ্চ জনসংখ্যার ভেতর ওএসএ আক্রান্ত মানুষের অনুপাত হিসাব করেছেন।

গবেষণার ফলে অনুমান করা হয়, প্রায় ২০.২ শতাংশ ফ্রেঞ্চ নাগরিকের ওএসএ-এর লক্ষণ রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩.৫ শতাংশ ব্যক্তি এর চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশি বয়সী ব্যক্তি, কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা বা শারীরিকভাবে কম সক্রিয়, ধূমপায়ী ও বিষণ্ণতার লক্ষণযুক্ত মানুষের মধ্যে ওএসএ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া নারীদের তুলনায় পুরুষরা ওএসএতে বেশি আক্রান্ত হয়।

ফ্রান্সের প্যারিস-সিটি ইউনিভার্সিটির মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডক্টর পলিন ব্যালাগনি গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ওএসএ একটি আমাদের জনগণের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সতর্ক করা সম্ভব হলে সাধারণ অবস্থায়ই রোগটি নির্ণয় করা যাবে। সেই সঙ্গে ওএসএর ঝুঁকি কমাতে সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া যাবে।’

ব্যালাগনি বলেন, ‘আমাদের জরিপে বলা হয়েছে, ওএসএ খুবই সাধারণ একটি রোগ। তবে এতে আক্রান্ত বেশিরভাগই জানেন না তারা রোগটিতে আক্রান্ত।

‘আমরা অন্য দেশগুলোর ওএসএ গবেষণার সঙ্গে আমাদের তথ্যের তুলনা করে দেখতে পেয়েছি এটি যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওএসএ খুবই সাধারণ একটি রোগ।’

ব্যালাগনি দাবি করেন, তাদের চালানো জরিপের মূল শক্তি বিশাল ফ্রেঞ্চ জনগোষ্ঠী। একইসঙ্গে জরিপের দুর্বলতা হচ্ছে এটি শুধু একটি স্লিপ ক্লিনিকের রোগীদের দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করছে।

ইউরোপিয়ান রেসপাইরেটরি সোসাইটির অ্যাসেম্বলির হেড অফ স্লিপ-অর্ডারড ব্রিদিং প্রফেসর উইনফ্রিড র‍্যান্ডেরাথ বলেন, ‘এই গবেষণাটি থেকে পরিলক্ষিত হয়, ওএসএ লক্ষণসহ অনেক মানুষই জানেন না যে তাদের নাক ডাকা ও ঘুম ঘুম ভাব আসলে একটি শারীরিক সমস্যার লক্ষণ।

‘আমাদের ওএসএ সম্পর্কে সবাইকে আরও সচেতন করতে হবে। ওএসএ শনাক্ত করা গেলে তাদের দেহে হৃদরোগ, উচ্চরক্ত চাপ ও ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর রোগগুলোর ঝুঁকি আরও কমাতে সাহায্য করবে।’

তিনি বলেন, ‘যদিও পুরুষের ভেতর ওএসএ বেশি দেখা যায়, এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয় আমাদের নারীদেহে ওএসএ শনাক্ত করার জন্য আরও যত্নশীল হওয়া উচিত।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন