জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) নতুন বিশ্লেষণে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সন্তান প্রসবের কষ্টের অভিজ্ঞতার পেছনে ‘তাদের জীবনযাত্রা বা জেনেটিক্স দায়ী’ এমন ধারণাকে নাকচ করা হয়েছে।
সরকারি তথ্য এবং প্রকাশিত গবেষণার উপর ভিত্তি করে সংস্থাটি দেখেছে, অ্যামেরিকায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ এবং মিশ্র বর্ণের নারীরা চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষা, নীতি নির্ধারণ এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্ণবাদী ধারণার কারণে সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
মেডিক্যাল পাঠ্যবইয়ে ইউরোপীয় নারীদের শ্রোণির আকারের উপর ভিত্তি করে প্রসব ব্যবস্থা শেখানো হয়। অন্য জাতিগোষ্ঠীর নারীদের মধ্যেও এটি বহাল থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণে তাদের প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেক চিকিৎসক ভুল শিখেছেন যে, কৃষ্ণাঙ্গরা ঘন ত্বকের কারণে কম ব্যথা অনুভব করে এবং তাদের রক্ত দ্রুত জমাট বাঁধার কারণে প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কম।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা পরিবহন, চিকিৎসা বীমা ইত্যাদির সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা ও সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবার অভাব নিয়ে কাঠামোগত বাধার মুখোমুখি হন।
নর্থ ও সাউথ অ্যামেরিকার ৩৫টি দেশের মধ্যে মাত্র নয়টি দেশে নারীদের গর্ভাবস্থার সফলতার রেকর্ড রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, পানামা, সুরিনাম, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, অ্যামেরিকা এবং উরুগুয়ে।
প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর হারের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈষম্য দেখা যায় অ্যামেরিকায়। অ্যামেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের শ্বেতাঙ্গ এবং নন-হিস্পানিক নারীদের তুলনায় সন্তান প্রসবের ছয় সপ্তাহের মধ্যে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।
তবে গবেষকরা বলছেন, অ্যামেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা অন্যান্য দেশের শ্বেতাঙ্গ নারীদের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছেন।
গবেষণায় দেখা যায় উচ্চ আয় এবং শিক্ষা কোনো আলাদা ফল বয়ে আনেনি। গবেষকরা দেখেছেন, অ্যামেরিকার আফ্রিকান-অ্যামেরিকান কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে মাতৃমৃত্যু শ্বেতাঙ্গ কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের তুলনায় ৫.২ গুণ বেশি এবং হাই স্কুল ডিপ্লোমা শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় ১.৬ গুণ বেশি।
ইউএনএফপিএ'র ইনিশিয়েটিভ ফর পিপল অব আফ্রিকান ডিসসেন্টের প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার প্যাট্রিসিয়া দা সিলভা বলেন, মাতৃস্বাস্থ্য নীতিতে খুব কম জাতিগত পার্থক্য থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ’ এমনভাবে করতে হবে যাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা যায়। সরকারগুলো এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে বর্ণের উপরে নির্ভর করে মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যার গুণগত মানের ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।