মশার জিন পরিবর্তনে নির্মূল হবে ম্যালেরিয়া

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১২ ২০২৩, ২:৪৯

পরিবর্তিত জিনের অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া মশা। ছবি: সংগৃহীত

পরিবর্তিত জিনের অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া মশা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

মশার জিন সম্পাদনার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার গবেষণায় ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বে প্রতিবছর বহু লোকের মৃত্যু ও অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ম্যালেরিয়া। সাব-সাহারান আফ্রিকার শিশুরা এ রোগে ক্ষতির শিকার সবচেয়ে বেশি। ম্যালেরিয়ার দুই ধরণের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হলেও তারা রোগের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করতে পারে না।

বন্য অঞ্চলে যদি জেনেটিক পরিবর্তনসহ মশা ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে ‘জিন ড্রাইভ’ নামে পরিচিত এক পদ্ধতির মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ মশাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যার অর্থ সমস্ত জিন সম্পাদিত মশার বংশধর ম্যালেরিয়া বহন করতে পারবে না। এই পদ্ধতি মানুষের মধ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, আরভাইনের গবেষক অ্যান্টনি জেমস বলেন, ‘মশা-বাহিত রোগের বিরুদ্ধে অন্য কৌশলগুলি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে হচ্ছে জিন ড্রাইভ যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সমস্ত মশাকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু তা বাস্তুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

জেমসের দলের গবেষণায় মশাদের মেরে ফেলা হয় না। কিন্তু জিন সম্পাদনা তাদের মধ্যে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবী প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম নামক এককোষী জীবকে মেরে ফেলে ।

মশার ডিএনএ-তে সম্পাদিত জিন অন্তর্ভুক্ত করা হয় দুটি অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য। মশার জীবন চক্রের বিভিন্ন ধাপে অ্যান্টিবডিগুলো পরজীবীকে লক্ষ্য করবে বলে জানান জেমস।

জেমস বলেন, এর মাধ্যমে পরজীবীটির ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে এটি নির্ধারিত ক্রম মেনে চলে। যাতে করে এটি বাকি মশাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যে কোনও সম্পাদিত জিনের মশার চোখ লাল থাকবে। যা জিন কৌশলটির সাফল্য নির্ধারণে সহায়ক হবে।

এখানে ডিএনএ কাস-নাইন নামক একটি এনজাইমকে এনকোড করে। এ এনজাইম শুধুমাত্র চোখের পিগমেন্ট জিনকে লক্ষ্য করে যাকে ‘গাইড’ ডিএনএ সিকোয়েন্স বলা হয়।

একটি পরিবর্তিত মশা ও একটি সাধারণ মশার বংশধরের প্রাথমিক দিকে একটি লাল চোখের জিন ও একটি সাধারণ জিন থাকবে। পরবর্তীতে কাস-নাইন এনজাইম স্বাভাবিক জিনকে ভেঙ্গে ডিএনএ পরিবর্তিত জিনের মত করে সাজায়। ফলে মশার দুটি জিনই পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

ল্যাবে পরীক্ষা করার সময় এ পদ্ধতিটি অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া নামের মশার প্রজাতির ক্ষেত্রে অকার্যকর ছিল। এটির প্রভাবে ওই প্রজাতির পুরুষদের যৌন প্রজননে সফলতা কমে যায়। অন্যদিকে অ্যানোফিলিস কোলুজি নামে অন্য প্রজাতির মধ্যে এই নেতিবাচক আচরণ দেখা যায়নি।

অ্যানোফিলিস কোলুজি প্রজাতির মাঝে জিনটি মশাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পরে। ফল হিসেবে দেখা যায় তারা সাধারণ মশা থেকে অনেক কম পরিমাণ পরজীবী বহন করে। এ হিসাবে গবেষকরা জানান কোন দ্বীপে পরিবর্তিত জিনের মশা ছেড়ে দিলে তিন মাসের মধ্যে মানুষের মাঝে আক্রান্তের হার ৯০ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।

গবেষকরা এখন আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের সাও টোমে দ্বীপে পদ্ধতিটি পরীক্ষা করার কথা ভাবছেন। সাও টোমেতে অ্যানোফিলিস কোলুজি মশা ম্যালেরিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয়।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন