ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ দেশের সব স্কুল-কলেজ ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার দেশটিতে চরম আবহাওয়ার কারণে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এশিয়া জুড়ে ক্রমাগত তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হওয়ায় ফিলিপিনস ও ভারতে সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশেও এধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনস বাংলাদেশ এর ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশের শিশু হিসেবে বাংলাদেশের শিশুরা অন্যতম এবং তাপজনিত কারণে স্কুল বন্ধের ঘোষণা আমাদের সকলের জন্য বিপদের আগাম সংকেত দিচ্ছে।’

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার এপ্রিল মাসে চতুর্থবার হিট এলার্ট জারি করেছে।

জলবায়ু সংকটের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেলের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে ফলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ।

বুধবার দেশের কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান বৃষ্টির জন্য ‘ইসতিসকার’এর নামাজ আদায় করতে মসজিদ ও গ্রামীণ মাঠে জড়ো হয়। মুসল্লিদের ভাষ্যমতে, বৃষ্টি না হওয়ায় তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবনের অসহনীয় কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর দরবারে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত যা আরবিতে বলা হয় ‘ইসতিসকার’ বা পানি প্রার্থনা করা।

বাংলাদেশের ইসলামিক স্কলার মুহাম্মদ আবু ইউসুফ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘বৃষ্টির অভাবে জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে এবং দরিদ্র মানুষরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

জনাব ইউসুফ বুধবার রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় অংশে এক হাজার জন মানুষের অংশগ্রহণে সকালে বৃষ্টির জন্য নামাজের ইমামতি করেন।

জ্বর ও মাথাব্যথার মতো তাপজনিত অসুস্থতায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে রোগীর চাপ বাড়ার আশঙ্কায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হবে বলে এই সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৪৩ মিলিয়নেরও বেশি শিশু তাপজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ।

এশিয়ার দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরম আবহাওয়া জনিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

থাইল্যান্ডের হেলথ মিনিস্ট্রি বুধবার জানিয়েছে, দেশটিতে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ৩০ জন হিটস্ট্রোকে মারা গেছে যেখানে ২০২৩ সালে মারা যায় ৩৭ জন।

বুধবার মিয়ানমারের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছে।

এই মাসের শুরুর দিকে ফিলিপিনসের প্রায় ৪৭ হাজার স্কুল অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্লাস স্থগিত করে। বিদ্যুতের ওভারলোড ও অবিরাম ব্যবহার থেকে বৈদ্যুতিক পাখার অতিরিক্ত গরমের কারণে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ফিলিপাইন জুড়ে আগুনের ঘটনা ২৪ শতাংশ বেড়েছে বলে ফায়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিকাল অর্গানাইজেশন এই সপ্তাহে একটি নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, এশিয়ায় খরা ও তাপপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট বন্যা ও ঝড় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অঞ্চলের অনেক দেশ ২০২৩ সালে রেকর্ড উষ্ণতম বছর অনুভব করেছে।