নতুন গবেষণা আয়ু বাড়াবে ক্যানসার রোগীদের
টিবিএন ডেস্ক
জুন ৬ ২০২৩, ২০:৪১
- 0
শিকাগোতে অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ ক্লিনিক্যাল অনকোলজি (এএসসিও) এর সভায় চিকিৎসকেরা বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন যা ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের শেষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি করেছে।
মঙ্গলবার শেষ হওয়া এ সভায় বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ক্যান্সার কোষ থেকে তৈরি হওয়া অণুগুলোকে নিয়ে কাজ করে তারা ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি তরান্বিত করতে পেরেছেন।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ মারিয়ম লাস্টবার্গ আল জাজিরাকে বলেন, ‘যে রোগগুলি নিয়ে কাজ করছি সেটাকে ভালোভাবে বোঝার ফলে আমাদের কোথায় আক্রমণ করতে হবে সেটা বুঝতে পারছি আমরা। বিশেষ ধরণের ইনহিবিটর বা ব্লকার তৈরি করা সম্ভব যা নির্দিষ্ট দুর্বল পয়েন্টগুলিকে টার্গেট করবে।’
অগ্রগতি থাকা সত্বেও তিনি যোগ করেন, সঠিক সময়ে সঠিক রোগীর জন্য সঠিক চিকিৎসা খুঁজে পেতে আরও ব্যপক গবেষণা প্রয়োজন। লাস্টবার্গ এও বলেন যে ক্যানসার চিকিৎসায় এ ওষুধগুলো প্রাপ্তির বিশ্বব্যাপী বৈষম্য খুবই উদ্বেগজনক।
এএসসিও সভায় যে কয়েকটি ঘোষণা চিকিৎসকদের আশাবাদী করে তুলেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
ফুসফুসের ক্যানসার
গবেষণায় দেখা গেছে টিউমার অপসারণের পর প্রতিদিন ওসিমেরটিনিব সেবনে বিশেষ ধরণের ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এ পিল নন-স্মল সেল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবহৃত হয়। একই সঙ্গে এটি এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাকটর রিসেপটর (ইজিএফআর) এর পরিবর্তন ঘটায়।
ফ্রান্সের লিগ এগেইন্সট ক্যানসারের গবেষণা প্রধান আইরিস পাউপোর্ত বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এ আবিষ্কার নন-স্মল সেল ক্যানসার চিকিৎসায় উজ্জ্বল আশার আলো। এতদিন এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন ধীরগতির ছিল।’
মস্তিষ্কের ক্যানসার
আরেকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে মস্তিষ্কে গ্লিওমা টিউমারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ভোরাসিডেনিব নামের ওষুধটি ক্যানসারকে ছড়াতে না দিয়ে রোগীদের বেঁচে থাকার সময় বৃদ্ধি করছে।
ফ্রেঞ্চ কোম্পানি সার্ভিয়ের এর তৈরি এ পিলটি মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু ক্যানসারের ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ি এনজাইমকে আটকে দেয়।
স্তন ক্যানসার
শিকাগোতে প্রকাশিত প্রাথমিক পরীক্ষার ফলগুলোতে দেখা গেছে যে রিবোসাইক্লিব প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ক্যানসারের ফিরে আসার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমিয়েছে।
সুইস কোম্পানি নোভারটিসের তৈরি ওষুধটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে অনুমোদিত। এটি হরমোনাল থেরাপির সংমিশ্রণে পরীক্ষা করা হয়।
এএসসিও বিশেষজ্ঞ রিতা নন্দা এটিকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি পরিবর্তনকারী পরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সার্ভিক্যাল ক্যানসার
প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের রোগীদের জন্য ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাসসহ আরও সুসংবাদ ছিল। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সব রোগীর হিস্টার্যাকটমি বা জরায়ু ও সার্ভিকস অপসারণ করতে হয় তাদের জন্য ক্যানসারের ঝুঁকি র্যাডিকাল হিস্টার্যাকটমি (জরায়ু, সার্ভিকস ও যোনির ওপরের অংশসহ অপসারণ) করা রোগীদের চেয়ে বেশি নয়।
এ প্রসঙ্গে পাউপোর্ত বলেন, শুধু ওষুধ নয় ক্যানসার চিকিৎসার অন্য পদ্ধতিতেও উন্নতি করা জরুরি।
জরায়ুর ক্যানসার
এএসসিওতে উপস্থাপিত আরেকটি ট্রায়ালে দেখা যায় যে, মিরভেটক্স-আইমাব সোরাভটেনসিন নামের অ্যান্টিবডি চিকিৎসা ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে থাকার হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
মলদ্বারের ক্যানসার
শিকাগোর সভার উত্থাপিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে যাওয়া মলদ্বারের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা অস্ত্রোপচারের আগে রেডিয়েশন থেরাপি না নিয়ে কিমোথেরাপি নিতে পারে।
এতে করে রোগীরা ক্লান্তি, বমিভাব, ঝাপসা দৃষ্টি, ও মাথাব্যাথার মতো উপসর্গ মুক্ত থাকতে পারেন।
ভ্যাকসিন
চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ক্যানসারের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা। এএসসিওর সম্মেলনে ঘোষিত প্রাথমিক গবেষণাগুলোর অন্যতম ছিল ফুসফুস, মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার, মস্তিষ্কের টিউমার গ্লিওব্লাস্টোমা ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এইচপিভি ভাইরাসকে টার্গেট করা ভ্যাকসিন
ফ্রান্সের কুরি ইনস্টিটিউটের অনকোলজিস্ট ক্রিস্টোফ লে টুর্নিউ, এইচপিভির একটি নির্দিষ্ট আকারের জন্য প্রযোজ্য ভ্যাকসিন নিয়ে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। তার মতে, যে সম্প্রতি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি যোগ করেন, ‘থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আরও কথা বলছি এবং আরও বেশি ট্রায়াল চলছে।’