‘হাশ মানির লক্ষ্য ছিল নির্বাচন ব্যাহত করা’
টিবিএন ডেস্ক
এপ্রিল ২২ ২০২৪, ২০:৪৪
- 0
ডনাল্ড ট্রাম্পের হাশ মানি ট্রায়ালে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। নিউ ইয়র্কে শুরু হওয়া মামলাকার্যের শুনানিতে সোমবার উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় এক আইনজীবী জুরিদের বলেন, ‘সহজ কথায় এটি ছিল নির্বাচনে জালিয়াতি।’
আত্মপক্ষ সমর্থনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ট্রাম্পের আইনজীবী বলেন, ‘ট্রাম্প কোনো অপরাধ করেননি এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা বেআইনি নয়। তিনি নির্দোষ।’
২০১৬ সালে হোয়াইট হাউযের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
তিনি ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির ৩৪টি অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং ড্যানিয়েলসের সঙ্গে কথিত যৌন সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: পাবলিসিটির কারণে ট্রাম্পের হাশ মানি ট্রায়াল পেছানোর আবেদন নাকচ
ম্যানহাটনে ফৌজদারি বিচারের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে, প্রতিটি পক্ষ জুরির কাছে নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। প্রথম সাক্ষী, ট্যাবলয়েড প্রকাশক ডেভিড পেকারও সংক্ষিপ্তভাবে আদালতে হাজির হন। তিনি মঙ্গলবারও তার সাক্ষ্য চালিয়ে যাবেন।
প্রসিকিউটর ম্যাথিউ কোলাঞ্জেলো অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী ও আস্থাভাজন মাইকেল কোহেন ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের প্রধান ফিনান্সিয়াল অফিসার অ্যালেন উইসেলবার্গের সঙ্গে কাজ করে ট্রাম্পের নির্দেশে হাশ মানি লেনদেনের বিষয়টি গোপন করেন।
ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠায় কোহেন তাকে ওই অর্থ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর ট্রাম্প তার সাবেক আইনজীবীকে অর্থ দেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ দেয়ার বিষয়টি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন যে, ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেয়ার পরিকল্পনায় তিন ধরণের রেকর্ড - চালান, লেজার এন্ট্রি ও চেক জাল করা হয়েছে।
কোলাঞ্জেলো বিচারকদের বলেছেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক নথিতে উল্লেখ করেছেন, কোহেনের সঙ্গে আইনি সেবার জন্য ওই অর্থ দেয়া হয়েছে।
প্রসিকিউটর বলেন, ‘এগুলো ছিল মিথ্যা।’
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি দাবি করেছেন, ট্রাম্প এই অর্থ দেন যেন ভোটাররা ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি জানতে না পারে।
প্রসিকিউটররা বলেছেন, এটি নির্বাচনি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
তারা যে প্রমাণের উপর জোর দিয়েছেন তার একটি অংশ হলো অ্যাক্সেস হলিউড টেপ। যেখানে ট্রাম্প টেলিভিশন উপস্থাপক বিলি বুশের কাছে বিবাহিত নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে বড়াই করছিলেন।
কোলাঞ্জেলো আদালতকে বলেন, ‘অভিযুক্ত এবং তার প্রচারণা কর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, এটি বিশেষত নারী ভোটারদের প্রতি তার অবস্থানকে অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।’
কোলাঞ্জেলোর অভিযোগ, এর একদিন পরই ড্যানিয়েলস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ আনেন। এরপর পেকার মাইকেল কোহেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
কোলাঞ্জেলো জুরিদের বলেন, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্ক রয়েছে এমনটা জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে তার প্রচারণার জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারত, তাই ট্রাম্পের নির্দেশে কোহেন একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।’
প্রসিকিউটরদের আপত্তির কারণে কয়েকবার বাধাগ্রস্থ হলেও, ডিফেন্সের খণ্ডন মোটামুটি সহজ ছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রসিকিউটরদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী কোহেনকে অবিশ্বস্ত সাবেক কর্মী হিসেবে প্রমাণ করাতে চেয়েছেন ট্রাম্পের আইনজীবী টড ব্লাঞ্চে।
ব্লাঞ্চে বলেন, ‘সে একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী এবং দোষী মিথ্যাবাদী। সে একজন স্বীকৃত মিথ্যাবাদী।’
তিনি ড্যানিয়েলসের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তার দাবির মাধ্যমে তিনি হাজার হাজার ডলার আয় করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জুরিকে তাকে সাক্ষী হিসাবে বাদ দিতে অনুরোধ করেন।
নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে প্রসিকিউটররা যে মামলা করেছেন, সে বিষয়ে ব্লাঞ্চে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার ক্লায়েন্ট ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেও অবৈধ কিছু করেননি।
ব্লাঞ্চে বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় দোষের কিছু নেই। এরই নাম গণতন্ত্র।’