বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে শুক্রবার দিনজুড়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের এ ভিন্নধর্মী আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।
প্যালেস্টাইনপন্থি বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে। তারা বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্প প্রত্যাহারের বিষয়ে শুক্রবার সকালে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছেন।
তা সত্ত্বেও, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি পুলিশ বাস পার্ক করা দেখা গেছে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং পুলিশের লক্ষণীয় উপস্থিতি ছিল।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেছেন, ‘আমাদের দাবি আছে; তাদেরও আছে; আলোচনা ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্য বিকল্প বিবেচনা করতে হবে।’
শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে প্রায় তিন ডজন বিক্ষোভকারীর একটি দল তালাবদ্ধ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে স্লোগান দিতে শুরু করে। সেখানে অন্তত ৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তা জড়ো হওয়ার পর তারা চলে যায়।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি সোমবার থেকে ক্যাম্পাস বিল্ডিং এর ভেতরে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করার জন্য দেখা করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির ডিন জেফ ক্রেন জানান, তিনি ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টা বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট অফ ফ্যাকাল্টি এবং স্টাফরা সোমবার ব্যারিকেড করা শিক্ষার্থীদের সরাতে পুলিশকে ডাকার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার অনাস্থা ভোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি জানায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
স্টেইটের অন্য প্রান্তে ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ১০ মের স্কুলের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।
ক্যাম্পাসে ৯০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারের একদিন পর এই ঘোষণা দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের হার্লেম ক্যাম্পাসের বিখ্যাত গথিক ভবনের নিচের লনে জড়ো হওয়া শত শত বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধে পুলিশ অফিসারদের একটি ছোট দল ঘটনাস্থল থেকে পিছু হটলে শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে।
কলেজ ক্যাম্পাসের কোয়াডের এক কোণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ‘নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বোস্টনের এমারসন কলেজে বৃহস্পতিবার ভোরে একটি ক্যাম্প থেকে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য সতর্ক করছে। ছাত্ররা অস্ত্রসহ পুলিশ অফিসারদের প্রতিরোধ করতে গেলে ভিড়ের মধ্যে তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়া হয় এবং এ সময় কিছু প্রতিবাদকারীকে মাটিতে ফেলে দেয় পুলিশ।
এমারসন কলেজের ছাত্র ওশান মুইর বলেছেন, ‘রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। চারপাশে আরও পুলিশ ছিল। আমাদের ধীরে ধীরে ধাক্কা দেয়া হয় এবং ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।’
মুইর বলেন, ‘অন্য ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ আমাকে হাত ও পা ধরে তুলে নিয়ে যায়।’
ওশান মুইরকে বৃহস্পতিবার অনুপ্রবেশ এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এমারসন কলেজ বৃহস্পতিবার ক্লাস বাতিল করেছে এবং বোস্টন পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় চারজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভ থেকে ৫৭ জনকে জেলে পাঠানোর পরদিন অস্টিন ক্যাম্পাসের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস বৃহস্পতিবার অনেক শান্ত ছিল। ওই ৫৭ জনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের স্কুলের আইকনিক ক্লক টাওয়ারের নিচে প্রধান চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
আটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটিতে বৃস্পতিবার স্থানীয় এবং স্টেইট পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্প ভেঙে ফেলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে একজন প্রতিবাদকারীকে মাটিতে ফেলে দেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, পুলিশ অফিসারদের দিকে বিক্ষোভ থেকে কিছু বস্তু নিক্ষেপ করা হয় এবং তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
আটলান্টার জেল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, এমরি পুলিশ গ্রেফতার ২২ জনের বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ এনেছে।
এমরি পুলিশ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জনসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অনেককেই রাতের বেলায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির ব্লুমিংটনে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের একটি তাঁবুর ছাউনি ওঠিয়ে দেয়ার পর পুলিশ ঢাল ও লাঠি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ৩৩ জনকে গ্রেফতার করে।
এর কয়েক ঘণ্টা পর কানেটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে ফেলে এবং একজনকে গ্রেফতার করে।
ওহাইও স্টেইট ইউনিভার্সিটিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জড়ো হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
স্টেইট পুলিশের সতর্কতার পরেও যারা ক্যাম্পাস থেকে সরে যেতে অস্বীকার করে তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
ওহাইও স্টেইট ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র বেঞ্জামিন জনসন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী রাতারাতি বিক্ষোভগুলোকে বাধা দেয়া হয়েছে।
প্যালেস্টাইনপন্থি বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ইহুদি শিক্ষার্থীরা বলেছে, বিক্ষোভগুলো ইহুদি-বিরোধীতায় পরিণত হয়েছে এবং তারা ক্যাম্পাসে পা রাখতে ভয় পাচ্ছে।
তারা বিক্ষোভ দমনে আংশিকভাবে পুলিশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।