মিফেপ্রিস্টোন কী, কেন এত শোরগোল

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ১০ ২০২৩, ২৩:২০

মিফেপ্রিস্টোন পিল। ফাইল ছবি

মিফেপ্রিস্টোন পিল। ফাইল ছবি

  • 0

মিফেপ্রিস্টোন নামের অ্যাবরশন পিল বাজারজাতের বিষয়ে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) দুই দশকেরও বেশি আগে দেয়া অনুমোদন স্থগিত করেছেন টেক্সাসের একজন ফেডারেল জাজ।

তবে ফেডারেল গভর্মেন্টকে আপিলের সুযোগ দিতে তিনি আদেশটি সাত দিনের জন্য স্থগিত রাখেন।

গর্ভপাতবিরোধী পক্ষের করা ওই মামলায় দাবি করা হয়েছে, পিলটি অনিরাপদ। এটি অনুমোদন দেয়ার আগে এফডিএ ভালোভাবে যাচাই করেনি।

মিসোপ্রোস্টলের মতো মিফেপ্রিস্টোনও ওষুধের মাধ্যমে গর্ভপাতের জন্য ব্যবহার করা হয়। পিলটি মিফেপ্রেক্স ও কোরলিম ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাত করা হয়। মিফেপ্রিস্টোন কখনও কখনও আরইউ ফোরএইটসিক্স হিসেবেও পরিচিত। 

যেভাবে কাজ করে মিফেপ্রিস্টোন 

গর্ভধারণের জন্য দায়ী হরমোনের নাম প্রোযেস্টেরন। মিফেপ্রিস্টোন এই হরমোনের নিঃসরণ বন্ধ করে দিয়ে গর্ভাবস্থাকে ব্যাহত করে। গর্ভপাতের জন্য মিফেপ্রিস্টোন খাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর মিসোপ্রোস্টল খেতে হয়। এতে করে ওষুধটি রক্তপাত ঘটিয়ে এবং পেশী সংকোচনের মাধ্যমে জরায়ু শূন্য করে দেয়। 

গর্ভবতী নারী শেষ পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত বা তার কম সময়ের মধ্যে মিফেপ্রিস্টোন-মিসোপ্রোস্টল গ্রহণ করতে পারেন। পিআর রিভিউ জার্নাল পাবমেডে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি ৯৯.৬ শতাংশ কার্যকর।

মিফেপ্রিস্টোন কতটা নিরাপদ

মিফেপ্রিস্টোনের বাজারজাতের গত ২৩ বছরে শত শত গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার তথ্য বলছে, পিলটি অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর। 

অ্যামেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলযিস্টস ও অ্যামেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনসহ দেশের ১২টি নামকরা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়টি টেক্সাসের আদালতকে জানিয়েছে। 

দ্বৈত ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে গর্ভপাতের এ পদ্ধতি বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।

মিফেপ্রিস্টোন সেবনে মৃত্যুর হার ০.০০০৫ শতাংশ। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দাবি, অ্যামেরিকায় ২০০০ সালে ড্রাগটি অনুমোদনের পর থেকে ওষুধ গ্রহণকারী প্রতি মিলিয়ন নারীর মধ্যে পাঁচ জন মারা গেছেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, মিফেপ্রিস্টোনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আইবুপ্রোফেন ও অ্যাসিটামিনোফেনের মতো ব্যথা উপশমকারী ওষুধগুলোর মতোই।

সিএনএনের বিশ্লেষণ করা তথ্য অনুযায়ী, মিফেপ্রিস্টোন সচরাচর প্রেসক্রাইব করা মেডিকেশন ওষুধের চেয়েও নিরাপদ। 

মিফেপ্রিস্টোনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

চিকিৎসকেরা বলছেন, মিফেপ্রিস্টোনের খুব একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে যেকোনো ওষুধের মতো এটি সেবন করলে সামান্য অসুবিধা দেখা দিতে পারে।

এফডিএ জানিয়েছে, মিফেপ্রিস্টোন সেবনে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং জ্বর বা ঠান্ডা লাগতে পারে।

মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন আদালতে দেয়া অ্যামিকাস ব্রিফে জানায়, এ ওষুধ সেবনে রক্তক্ষরণ, হাসপাতালে ভর্তি বা উল্লেখযোগ্য সংক্রমণের মতো ঘটনাগুলো বেশ কম, মাত্র ০.৩ শতাংশ। 

মিফেপ্রিস্টোনের ব্যবহার

মিফেপ্রিস্টোন ও মিসোপ্রোস্টলের একসঙ্গে সেবন অ্যামেরিকায় গর্ভপাতের অন্যতম প্রচলিত পদ্ধতি।

গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা ও নীতি সংস্থা গুটম্যাচার ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালে প্রকাশিত তথ্য বলছে, অ্যামেরিকার সমস্ত গর্ভপাতের মধ্যে ৫৩ শতাংশ হয় মেডিকেশন অ্যাবরশনের মাধ্যমে। 

তবে মিসোপ্রোস্টল ব্যবহারে বাধা নেই

মিফেপ্রিস্টোনের ব্যবহার বন্ধ নিয়ে আলোচনা চললেও, মিসোপ্রোস্টল খেতে কোনো বাধা নেই। গর্ভপাতের জন্য ওষুধটি প্রচলিত নিয়মে সেবন করা যাবে।

মিসোপ্রোস্টল পিল। ফাইল ছবি

এফডিএ এটিকে গ্যাস্ট্রিক আলসারসের চিকিৎসায় ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়।

২০১৯ সালের একাধিক গবেষণায় এসেছে, শুধু মিসোপ্রোস্টল দিয়েই গর্ভপাত করা সম্ভব। তবে মিফেপ্রিস্টোনের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে এর কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু মিসোপ্রোস্টল সেবনে প্রায় ৭৮ শতাংশ গর্ভপাত সফল হয়েছে। ৯৩ শতাংশ সফল হয় ভায়াবেল প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে। হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে মাত্র ০.২ শতাংশ নারীকে। 

ম্যাসাচুসেটসের প্রসূতি/স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ফিজিশিয়ান ফর রিপ্রোডাক্টিভ ফেলো ডা. মেলিসা এল ওং বলেন, ‘গর্ভপাতের জন্য মিসোপ্রোস্টল বেশি মাত্রায় গ্রহণ করতে হয়। ফলে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তবে ওষুধটি খুব ভালো কাজ করে এবং এটি বেশ নিরাপদও।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন