১৭ বছরের কিশোরীর বিরুদ্ধে ১৯ বছরের প্রেমিককে বিক্রির অভিযোগ

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪ ২০২৫, ২৩:৪৬ হালনাগাদ: নভেম্বর ১৬ ২০২৫, ৩:৪৪

সশস্ত্র ব্যক্তিটি হুয়াংকে মিয়ানমারের কাইজুয়ান নামের একটি ভবন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে টেলিকম প্রতারণা পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছবি: এসসিএমপি

সশস্ত্র ব্যক্তিটি হুয়াংকে মিয়ানমারের কাইজুয়ান নামের একটি ভবন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে টেলিকম প্রতারণা পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ছবি: এসসিএমপি

  • 0

এসসিএমপি রবিবার জানায়, চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে ৪৮ হাজার ডলার দেওয়ার পর হুয়াং নামের তরুণটিকে ছেড়ে দেয় জালিয়াত চক্র।

চীনের ১৯ বছরের এক তরুণকে মিয়ানমারের একটি জালিয়াত চক্রের কাছে এক লাখ ইউয়ান তথা ১৪ হাজার ইউএস ডলারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে তার ১৭ বছর বয়সী প্রেমিকার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় করা মামলার শুনানি হবে চীনের একটি আদালতে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এসসিএমপি রবিবার জানায়, চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে ৪৮ হাজার ডলার দেওয়ার পর হুয়াং নামের তরুণটিকে ছেড়ে দেয় জালিয়াত চক্র।

এ চক্রের হাতে প্রায় চার মাস ছিলেন তরুণটি, যেখানে তাকে প্রায়ই মারধর করা হতো। এ নিপীড়নের ফলে তার মধ্যে বধিরতা দেখা দেয়।

চীনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জিয়াওজিয়াং মর্নিং হেরাল্ড জানায়, হুয়াংয়ের বোন তার ভাইয়ের দুর্দশার কথা অনলাইনে জানানোর পর দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এসসিএমপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঝু নামের প্রেমিকার সঙ্গে হুয়াংয়ের প্রথম সাক্ষাৎ হয় চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংদং প্রদেশের গুয়াংঝুর একটি বিলিয়ার্ডস রুমে। সময়টা ছিল গত বছরের অক্টোবর। সেখান থেকে ঝুর ভাড়া বাসায় যাওয়ার আগেই হুয়াং তার প্রেমে পড়ে যান।

ঝু এ তরুণকে জানায়, তার বাড়ি দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশে। দেশজুড়ে বিনিয়োগ আছে তার মা-বাবার।

প্রেমে পড়ার সময় বেকার ছিলেন তরুণ হুয়াং। কিশোরী তাকে জানায়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে তার পরিবারের কিছু ব্যবসা আছে। সেখানে হুয়াং চাকরি পেতে পারেন।

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পরিবারকে না জানিয়েই ঝুর সঙ্গে বিমানে করে থাইল্যান্ড যান হুয়াং।

এ তরুণের বোন জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেখে তারা জানতে পারেন, তার ভাই থাইল্যান্ডে। তার ভাই ও তার প্রেমিকা পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় যায়, যেখানে ঝুর চেনা সশস্ত্র এক ব্যক্তি হুয়াংকে তুলে নিয়ে তার পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।

অস্ত্রধারীর কাছে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনটি কিছু সময়ের জন্য দিতে ঝুর কাছে আকুতি জানান হুয়াং। এতে ঝু রাজি হয়।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে হুয়াং পরিবারের কাছে সাহায্য চান। তার পরিবার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে চীনের পুলিশকে জানায়।

হুয়াং জানান, সশস্ত্র ব্যক্তিটি তাকে মিয়ানমারের কাইজুয়ান নামের একটি ভবন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে তার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে টেলিকম প্রতারণা পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এ তরুণের ভাষ্য, মিয়ানমারের জালিয়াত চক্রের কাছে থাকা অবস্থায় তাকে দিনে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। প্রশিক্ষণের পর কারও সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারায় ভবনটির ম্যানেজাররা প্রায়ই তার কোমরে লোহার লাঠি দিয়ে পেটাতেন। তার কানে চড় মারতেন তারা। এ কারনে হুয়াং বধির হয়ে যান এবং তার ওজন কমে যায় ১০ কেজির বেশি।

এসসিএমপির খবরে উল্লেখ করা হয়, জালিয়াত চক্রের প্রধান একসময় হুয়াংকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার আগে তিনি তরুণের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চান। কারণ ঝুর কাছ থেকে ১৪ হাজার ডলারে হুয়াংকে কেনে চক্রটি।

চীন সরকার মিয়ানমারের চাওশান চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে মুক্তিপণের বিষয়ে জালিয়াত চক্রের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে। এরই ধারাবাহিকতায় তরুণের পরিবার ৪৮ হাজার ডলার দিয়ে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে।

জুনে চীনে ফিরে আসেন হুয়াং। থাইল্যান্ডে ১০ দিন ভ্রমণের পর চীনে ফিরে গ্রেপ্তার হয় তার প্রেমিকা।

এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল জুলাইয়ের শেষের দিকে, কিন্তু এ শুনানি অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করেন বিচারক।

হুয়াংয়ের বোন জানান, বিদেশে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ কঠিন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন, মামলাটি কণ্টকাকীর্ণ।

এ নারী আরও জানান, তার ভাই খুব দ্রুত কিশোরীর প্রেমে পড়ে যায়। তার ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছিল। ১৭ বছরের একটি মেয়ে এ ধরনের ভয়াবহ কাজ করতে পারে, তা অনেকের চিন্তাতেও আসবে না।