জীবন বাঁচিয়েছে কুকুর, ঋণ শোধে বিক্রি করলেন বিলাসবহুল গাড়ি

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৮ ২০২৫, ৬:১৭ হালনাগাদ: নভেম্বর ১১ ২০২৫, ২১:০৬

পোষা কুকুরের সাথে হিরোতাকা সাইতো। ছবি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

পোষা কুকুরের সাথে হিরোতাকা সাইতো। ছবি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

  • 0

নিজের বিলাসবহুল স্পোর্টস কার বিক্রি করে আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য তহবিল গঠন করেন সাইতো।

আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন জাপানের ৫৪ বছর বয়সি হিরোতাকা সাইতো। সে সময় নিজের পোষা প্রাণীটি তার জীবন বাঁচিয়ে দেয়। এরপরেই প্রাণীদের প্রতি আলাদা ভালোবাসা অনুভব করেন সাইকো।

নিজের পোষা কুকুরের এই ঋণ শোধ করতে অসুস্থ কুকুরদের জন্য গড়ে তোলেন ওয়ান্সফ্রি নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র। নিজের বিলাসবহুল স্পোর্টস কার বিক্রি করে আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য তহবিল গঠন করেন সাইতো।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, জাপানের ইয়াইজু শহরে অবস্থিত এই আশ্রয়কেন্দ্রে বিনা মূল্যে অসুস্থ কুকুরের সেবা দেওয়া হয়।

জাপানের সংবাদমাধ্যম দ্য আসাহির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এমন সব কুকুরের দেখাশোনা করা হয়, যা অনেক প্রাণীপ্রেমীর পক্ষে সামলানো কঠিন।

ওয়ান্সফ্রির প্রধান সাইতো জানান, তারা যে কুকুরগুলোকে আশ্রয় দেয় তারা সাধারণত মানুষকে নির্বিচার কামড়ায়, গর্জন ও চিৎকার করে। আগে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় মূলত তারা এ ধরনের আচরণ করে।

সাইতো একটি কোম্পানির মালিক ছিলেন। তবে প্রায় ১২ বছর আগে যখন কোম্পানিটি আর্থিক সংকটে পড়ে তখন তার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, সাইতো বাড়ি ছেড়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেন।

তবে তার সে পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি তার বাড়ির পোষা কুকুরটি। সাইতো বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার ৭০ কেজি ওজনের পোষা কুকুরটি দরজার সামনে বসে যাওয়া-আসার পথ আটকে দেয় এবং সেখান থেকে নড়তে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এভাবেই ভেস্তে যায় তার আত্মহত্যার পরিকল্পনাও।

কুকুরটির এমন আচরণে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিকল্পনা পাল্টান সাইতো। তিনি আত্মহত্যার ইচ্ছা বাদ দিয়ে মানুষকে কামড়ানো কুকুর উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেন। এ ধরনের কাজ জাপানে তখনো তেমন একটা পরিচিতি পায়নি।

জাপানি মিডিয়া আউটলেট এফএনএন কে সাইতো বলেন, ‘আমি যখন বুঝতে পারলাম একটি কুকুরের কারণে আমার জীবন বেঁচে গেছে, তখন মনে হলো বাকি জীবনটা কুকুরদের বাঁচিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। আমার সব অর্থ কুকুরদের জন্য ব্যয় করব।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাইতো তার বিলাসবহুল ফেরারি স্পোর্টস কারটি বিক্রি করে জমি কেনেন। সেখানে একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন। যেখানে কুকুরগুলো স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জানাতে চাই, তারা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।’

আশ্রয়কেন্দ্রে সুরক্ষার জন্য তিন জোড়া গ্লাভস পরা সত্ত্বেও, সাইতো তার কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। তবে দমে যাননি তিনি। ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছেন কুকুরদের।

ওয়ানসফ্রিতে এখন ৪০টি কুকুর এবং আটটি বিড়াল রয়েছে। সাইতো জানান, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩০০ কুকুরের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে চান সাইত। এই উদ্দেশ্যে জনসাধারণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তিনি।

সাইতো বলেন, ‘আমি আগের চেয়ে ভালো আছি। আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমি এটি উপলব্ধি করতে পেরেছি।’

সাইতোর এই গল্প সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘কুকুরেরও মানুষের মতো অনুভূতি আছে। তারা আমাদের সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। আমি সাইতোকে স্যালুট জানাই।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি এই কেন্দ্রটির জন্য কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী।’