এনওয়াই টাইমসের বিশ্লেষণ
পুতিনের পন্থায় মাথা নোয়ালেন ট্রাম্প

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭ ২০২৫, ০:৫৯ হালনাগাদ: অক্টোবর ২৮ ২০২৫, ২২:৫৪

আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে গালিচায় পুতিন ও ট্রাম্প। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে গালিচায় পুতিন ও ট্রাম্প। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

  • 0

যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য পুতিনের ওপর কোনো পরিণতি চাপিয়ে দেননি ট্রাম্প। উল্টো তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি খুবই খুশি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনে যু্দ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে না পারলে তিনি খুশি হবেন না। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্তে না আসার পরিণতি হবে মারাত্মক। আলাস্কায় যাওয়ার পথে বিমানে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

এর কয়েক ঘণ্টা পর ফের এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়েন প্রেসিডেন্ট, কিন্তু তিনি আলাস্কা ছাড়েন তার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিরতি না নিয়েই।

যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য পুতিনের ওপর কোনো পরিণতি চাপিয়ে দেননি ট্রাম্প। উল্টো তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি খুবই খুশি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস মনে করছে, আলাস্কার অ্যাঙ্করেজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিজের মূল লক্ষ্য থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প। শনিবার তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনে দ্রুত যুদ্ধবিরতির পেছনে ছুটবেন না তিনি। এর পরিবর্তে তিনি পুতিনের পছন্দের পন্থার কাছে মাথা নুইয়েছেন। আর তা হলো ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে বৃহত্তর শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা।

বৈঠকে অর্জন কী

নিউ ইয়র্ক টাইমস মনে করছে, বৈঠকের নিট ফল হলো পরবর্তী কোনো শাস্তি ছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকাল ধরে যুদ্ধ চালাতে পুতিনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া। সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য, আলাস্কা যাওয়ার পথে ট্রাম্প ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধের কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে লালগালিচা ও প্রেসিডেন্টের গাড়ি দ্য বিস্টে পুতিনের সঙ্গে তাকে মজা করতে দেখা গেছে।

যা বললেন ন্যাটোর সাবেক কূটনীতিক

আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ন্যাটোতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইভো ডালডার।

তার মতে, ট্রাম্পকে আবার বোকা বানানো হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতির প্রতিশ্রুতি থেকে সরিয়ে এনে ট্রাম্পকে বোকা বানাতে লাল গালিচায় দুই মিনিট এবং বিস্টে ১০ মিনিট লেগেছে পুতিনের।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পরিকল্পনায় জোর দিচ্ছেন প্রেসিডেন্টের মিত্ররা।

সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, এ যুদ্ধ সম্মানজনক ও ন্যায্যভাবে শেষ হতে পারে বলে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আশাবাদী তিনি।

যুদ্ধবিরতি, সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ না করলে কঠিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি গত মাসে দেন ট্রাম্প। এ সময়সীমা গত শুক্রবার নাগাদ সম্প্রসারণ করেন তিনি। বর্তমানে যুদ্ধবিরতি, সময়সীমা কিংবা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নেই আর কোনো পরিকল্পনা।

এরপরও স্বভাবসুলভভাবে বৈঠকে তার জয় দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বৈঠকটিকে মহান এবং বৈঠকের দিনটিকে খুবই সফল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের বৈঠক পরবর্তী মন্তব্য

বৈঠকের পর শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তার ভাষ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সর্বসম্মত সর্বোত্তম পন্থা সরাসরি শান্তি চুক্তিতে যাওয়া। এর ফলে যুদ্ধ বন্ধ হবে। এটি নিছক যুদ্ধবিরতি নয়, যা প্রায়ই লঙ্ঘন হয়।

তিনি আরও জানান, পুতিনের সঙ্গে যৌথ বৈঠকের পথ প্রশস্ত করতে ওয়াশিংটনে সোমবার বৈঠক করতে আসবেন জেলেন্সকি। সব ঠিক থাকলে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সূচি ঠিক করা হবে। এতে লাখো মানুষের জীবন রক্ষা করা যাবে।

ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের অবস্থান

দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির জন্য পুতিনের শর্তগুলো এতটাই খরুচে যে, তা মেনে নিতে চাইবেন না ইউক্রেন ও ইউরোপের অন্য দেশগুলোর নেতারা।

আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ নিয়ে কথা বলেন।

তার মতে, ইউক্রেন সংকটের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি নিষ্পত্তির জন্য সংকটের মূল সব কারণ ছেঁটে ফেলতে হবে। রাশিয়ার ন্যায্য সব উদ্বেগ আমলে নিতে হবে। ইউরোপ ও বিশ্বের নিরাপত্তা বলয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে।