কয়েক বছর ধরেই ধুঁকে ধুঁকে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে দেউলিয়ার সুরক্ষা পেতে প্রতিষ্ঠানটি নিউ জার্সির ইউনাইটেড স্টেইটস ব্যাংকরাপ্টসি কোর্টে চ্যাপ্টার ১১ এর অধীনে রোববার আবেদন করেছে।
বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের ওয়েবসাইটে রোববার সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে একটি বিবৃতি। তাতে লেখা, ‘আমাদের বিশ্বস্ত গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কার্যক্রম কমিয়ে ফেলার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।‘
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আগামী জুন নাগাদ দেশজুড়ে অবশিষ্ট ৪৭৫টি দোকান একে একে বন্ধ করে দেয়া হবে।
কোর্টের আবেদনপত্রে বলেছে, তারা ৫.২ বিলিয়ন ডলার ঋণে ডুবে আছে। তাদের সম্পদ আছে ৪.৪ বিলিয়ন ডলারের। আর দেউলিয়া সুরক্ষার সময়কালে সীমিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ২৪০ মিলিয়ন ঋণ সহায়তা নিয়েছে।
চ্যাপ্টার ১১- এর অধীনে প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় কিছু ছাড় পাবে। যেমন ঋণগুলো গুছিয়ে নেয়ার বা ঋণ শোধে ব্যবসার কিছু অংশ বিক্রি করার সুযোগ পাবে।
এই সুরক্ষা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণ শোধসহ অন্যান্য খরচ বহনের দায় থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে দেউলিয়াত্ব থেকে উঠতে পারলেও ব্যবসা আর কখনও জমবে কিনা- তা নিয়ে রিটেইল বিশেষজ্ঞরা।
এই আবেদনের বিষয়ে রিটেইল ব্র্যান্ডটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন ও নড়বড়ে সময় ছিল গত ১২ মাস… অনেক শ্রম, সৃজনশীলতা ও নিরলস প্রচেষ্টার পরও এই প্রতিষ্ঠান তহবিলের ঋণ শোধ ও ইনভেন্টরিতে যথেষ্ট পরিমাণ পণ্য সরবরাহ একইসঙ্গে চালিয়ে নিতে পারছে না।‘
বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ডের প্রেসিডেন্ট ও চিফ এক্সিকিউটিভ সু হোভ বলেন, ‘জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে লাখ লাখ গ্রাহক আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন। কলেজ যাওয়া থেকে বিয়ে করার, নতুন বাড়ি করার বা সন্তানের জন্মের সময় তারা আমাদের পণ্যই নিয়েছেন।‘
ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেও এর বাইবাই বেবিসহ অন্য দোকানগুলো এখন খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর মধ্যে বুধবার স্টোর ক্লোজিং সেল শুরু হবে এই ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যবসার কিছু অংশ বা পুরোটাই বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করবে তারা। দেউলিয়া সুরক্ষা চলাকালে এমন ক্রেতা পেয়ে গেলে দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসবে। তা না হলে ব্যবসা একেবারে বন্ধ করে সমস্ত সম্পদ দাবিদারদের বিলিয়ে দেবে।
সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্লোবালডাটা রিটেইল বিশ্লেষক নেইল সাউনডারস বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে অনলাইনভিত্তিক বেচাকেনায় চলে গেলে হয়ত দেউলিয়া পরিস্থিতি থেকে বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড পরিত্রাণ পাবে। তারপরও বাজারে আগের অবস্থান এটি আর ফিরে পাবে না, কেবল একটা ছায়া প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকবে।‘
এই হোম একসেসরিজ রিটেইল ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে। কয়েক বছরের মধ্যে বাড়তে থাকে এর চাহিদা, যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন পণ্য। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ঘরের প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও বিক্রি করতে থাকে এটি। এক কথায় ঘরের যাবতীয় সব সরঞ্জাম গ্রাহকরা এই ব্র্যান্ডে পেতে শুরু করে।
তাদের ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক হয় ২০১০ সালের দিকে। সে সময় অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় হোম ফার্নিসিং রিটেইলার ছিল বেড বাথ অ্যান্ড বিয়ন্ড। ৫০ স্টেইটে দোকান ছিল ৯৭০ এর বেশি।
অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকরা ঝুঁকতে শুরু করায় গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির লাভ কমতে থাকে। একের পর এক বন্ধ হতে থাকে দোকান, ছাটাই হতে থাকে কর্মী। লোকসানের ধারাবাহিকতায় আসে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার এই সিদ্ধান্ত।