গোল্ডেন ডোম কত স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জানানো হলো প্রেজেন্টেশনে

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩ ২০২৫, ৯:৫৯

গোল্ডেন ডোম তৈরির জন্য ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। ছবি: রয়টার্স

গোল্ডেন ডোম তৈরির জন্য ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। ছবি: রয়টার্স

  • 0

সিস্টেমটির জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

প্রকাশিত হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রেজেন্টেশন। অ্যামেরিকাকে বিভিন্ন রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি হতে যাওয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় থাকছে চারটি স্তর ।

গোল্ডেন ডোম সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন স্লাইড নিয়ে রয়টার্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি স্তরের মধ্যে থাকবে একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক এবং তিনটি স্থলভিত্তিক স্তর।

এ ছাড়া এরমধ্যে ১১টি ছোট রেঞ্জের ব্যাটারি যুক্ত থাকবে, যা অ্যামেরিকার মূল ভূখণ্ড, আলাস্কা ও হাওয়াইতে স্থাপন করা হবে।

স্লাইডগুলোর শিরোনাম দেয়া হয়, ‘গো ফাস্ট , থিংক বিগ’। স্লাইডগুলো গত সপ্তাহে আলাবামার হান্টসভিলে ৩,০০০ জন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

এই সিস্টেমটি খুব জটিল হলেও এটি সম্পূর্ণ করতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।

সিস্টেমটির জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে উপস্থাপিত স্লাইডগুলো থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রকল্পের মূল স্থাপত্য নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। কেননা সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় লঞ্চার, ইন্টারসেপ্টর, গ্রাউন্ড স্টেশন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সাইটের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

অ্যামেরিকান একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প ব্যয়ের জন্য অর্থের কোনো সংকট নেই। তবে প্রকল্পের জন্য কত খরচ হতে যাচ্ছে তা নিয়ে এখনও নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়নি। জুলাইয়ে পাস হওয়া ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলে এ পর্যন্ত কংগ্রেস গোল্ডেন ডোমের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। ২০২৬ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল বাজেটের অনুরোধে গোল্ডেন ডোমের জন্য আরও ৪৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়।

অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষার জন্য তৈরি গোল্ডেন ডোম একটি বহু-স্তরযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যা ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তবে অ্যামেরিকার মতো বড় ভূখণ্ড এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকির কারণে এই সিস্টেম বেশ জটিল এবং আকারে বড়।

স্লাইডের তথ্য অনুযায়ী, গোল্ডেন ডোম সিস্টেমের আর্কিটেকচারে চারটি স্তর রয়েছে: একটি স্পেস-ভিত্তিক স্তর – এটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হবে। তিনটি ভূমি-ভিত্তিক স্তর – যার মধ্যে রয়েছে: ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ইন্টারসেপ্টর, রাডার অ্যারে, এবং সম্ভাব্যভাবে লেজার ব্যবস্থা। এই চারটি স্তর একযোগে অ্যামেরিকাকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত থেকে রক্ষা করবে।

প্রেজেন্টেশনে চমকপ্রদ তথ্য অনুযায়ী, উপস্থাপনায় থাকা মানচিত্র অনুযায়ী মিডওয়েস্টে একটি নতুন বড় ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষেত্র তৈরি হবে। এটি নেক্সট জেনারেশন ইন্টারসেপ্টরস (এনজি আই) এর জন্য হবে, যা লকহিড মার্টিন (এলএমটি) তৈরি করছে। এই ক্ষেত্রটি টার্মিনাল হাই-অ্যালটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) এবং এজিস সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এবং এটি ওপরের স্তর হিসেবেও কাজ করবে, যা লকহিড তৈরি করছে।

এনজিআই হলো আধুনিকায়িত ক্ষেপণাস্ত্র, যা গ্রাউন্ড-ভিত্তিক মিডকোর্স ডিফেন্স (জিএমডি) নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কে রয়েছে রাডার, ইন্টারসেপ্টর এবং অন্যান্য সরঞ্জাম। এটি বর্তমানে অ্যামেরিকাকে অবৈধ রাষ্ট্র থেকে আগত আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার প্রধান প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করছে।

অ্যামেরিকা বর্তমানে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া এবং আলাস্কায় জিএমডি লঞ্চ সাইট পরিচালনা করে। এই পরিকল্পনায় অতিরিক্ত হুমকি মোকাবিলায় মধ্য-পশ্চিমে তৃতীয় একটি সাইট যুক্ত করা হবে। এছাড়া স্লাইডগুলোতে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখানো হয়েছে, যেমন সিস্টেমের কিল চেইন জুড়ে তথ্য প্রেরণে দেরি হওয়া।

গোল্ডেন ডোমের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষেপণাস্ত্রকে তাদের ‘বুস্ট ফেজ’ বা উৎক্ষেপণের সময়েই ধ্বংস করা। এজন্য, এটি মহাকাশ-ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, যা আগত ক্ষেপণাস্ত্রকে আরও দ্রুত আটকাতে পারে।

উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, অ্যামেরিকা আগেও ইন্টারসেপ্টর এবং রি-এন্ট্রি ভেহিকেল তৈরি করেছে, কিন্তু কখনও এমন ভেহিকেল তৈরি করেনি যা শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্য করে রি-এন্ট্রির সময়ে অত্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে।

‘আন্ডার লেয়ার’ এবং ‘লিমিটেড এরিয়া ডিফেন্স’ নামে পরিচিত প্রতিরক্ষারর শেষ স্তরে নতুন রাডার এবং প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বর্তমান সিস্টেম থাকবে। এছাড়াও একটি নতুন “কমন” লঞ্চার থাকবে, যা সব ধরনের হুমকির বিরুদ্ধে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ইন্টারসেপ্টর চালু করতে সক্ষম হবে।

এই সিস্টেমগুলো মডুলার এবং স্থানান্তরযোগ্য হবে, যার মানে হলো এগুলো নির্দিষ্ট স্থানের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয় এবং একাধিক অঞ্চলে দ্রুত স্থাপন করা যাবে।