সুস্বাস্থ্যের জন্য ২৫ উপায়

তাহমিনা তাশরিফ মীম, টিবিএন ডেস্ক

জুন ৭ ২০২৩, ১৬:৫০

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

  • 0

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের জীবনে আমরা নানান উপায় খুঁজে থাকি। এর কিছু সত্যিই স্বাস্থ্যকর, আবার কিছু আছে অবৈজ্ঞানিক।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে পেতেও অনেকে পড়েন ঝামেলায়। ফলে দেখা যায়, অনেক সময় স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় হিসেবে আমরা যা বেছে নেই তা হয়ে দাঁড়ায় স্বাস্থ্যহানির কারণ। 

সুস্বাস্থ্যের জন্য সহজ এবং কার্যকর বেশ কিছু টিপস জানিয়েছে হেলথলাইন ডটকম। এসব স্বাস্থ্য পরামর্শ টিবিএন পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিনা তাশরিফ মীম। 

চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ কমান

সোডা, ফলের রস ও মিষ্টি চা অ্যামেরিকান ডায়েটে চিনির প্রাথমিক উৎস। বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয় হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি যাদের দেহে অতিরিক্ত চর্বি নেই তারাও এই ঝুঁকিতে আছেন। 

চিনিযুক্ত পানীয় শিশু স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুদের স্থূলতা, টাইপ টু ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নন-অ্যালকোহোলিক চর্বিযুক্ত লিভারের জন্য দায়ী চিনির মিষ্টতা।

চিনিযুক্ত পানীয়র বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন পানি, কফি, চিনি ছাড়া চা ও কার্বনেটেড পানি। 

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাদ্য খান

চর্বির পরিমাণ বেশি থাকায় অনেকে বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন। তবে এসব খাবার প্রোটিন, ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ।

বাড়তি ওজন, টাইপ টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি এড়ানো ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার। 

আল্ট্রা-প্রসেসড খাবার এড়ান

আল্ট্রা-প্রসেসড ফুডসে (ইউপিএফ) প্রকৃত খাদ্যউপাদানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়ে মেশানো হয় চিনি, উচ্চ পরিশোধিত তেল, লবণ, প্রিযারভেটিভস, কৃত্রিম রঙ ও ফ্লেভার। 

স্ন্যাক কেক, ফাস্ট ফুড, হিমায়িত খাবার, কুকিস ও চিপসের মতো ইউপিএফ টাইপ টু ডায়বেটিস, স্থূলতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। 

কফিতে নেই ভয়

কফি পান নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হয়েছে কফির উপকারিতা অপরিসীম। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কফি খাওয়ার সঙ্গে দীর্ঘায়ুর সম্পর্ক রয়েছে। টাইপ টু ডায়বেটিস, পারকিনসনস এবং অ্যালঝেইমার রোগ এবং অন্যান্য অনেক অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে পরিমিত কফি সেবন। তবে বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী নারীদের কম কফি পানের পরামর্শ দেন।

চর্বিযুক্ত মাছ খান

চর্বিযুক্ত মাছ উচ্চমানের প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির একটি বড় উৎস। বিশেষত ফ্যাটি মাছ যেমন স্যামন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর। নিয়মিত মাছ খাওয়া ব্যক্তির হৃদরোগ, ডিমেনশিয়া, পেটের প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কম থাকে। 

পর্যাপ্ত ঘুমান

পর্যাপ্ত ঘুম সুস্বাস্থ্যের মূলসূত্র। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে দেহের প্রাকৃতিক ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি থাকে। শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা কমায় পরিমিত ঘুমের অভাব। ক্ষুধামন্দা, ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতার জন্য দায়ী পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। 

অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার উপযোগী খাবার খান

অন্ত্রের ব্যক্টেরিয়াকে সামগ্রিকভাবে অন্ত্রের মাইক্রবায়োটা বলা হয়। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য এসব ব্যক্টেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। স্থূলতা, হজমের সমস্যার মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে মুক্তি দেয় এসব ব্যাকটেরিয়া। ফলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপযোগী খাবার গ্রহণ করা খুব জরুরি। 

পানি খেতে হবে প্রচুর

হাইড্রেশন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে একে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। পর্যাপ্ত পানি পানে হাইড্রেটেড থাকা শরীর ঝরঝরেভাবে সক্রিয় থাকে এবং দেহে পর্যাপ্ত রক্তের জোগান নিশ্চিত করে। প্রচুর পানীয় জল গ্রহণ হাইড্রেটেড থাকার সর্বোত্তম উপায়। এটি ক্যালোরি, চিনি ও অ্যাডেটিভস মুক্ত।

পোড়া মাংস বাদ দিন

মাংস আমাদের খাদ্য তালিকার একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর অংশ হতে পারে। এটি প্রোটিন ও পুষ্টির উৎস। তবে পোড়া মাংস খেলে দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা। পুড়ে যাওয়া মাংস ক্ষতিকর যৌগ তৈরি করতে পারে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ঘুমের আগে উজ্জ্বল আলো বন্ধ রাখুন

সন্ধ্যায় উজ্জ্বল আলোতে নীল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পাওয়া যায়। ঘুমের আগে উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে আসলে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে ঘুমানোর অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সব ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিন এড়িয়ে চলা উচিত। 

ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন

বেশির ভাগ মানুষ পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না। তবে হাড় শক্ত রাখা, বিষণ্ণতা কমানো, ইমিউনিটি সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করা ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-এর সরবরাহ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সূর্য আলো ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে সহজলভ্য প্রাকৃতিক উৎস হতে পারে। 

প্রচুর ফল ও সবজি খান

শাকসবজি ও ফলে রয়েছে প্রিবায়োটিক ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।  গবেষণায় দেখা গছে, যারা প্রচুর পরিমাণে শাসবজি ও ফল খান তারা বেশি দিন বাঁচেন। হৃদরোগ, স্থূলতা ও অন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ফল ও সবজির বিকল্প নেই। 

পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণে মনোযোগ দিন

শরীরে নতুন কোষ ও টিস্যু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করে প্রোটিন। এ ছাড়া শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখাতে প্রোটিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ শরীরের বিপাক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেও সাহায্য করে প্রোটিন। 

কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম করুন

অ্যারোবিক ব্যায়াম বা কার্ডিও মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য সেরা উপায়। পেটের চর্বি কমাতে কিংবা শরীরের ক্ষতিকর চর্বি কমাতে সাহায্য করে ব্যায়াম। 

অ্যামেরিকানদের জন্য নির্ধারিত শারীরিক ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের নির্দেশিকা অনুসারে, সপ্তাহে একজন প্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকানের কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে ভারী ব্যায়াম করা উচিত। 

ধূমপান ও ড্রাগে মানা

ধূমপান, ক্ষতিকর ড্রাগস গ্রহণ ও অতিমাত্রায় অ্যালকোহল পান শরীরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, খিটখিটে মেজাজসহ ক্যানসারের মতো রোগ থেকে রক্ষা পেতে ধূমপান, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উচিত। 

খাবারে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন

ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে সেরা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। এতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। হৃদযন্ত্রের জন্য বিশেষ উপকারী এই তেল। 

পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কম খান

সব কার্বোহাইড্রেট সমান নয়। ফাইবার অপসারণের জন্য পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটকে অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কাজেই এতে পুষ্টিমাত্রা কমে যায়। অতিরিক্ত পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত ভুট্টা, সাদা আটা, কৃত্রিম ভাবে যোগ করা অতিরিক্ত শর্করা পরিহার করা উচিত। 

ভারোত্তোলন করুন

স্ট্রেন্থ অ্যান্ড রেযিস্ট্যান্স ট্রেইনিং দেহের পেশী শক্তিশালী করার সেরা উপায়। শরীরের ইনসুলিন সক্ষমতা ও বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচের সর্বোত্তম পদ্ধতি ভারোত্তোলন। অ্যামেরিকানদের জন্য নির্ধারিত দ্য ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি গাইডলাইনস অনুসারে, সপ্তাহে অন্তত দুইবার রেযিস্ট্যান্স ট্রেইনিং করা উচিত। 

আর্টিফিশিয়াল ট্র্যান্স ফ্যাট পরিহার করুন

আর্টিফিশিয়াল ট্র্যান্স ফ্যাট মানব সৃষ্ট চর্বি। শরীরের জ্বালাপোড়া ও হৃদরোগের অন্যতম কারণ কৃত্রিম এই চর্বি। অ্যামেরিকা ও অন্যান্য অনেক দেশে আর্টিফিশিয়াল ট্র্যান্স ফ্যাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও কৃত্রিম খাবারে এখনও কম মাত্রায় আর্টিফিশিয়াল ট্র্যান্স ফ্যাট পাওয়া যায়। 

খাবারে প্রচুর হার্বস ও মশলা ব্যবহার করুন

খাবারে হার্বস ও মশলা ব্যবহার সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এগুলো যে শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় তা নয়, সেই সঙ্গে দেয় বেশ কিছু স্বাস্থ্য সুবিধা। আদা ও হলুদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। হার্বসের নানা প্রকারভেদ থেকে বেছে নেয়া যায় পছন্দের স্বাদ ও গন্ধ। 

সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন

বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে সুসম্পর্ক শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবার রয়েছে তারা তুলনামূলক সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর অধিকারী। 

মাঝে মাঝে খাবার পরিমাপ করুন

সব ধরনের খাদ্য উপাদান নিশ্চিতে ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে অনেকেই খাবার ওজন করেন। এ জন্য নিউট্রিশন ট্র্যাকার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ট্র্যাকিং আমাদের খাবারে প্রোটিন, ফাইবার, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ নিশ্চিতে সাহায্য করে। তবে এই কৌশল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

রেস্ট্রিক্টিভ ডায়েট এড়ান

ওজন কমানো বা দেহের মাংসপেশী বাড়াতে ডায়েট জনপ্রিয় উপায়। তবে ডায়েট সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে অকার্যকর। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ভবিষ্যতের ওজন বাড়াতে দায়ী অতীতের ডায়েটিং। কারণ খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় শরীরের বিপাকীয় হার কমে যায়। সেই সঙ্গে দেহের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এতে প্রয়োজনের তুলনায় আরও বেশি ক্ষুধা অনুভূত হয়। কাজেই ডায়েট পরিবর্তনের চেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা শ্রেয়। 

পুরো ডিম খান

ডিম ও স্বাস্থ্য বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মতবাদ বেশ পরিচিত। ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ার তথ্য আদতে ভুল। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের উপর ডিমের কোনো প্রভাব নেই। বরং ডিম প্রোটিন ও পুষ্টির একটি দুর্দান্ত উৎস। ২৬৩ হাজার ৯৩৮ জনের উপর করা একটি জরিপে দেখা গেছে, সম্পূর্ণ ডিম খাওয়ার সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিরও কোনো সম্পর্ক নেই। 

মেডিটেশন করুন

স্ট্রেস বরাবরই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে উচ্চ শর্করা, ওজনের বৃদ্ধি বা হ্রাস, অসুস্থতার সংবেদনশীলতা, চর্বির মাত্রার পরিবর্তনসহ অনেক কিছু স্ট্রেসের কারণে প্রভাবিত হয়। 

স্ট্রেস থেকে মুক্তির স্বাস্থ্যকর উপায় মেডিটেশন। উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ টু ডায়েবেটিস, কলেস্টরেল ও দেহের জ্বালাপোড়া থেকে স্বস্তি দেয় মেডিটেশন। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। 


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন