সরকার তাদের নাম জানে। তাদের আঙুলের ছাপ স্ক্যানের ডেটা আছে সরকারি কম্পিউটারে। অ্যামেরিকায় বৈধভাবে বসবাসকারী পাঁচ লাখের বেশি অভিবাসীর বেশির ভাগ কোথায় থাকেন, তাও জানে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-ডিএইচএস। এরপরও তাদের বিতাড়নের মুখোমুখি করেছে সুপ্রিম কোর্টের নতুন দুই সিদ্ধান্ত।
অ্যামেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব তুলে ধরেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
বৈধ থেকে বিতাড়নযোগ্য
আইনিভাবেই অ্যামেরিকায় থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন নিজ দেশে যুদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক গোলযোগ দেখা আসা অভিবাসীরা, কিন্তু তাদের অবস্থা আকস্মিকভাবে বদলে গেছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।
এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জো বাইডেনের প্রশাসনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইসে কাজ করা জ্যাসন হাউযার।
সাবেক এ কর্মকর্তার ভাষ্য, হাজার হাজার মানুষের, বিশেষত হেইতিয়ান, কিউবান ও ভেনেযুয়েলানদের অবস্থা `বৈধভাবে হাজির’ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ‘বিতাড়নযোগ্য’ হয়ে গেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা
সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যান না করায় আইনি সুরক্ষা বাতিল হয়ে যায় পাঁচ লক্ষাধিক অভিবাসীর। নিম্ন আদালতে তাদের পক্ষে আইনি লড়াই চললেও অনেক অভিবাসী এখন নিজেদের পাচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। কারণ তাদের অনেকেই সরকারকে ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে বসবা সের ঠিকানা, বায়োমেট্রিকস ও স্পন্সরদের নাম।
ট্রাম্প প্রশাসন যখন অভিবাসীদের দ্রুত বিতাড়নের পথ খুঁজছে, তখন এসব তথ্য ব্যবহার করে তাদের শনাক্ত করা কঠিন নয়।
প্রশাসন আইনি সুরক্ষা বাতিল হওয়া লোকজনকে কখন ও কতটা আগ্রাসী হয়ে আটক শুরু করে, তা নিশ্চিত নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক মাস আগে ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন ব্যবস্থা নেওয়ার কর্তৃত্ব আছে বলে মনে করেন তারা।
‘এটি অনাবশ্যক’
সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে যথাযথ মনে করে না অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা। গত সপ্তাহে সংস্থাটি আদালতের দেওয়া আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
জাস্টিস অ্যাকশন সেন্টার নামের সে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কারেন টামলিন বলেন, ‘এটি নৈরাজ্যপূর্ণ ও অনাবশ্যক এবং আমরা এরই মধ্যে আতঙ্কিত লোকজনের কল ও ইমেইল পেতে শুরু করেছি। আর আর্তনাদ শুরু বাড়বে।’
অভিবাসী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা টামলিন আরও বলেন, আনুমানিক আধা মিলিয়ন মানুষকে বিতাড়নের আদেশে কার্যকরভাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এটি আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় বেআইনিকরণ।
আরও গ্রেপ্তার ও বিতাড়নে সায় সুপ্রিম কোর্টের
দুটি মামলাতেই ট্রাম্প প্রশাসনের জরুরি আবেদনের ভিত্তিতে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশাসন আরও গ্রেপ্তার ও বিতাড়নের তাগিদ দিয়েছে। এমনকি বৈধভাবে অ্যামেরিকায় বসবাসকারীদেও বিতাড়ন চান ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা।
প্রশাসনের যুক্তি হলো কিছু অভিবাসন কর্মসূচির সুযোগকে অপব্যবহার করে লোকজন অ্যামেরিকায় প্রবেশ করেছেন। অন্যথায় তারা প্রত্যাখ্যাত হতেন।
গত কয়েক সপ্তাহে অ্যামেরিকান সরকারের দুটি কর্মসূচিকে বিলীন করে দিয়েছে আদালত। হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল ও টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস নামের কর্মসূচি দুটির মাধ্যমে বিতাড়ন সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল পাঁচ লক্ষাধিক মানুষকে।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়গুলোতে বিচারকদের সই এবং কোনো যুক্তি নেই। যেকোনো জরুরি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সই না থাকা স্বাভাবিক ঘটনা।
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিতাড়ন সুরক্ষা কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে বেড়েছে জননিরাপত্তা।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, সিএইচএনভি প্যারোল কর্মসূচিগুলো বাতিলের পাশাপাশি সুবিধার অপব্যবহার করা লোকজনের প্যারোল বাতিল কাণ্ডজ্ঞানভিত্তিক নীতিতে ফেরার জন্য আবশ্য করণীয় বিষয় হবে। এর মাধ্যমে জননিরাপত্তা ও অ্যামেরিকা ফার্স্ট নীতিতেও ফেরা যাবে। সিএইচএনভি বলতে তিনি বুঝিয়েছেন কিউবা, হেইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেযুয়েলাকে। হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল কর্মসূচির আওতায় থাকা এ দেশগুলোকে টার্গেট করেন ট্রাম্প।
আইসের সাবেক কর্মকর্তা জ্যাসন হাউযার বলেন, সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লোকজনকে বিতাড়নের লক্ষ্যবস্তু বানানো যায়, সে দিক আদালতের সিদ্ধান্তগুলো ছিল নাটকীয় পরিবর্তন।
তিনি বলেন, আদেশের প্রভাব পড়া কিছু অভিবাসী প্রায় দুই বছর ধরে অ্যামেরিকায় আছেন। আদেশের ফলে ত্বরিত ব্যবস্থায় তাদের বিতাড়ন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে দরকার হবে না অভিবাসন আদালতের প্রক্রিয়া অনুসরণের।