দুর্বিষহ গুয়ানতানামো বে বন্দিশালার কথা জানালেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৯ ২০২৩, ১৮:৫৯

গুয়ানতানামো বে বন্দিশালা। ফাইল ছবি

গুয়ানতানামো বে বন্দিশালা। ফাইল ছবি

  • 0

কিউবায় ২০০২ সালে চালু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কোনো অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ফিওনুয়ালা নি আওলাইনকে গুয়ানতানামো বে দেখার অনুমতি দিয়েছেন। এরপর জায়গাটি ঘুরে এসে ভয়াবহ নৃশংস আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন নি আওলাইন।

জাতিসংঘ বহু বছর ধরে একটি স্বাধীন তদন্তকারী পাঠানোর চেষ্টা করেছিল, তবে জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারী নি আওলাইন বলেছেন, যে শেষ ৩০ বন্দিকে অ্যামেরিকা আটকে রেখেছে তা ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর আচরণের’ প্রমাণ।

বন্দিরা এখনও তাদের পরিবারের সঙ্গে খুব কম যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে এবং তারা যে অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহারের সম্মুখীন হয়েছেন তার মানসিক ও শারীরিক ক্ষত এখনও রয়ে গেছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ফের মিলিত হওয়ার আশা নিয়ে কথা বলেছেন তারা।

গুয়ানতানামো বে বন্দিশালায় বন্দিদের সিরিয়াল নম্বর দিয়ে পরিচিত করা হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের শেকলে বেঁধে বৈঠকে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রত্যেকেই তদন্তকারীকে বলেছিলেন, তারা ২০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো স্বাধীন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। তারা এটাও বলেছেন, ‘আপনি খুব দেরিতে এসেছেন।’

এপির সঙ্গে গত সপ্তাহের সাক্ষাৎকারে নি আওলাইন ব্যক্তিগত ভাবে কী দেখেছেন সে সম্পর্কে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, সমস্ত অ্যামেরিকান কর্মীদের বন্দিদেরকে তাদের সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে সম্বোধন করতে হয়। একে তিনি ‘অমানবিকতা’ বলেছেন।

নি আওলাইন ২৬ জুন দেয়া তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলাগুলো ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হলেও গুয়ানতানামোতে বন্দিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অন্যায় ছিল৷ অনেক মানুষকে সেখানে বিনা কারণে আনা হয়েছিল, যারা সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন না। তিনি লিখেছেন, এখনও সেখানে জীবিত সব পুরুষ মানসিক ও শারীরিক ট্রমায় ভুগছেন।

নি আওলাইন বলেছেন, তিনি বিশেষভাবে তিনজন বন্দির বিষয়ে উদ্বিগ্ন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি এবং ‘সম্পূর্ণ আইনি সীমাবদ্ধতার মধ্যে তারা বসবাস করছেন’। এটি ‘আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে অসঙ্গতিপূর্ণ।’

অন্যদের মধ্যে ১৬ জনকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে তাদের নিতে ইচ্ছুক কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ১১ জনের বিরুদ্ধে এখনও অ্যামেরিকান মিলিটারি কমিশনে মামলা বিচারাধীন।

নি আওলাইন জানান, যখন বন্দিদের তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আনা হয়েছিল তখন তাদের বেঁধে আনা হয়েছিল। একে তিনি সন্ত্রাসবাদে দোষী সাব্যস্তদের জন্য আদর্শ পদ্ধতি নয় বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তার কারণ ব্যতীত মানুষকে বেঁধে রাখা যায় না এবং গুয়ান্তানামোতে এটি নিষিদ্ধ করা উচিত। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে শুধু শেষ উপায় হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এই পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে থাকা মানুষ। তাদের কিছুতে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়, বারবার স্মৃতিভ্রম হয়, শারীরিক ব্যথাসহ তাদের রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। তাদের মধ্যে অনেকেই চলাফেরা এবং অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন। স্থায়ী অক্ষমতা, মস্তিষ্কের আঘাত, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং প্রস্রাবের সমস্যাসহ নানা সমস্যা রয়েছে।

নি আওলাইন বলেন, তাদের অনশনের প্রতিক্রিয়ার মাঝে জোর করে খাওয়ানো একটি নিয়মিত অভ্যাস সেখানে। এটি অ্যামেরিকার একটি আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা এবং বন্দি ব্যক্তিদের জন্য গভীর হতাশার কারণ। বিচার ছাড়াই ২০ বছর ধরে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখেননি, বাইরের জগতের কোনো প্রবেশাধিকার নেই সেখানে।

প্রতিবেদনের জন্যনি আওলাইন নাইন ইলেভেনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের এবং জীবিতদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। গুয়ানতানামো থেকে মুক্তি পাওয়া ৭৪১ জন মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। যাদের মধ্যে ২৯টি দেশে প্রায় ১৫০ জন পুনর্বাসিত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই বাকিরা বাড়ি ফিরেছেন এবং ৩০ জন মারা গেছেন।

তিনি বলেন, গুয়ানতানামো থেকে যাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘নির্যাতন পুনর্বাসন এবং প্রতিটি একক অ্যামেরিকান নির্যাতন পুনর্বাসনে একজন করে নেতা।’

নি আওলাইনের প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশের মধ্যে রয়েছে নির্যাতনের পুনর্বাসন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। বিশেষ করে যাদের চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে তাদের জন্য এ সুবিধা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন