ভবিষ্যৎ ধকল মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা আহ্বান শেখ হাসিনার
টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ২১ ২০২৩, ১৭:১২
- 0
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, অস্থিতিশীল এই সময়ে ভবিষ্যত ধকল মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।
গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপনস গ্রুপের (জিসিআরজি) ভার্চুয়াল সভায় শুক্রবার বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সঙ্ঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ও বিশ্বের দূরতম প্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে ও ধ্বংস করছে।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা আজকে যখন ক্রমবর্ধমান সংকট এবং মানবতার ওপর যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে।’
হাসিনা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অস্ত্র আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিশ্বে দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা এবং অন্যান্য ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
হাসিনা জানান, বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে।
সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরি করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা তার প্রথম পরামর্শে বলেন, ‘আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনাশর্তে রেয়াতি, স্বল্প-মূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে।
‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এছাড়া, আইএফআই ও এমডিবি থেকে নিম্ন সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে।’
দ্বিতীয়ত, রপ্তানি বিধিনিষেধ, খাদ্যের মজুদ ও সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাতসহ যে সব কারণে খাদ্যমূল্য ও সহজলভ্যতায় প্রভাব পড়ে সে সবের সুরাহা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে (জাতিসংঘ) মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে খাদ্য দিতে এবং জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার।
তৃতীয় পর্যবেক্ষণে হাসিনা জানান, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার চতুর্থ পরামর্শে বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে যা বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনে ও তীব্রতা বাড়ায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, কঠিন সময়ে দেশটির জনগণের সহায়তায় তার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব সহকারে নিশ্চিত করেছি আমার দেশের কোনো নাগরিক যেন খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়।’