৩ বছর ধরে কেন হামাগুড়ি দিয়ে চলছেন এ ইনফ্লুয়েন্সার?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭ ২০২৫, ১৯:৪৩ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ২ ২০২৫, ২১:০৮

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারের এ জীবনযাপন পরিচিত ‘টারজান মুভমেন্ট’ নামে। ছবি: এনডিটিভি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারের এ জীবনযাপন পরিচিত ‘টারজান মুভমেন্ট’ নামে। ছবি: এনডিটিভি

  • 0

অ্যালেক্সিয়া ক্রাফট দে লা সলেক্স দুই হাত ও দুই পায়ে ভর করে হাঁটাচলা করে বেড়াচ্ছেন বিগত তিন বছর ধরে, কিন্তু কেন তিনি এমনটা করছেন? কারণ জানিয়েছে এনডিটিভি।

মানব শিশুর পথ চলার প্রথম ধাপ শুরু হয় চার হাত ও পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের হামাগুড়ি দিয়ে চলার ঘটনা বিরল। যদিও বাস্তবে তেমনটিই করছেন বেলজিয়ামের নির্মাতা এক ইনফ্লুয়েন্সার।

অ্যালেক্সিয়া ক্রাফট দে লা সলেক্স দুই হাত ও দুই পায়ে ভর করে হাঁটাচলা করে বেড়াচ্ছেন বিগত তিন বছর ধরে, কিন্তু কেন তিনি এমনটা করছেন? কারণ জানিয়েছে এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালেক্সিয়ার চলাফেরা করার বিশেষ এ পদ্ধতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচিতি পেয়েছে ‘টারজান মুভমেন্ট’ হিসেবে।

তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ভিডিওতে দেখা যায়, এ নারী কখনও সবুজ ঘাসে, কখনও শহরের পার্কে ছুটে বেড়াচ্ছেন হামাগুড়ি দিয়ে। কখনও বা পাহাড় কিংবা গাছে খালি পায়ে বেয়ে উঠছেন গল্পের চরিত্রের মতো।

সংবাদমাধ্যমটির খবরে উল্লেখ করা হয়, হামাগুড়ি দিয়ে চলাচলের বিশেষ এ পদ্ধতিকে বলা হয় কোয়াড্রোবিক্স। এ পদ্ধতিতে হামাগুড়ি, লাফ ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে চলাফেরা করা হয়। এটি শরীরচর্চার একটি বিশেষ পদ্ধতি।

অনলাইনে যাদের হাত ধরে কোয়াড্রোবিক্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে অ্যালেক্সিয়া অন্যতম।

শুরুর গল্প

শৈশব থেকেই প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতে ভালোবাসতেন অ্যালেক্সিয়া। পরিণত বয়সে প্রকৃতিপ্রেমী এ নারীকে স্থানান্তরিত হতে হয় গ্রাম থেকে শহরে।

‘শহরে এসে যেন প্রকৃতি থেকে আরও বিচ্ছিন্ন অনুভব করতে শুরু করি। প্রাণ ও প্রকৃতিকে অনুভব করতে শহুরে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়েই অ্যাডভেঞ্চার ও আউটডোর গেমগুলোতে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটা, দৌড়ানো শুরু করি’, বলেন অ্যালেক্সিয়া।

নিজের শক্তি, সামর্থ্য ও ভারসাম্য বজায় রাখতে খালি পায়ে পাহাড়ে চড়া, গাছ বেয়ে ওঠা, হামাগুড়ি দিয়ে ছুটে বেড়ানো এখন অ্যালেক্সিয়ার নিয়মিত কাজ।

তিনি মনে করেন, এ পদ্ধতিতে মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করা যায়।

এ ছাড়া প্রকৃতি ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে আদিম মানুষরা এভাবেই চলাফেরা করতেন বলে জানান এ ইনফ্লুয়েন্সার।

তার কাছে কোয়াড্রোবিক্স হলো নিজের আদি সত্তার কাছে ফিরে যাওয়ার উপায়।

শখ থেকে শিক্ষক

অ্যালেক্সিয়া এ বিশেষ জীবনযাপন পদ্ধতির ভিডিও ও দর্শন নিয়মিত প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তার ইনস্টাগ্রামের ১ লাখ ৮৪ হাজার ফলোয়ার তাকে অনুসরণ করেন নিয়মিত। অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন বিশেষ এ শরীরচর্চাকে জীবনের অংশ করতে।

চলতি বছর থেকে অ্যালেক্সিয়া শুরু করেন কোয়াড্রোবিক্স পদ্ধতির অনলাইন ক্লাস। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আয়োজন করেছেন ৬০টি কর্মসূচি।

অ্যালেক্সিয়ার ইনস্টাগ্রাম বায়োতে লেখা আছে, ‘আমাদের শিকড়কে স্মরণ করার যাত্রা।‘

কোয়াড্রোবিক্স ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

আধুনিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে এবং প্রকৃতিকে অনুভব করতে শরীরচর্চাগুলোর মধ্যে প্রাণীর ভঙ্গিমায় চলাফেরা তথা কোয়াড্রোবিক্স পদ্ধতি এখন আলোচিত।

এ পদ্ধতিতে শরীরচর্চা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা জানতে চায় এনডিটিভি।

এ বিষয়ে ভারতের সি কে বিরলা হসপিটালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের পরিচালক ডক্টর দেবাশীষ চন্দ বলেন, কোয়াড্রোবিক্সের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই রয়েছে।

শরীরের ভারসাম্য রক্ষা ও পেশি শক্তিশালী করতে এ পদ্ধতি বিশেষ কার্যকর বলে মত দেন এ চিকিৎসক।

তার মতে, বিবর্তনের যাত্রায় মানুষ দুই পায়ে চলাফেরা করছে। হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটাচলা শরীরকে বায়োমেকানিক্যাল চাপের মুখে ফেলতে পারে। এটি হয়তো স্বল্প সময় ব্যায়াম করার জন্য ঠিক আছে।

দেবাশীষ চন্দ বলেন, যারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান, তাদের বিশেষজ্ঞের কাছে শারীরিক সক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।