গাজার বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে মরিয়া নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনার কথা ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে জানিয়েছেন দেশটির সেনারা।
হারেৎজের বরাতে দ্য নিউ আরব শুক্রবার এ তথ্য জানায়।
নিউ আরবের শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা উপত্যকাজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের বেশির ভাগ গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান।
এসব বিতরণ কেন্দ্র নিয়ে নির্মম সত্য হারেৎজের কাছে তুলে ধরেন ইসরায়েলি সেনারা। তাদের ভাষ্য, দলে দলে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রয়োগ না করে তারা বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ের মধ্যে গুলি করেন। এর লক্ষ্য নির্দিষ্ট জায়গার দিকে যাওয়া থেকে ফিলিস্তিনিদের ঠেকানো।
প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ না করা এক সেনা ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোকে ‘হত্যা ক্ষেত্র’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমি ছিলাম, সেখানে প্রতিদিন এক থেকে পাঁচজন মানুষকে হত্যা করা হতো।’
সেনারা জানান, তারা ভিড় করা লোকজনকে এমনভাবে লক্ষ্যবস্তু বানাতেন, যেন তারা ‘হামলাকারী কোনো শক্তি’। জনতাকে সুশৃঙ্খল ও ছত্রভঙ্গ করতে অপ্রাণঘাতী অস্ত্রের পরিবর্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতেন তারা।
ওই সেনা বলেন, জনতার সঙ্গে যোগাযোগের ভাষা ছিল গুলি। বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শিশুসহ সমবেত সব ফিলিস্তিনির ওপর হামলায় ভারী মেশিন গান, গ্রেনেড লঞ্চার ও মর্টার ব্যবহার করা হতো।
গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলা বাড়ছে। উপত্যকার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে জরুরি ত্রাণ নিতে যাওয়া কমপক্ষে ৫৪৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় শুক্রবারও হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই দিন অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির দক্ষিণের খান ইউনিস এলাকায় কমপক্ষে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। একই দিন গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ার পূর্ব দিকে আবাসিক ভবনে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের অদূরে সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে ইসরায়েল। এ হামলায় এক জেলে নিহত ও কয়েকজন আহত হন।
এমন বাস্তবতায় গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল নৈরাজ্য ছড়ানোর পাশাপাশি গাজাকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।
ইসরায়েলি অবরোধে গাজাজুড়ে বাড়ছে ক্ষুধা ও অপুষ্টি। উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণকারী গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন অ্যামেরিকা ও ইসরায়েল সমর্থিত। এর পরও ফাউন্ডেশনের বিতরণ কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ দিতে হয়েছে গাজার শত শত বাসিন্দাকে।