অ্যামেরিকার মিত্র কাতারের ওপর ইসরায়েলের হামলা কেন?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০ ২০২৫, ০:৩৪ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৫ ২০২৫, ২৩:৫৭

কাতারে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা। ছবি: আল জাজিরা

কাতারে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা। ছবি: আল জাজিরা

  • 0

উপসাগরীয় দেশ কাতার যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, সে সময় এ হামলা শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল।

কাতারে মঙ্গলবার বিমান হামলা চালিয়ে হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েল।

এটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করল।

এমন এক দেশে হামলাটি হলো, যা অ্যামেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রধান মধ্যস্থতাকারী।

উপসাগরীয় দেশ কাতার যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, সে সময় এ হামলা শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল।

হামাস জানায়, ইসরায়েল তাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তবে তারা আহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

সংগঠনটি নিশ্চিত করেছে, তাদের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়ার ছেলে, তার অফিস ম্যানেজার এবং আরও তিনজন হামলায় নিহত হন।

কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় কাতারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আহত হন।

হামলার আগে অ্যামেরিকার ভূমিকা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দেয় হোয়াইট হাউস।

প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, ইসরায়েলের হামলা পরিচালনার সময় পেন্টাগন বিষয়টি হোয়াইট হাউসকে জানায়, কিন্তু একইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কাতার সরকারকে আসন্ন হামলার খবর জানাতে।

লেভিট আরও জানান, কাতারকে শক্তিশালী মিত্র ও বন্ধু মনে করেন প্রেসিডেন্ট। হামলার স্থান নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। যদিও হামাসকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যকে তিনি উপযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, হামলার আগে কোনো অ্যামেরিকান সতর্কতা তারা পাননি।

তিনি বলেন, কাতারকে আগে থেকে জানানো হয়েছে—এমন সব বক্তব্য ভিত্তিহীন। অ্যামেরিকার একজন কর্মকর্তার ফোন কল এসেছে তখনই, যখন দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

কাতারের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা সংঘটিত হওয়ায় এর মধ্যস্থতার উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়েছে। দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বহুলাংশে তার ব্যবসা ও পর্যটনের নিরাপদ ভাবমূর্তির ওপর নির্ভরশীল। বিকেলে দোহার যে এলাকায় হামলা হয়, তা স্কুল ও বিদেশি দূতাবাসের কাছে ছিল।

আল-আনসারি জানান, এই অপরাধমূলক হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং কাতারিদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণের পরিকল্পনায় জড়িত হামাস নেতাদের হত্যা করা হবে।

সেনাপ্রধান ইয়াল জামির সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল পুরো মধ্যপ্রাচ্যে হামলা চালাচ্ছে।

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই হামাস প্রতিনিধিরা কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে। হামাস জানায়, বৈঠকের সময়ই হামলা হয়।

হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এ কাপুরুষোচিত হত্যাচেষ্টা তাদের অবস্থান ও দাবিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না।

হামাস যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার, অবাধ ত্রাণ প্রবেশ এবং বন্দি বিনিময় চেয়েছে।

অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হবে কেবল তখনই, যখন হামাস সব বন্দি মুক্তি দেবে, নিরস্ত্র হবে এবং গাজা অসামরিক হবে। এমন দাবি হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সম্প্রতি খালিল আল-হাইয়াকে সরাসরি হুমকি দিয়েছিলেন, যিনি প্রায়ই কাতারে থাকেন।

কাৎজ বলেছেন, এ হামলা পুরোপুরি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে হয়েছে।

ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত জানায়, হামলার সময় নেতানিয়াহু ও কাৎজ তাদের কমান্ড সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্যবস্তু বানানো ভবনটিকে ইসরায়েল ‘জাজমেন্ট ডে’ কোড নেম দিয়েছিল।

হামলার ফলে কাতারের নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী ভাবমূর্তির ওপর ধাক্কা এলো।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির সিনিয়র ফেলো গাইথ আল-ওমারি বলেন, এ ঘটনার পর কাতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ হামলা উপসাগরীয় অঞ্চলে ইসরায়েলের সম্পর্ক আরও দুর্বল করতে পারে।

সৌদি আরব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের আইন লঙ্ঘন থামানোর আহ্বান জানিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্রুত হামলাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা অবিভাজ্য।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন।