নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী কে এই সুশীলা কারকি?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩ ২০২৫, ০:১০ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৬ ২০২৫, ৫:৪১

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি। ছবি: রয়টার্স

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি। ছবি: রয়টার্স

  • 0

সুশীলা কারকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন চরিত্র হিসেবে খ্যাত। ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি সরকারের এক অবৈধ নিয়োগ বাতিল করেন।

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামের অগ্রগামী মুখ সুশীলা কার্কি।

ছাত্র-যুবসমাজের গণআন্দোলন ও সহিংস দাঙ্গার পর সরকার পতনের ফলে এ নিয়োগ হলো। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী পেল নেপাল।

জেন জি আন্দোলনের পটভূমি

আন্দোলনের সূচনা হয় মূলত সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার কারণে।

ছাত্ররা অভিযোগ তোলেন, ক্ষমতাসীনদের লুটপাটে দেশ অচল হয়ে পড়েছে এবং সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করা হয়েছে।

গত সোমবার দেশজুড়ে ছাত্ররা জেন-জি ব্যানারে আন্দোলনে নামেন। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে অনেক ছাত্র নিহত হন।

এর দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।

সহিংস দাঙ্গা ও ক্ষয়ক্ষতি

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে উল্টো ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নেয়।

রাজধানী কাঠমান্ডুসহ প্রায় সব বড় শহরে সরকারি দপ্তর, পার্লামেন্ট ভবন, মন্ত্রণালয় ও আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভে ৫০ জনের বেশি নিহত এবং হাজারো ভবন ধ্বংস হয়েছে।

অনেক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নেন।

শিক্ষামন্ত্রী রঘুজি পন্তার বাড়ি সম্পূর্ণ আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী কার্যত পুরো দেশ পরিচালনা করছে। রাত-দিন কারফিউ জারি করা হয়েছে; রাস্তায় সাঁজোয়া যান ও সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বারবার ছাত্রনেতা এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

অনেকেই বলছেন, সেনাবাহিনী না থাকলে নেপাল আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতো।

প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেল কয়েক দিনঅদৃশ্য থাকার পর শুক্রবার প্রকাশ্যে আসেন এবং কারকির নিয়োগ অনুমোদন দেন।

প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা সুনীল বাহাদুর থাপা জানান, পার্লামেন্টও বিলুপ্ত করা হয়েছে। কারণ পার্লামেন্ট ভবন সম্পূর্ণ ভস্মীভূত।

কারকি শিগগিরই মন্ত্রিসভা গঠন করবেন এবং সম্ভবত ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে।

শপথ অনুষ্ঠানে অ্যামেরিকা, চায়না ও ভারতের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। তিন দেশই দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগতভাবে নেপালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

নেপালের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামী

সুশীলা কারকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন চরিত্র হিসেবে খ্যাত। ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি সরকারের এক অবৈধ নিয়োগ বাতিল করেন।

এতে ক্ষমতাসীন দলগুলো তাঁকে অভিশংসনের চেষ্টা করলেও জনমতের কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। নারীর অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন এক অনন্য কণ্ঠস্বর।

রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকেই মনে করছেন, বিচারপতির অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশ পরিচালনার মতো রাজনৈতিক সংকট সামাল দেওয়া সহজ হবে না।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেকবিচারপতি বলারাম কে.সি.র মন্তব্য, ‘বিচারপতি হওয়া আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা দায়িত্ব।’

নেপালের তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান চায়। তারা মনে করে, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে।

প্রতিদিন হাজারো যুবক বিদেশে শ্রমবাজারের খোঁজে দেশ ছাড়ছে, যা নেপালের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার করে তুলছে।

এমন পরিস্থিতিতে সুশীলা কারকির নেতৃত্ব এক নতুন সূচনা হতে পারে, তবে তিনি কীভাবে সংকট সামলাতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে।