বাংলাদেশকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাসস

মে ২ ২০২৩, ১৭:০২

বাংলাদেশকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
  • 0

বাংলাদেশকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে এ ঋণ দেয়া হবে। 

বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে স্থানীয় সময় সোমবার বাংলাদেশ ও এই সংস্থার মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস সেখানে ছিলেন।

পাঁচটি প্রকল্প হলো, রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট (আরআইভিইআর), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট সাসটেইনেবলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশান (বিইএসটি), অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস)- বাংলাদেশ ফেইয- ১, ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) এবং সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশনান (এসএমএআরটি)।

এর মধ্যে আরআইভিইআর ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। এটি দেশের বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা করবে। প্রকল্পটির জন্য ঋণের ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ হবে।

দ্বিতীয় প্রকল্প বিইএসটির জন্য বরাদ্দ হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। এটি বাংলাদেশে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।

এসিসিইএসএস প্রকল্পের বাংলাদেশ ফেইযের জন্য খরচ হবে ঋণের ৭৫৩.৪৫ মিলিয়ন ডলার। ঢাকার সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

৫০০’ মিলিয়ন ডলারের তৈরি হবে জিসিআরডি প্রকল্পটি, যা দেশকে পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু সহনশীল করে তুলতে কাজ করবে।

এরপর ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে এসএমএআরটি প্রকল্পে। এটি ক্ষুদ্র শিল্পখাতকে আরও গতিশীল, কম দূষণকারী, দক্ষ এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধির খাতে পরিণত করতে সহায়তা করবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে সোমবার সকালে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। 

সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয় এবং বাংলাদেশ কখনোই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ঋণের ফাঁদে পড়েনি।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সহিষ্ণুতা। গণহত্যার পর আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালে ধ্বংসের মুখে থাকা একটি অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম।

‘আমাদের উন্নয়ন যাত্রা মসৃণ ছিল না। বাংলাদেশ বারবার সামরিক বাহনীর ক্ষমতা দখল, চরমপন্থি হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। জাতি অবশেষে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে গত দেড় দশকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই সমান আচরণ নিশ্চিত করে। সুশাসনের জন্য জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্তরে দায়বদ্ধ।’

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

‘বাংলাদেশ দেখিয়েছে, তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে। আমি আস্থাশীল যে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশে আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা দেশের দায়িত্বশীল ও অবদানকারী সদস্য হিসাবে আমাদের ভূমিকা আরও প্রসারিত করতে চাই।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিকগুলোর বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন