ইউক্রেন-রাশিয়া সরাসরি আলোচনার ৫ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৭ ২০২৫, ০:১৯

ইস্তাম্বুলের একটি প্রাসাদে আলোচনা হয় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। ছবি: ডেইলি সাবাহ/ইপিএ

ইস্তাম্বুলের একটি প্রাসাদে আলোচনা হয় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। ছবি: ডেইলি সাবাহ/ইপিএ

  • 0

শান্তি আলোচনার শুরুতে সাফল্য না এলেও পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন পেয়েছে ইউক্রেন। দেশটির একটি সূত্র বলেছে, আলোচনায় রাশিয়া যেসব শর্ত উত্থাপন করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর তিন বছরের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসে দেশ দুটি। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুক্রবার হওয়া এ আলোচনায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেনি কিয়েভ ও মস্কো।

শান্তি আলোচনার শুরুতে সাফল্য না এলেও পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন পেয়েছে ইউক্রেন। দেশটির একটি সূত্র বলেছে, আলোচনায় রাশিয়া যেসব শর্ত উত্থাপন করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।

দীর্ঘ সংঘাতে থাকা দুই দেশের মধ্যকার এ আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে রয়টার্স ও ডেইলি সাবাহ। সেখান থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো টিবিএন পাঠকদের জন্য।

১. যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত উভয় দেশ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বন্ধে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষকে চাপ দিয়ে আসছেন। এর মধ্যেই ২০২২ সালের মার্চের পর প্রথমবার যুদ্ধরত দুটি পক্ষের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ হয়। তাদের মধ্যে ইস্তাম্বুলের একটি প্রাসাদে আলোচনা হয় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে।

এ বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাশিয়া বলেছে, তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত। উভয় দেশই জানিয়েছে, তারা এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময় করতে রাজি হয়েছে। বাস্তবায়ন হলে এটিই হবে দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়।

২. রাশিয়ার দাবি মানতে নারাজ ইউক্রেন

আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, রাশিয়ার দাবিগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত। এগুলো মাত্রাতিরিক্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরও জানায়, যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নিজস্ব ভূখণ্ডের অংশবিশেষ থেকে দেশটিকে সরে যেতে আলটিমেটাম দিয়েছে মস্কো। এটি ছাড়াও আরও অবাস্তব এবং গঠনমূলক নয় এমন শর্ত দিয়েছে রাশিয়া।

কিয়েভের প্রত্যাশা, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি মেনে না নিলে রাশিয়ার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা দেবে পশ্চিমা দেশগুলো।

ইস্তাম্বুলে আলোচনা শেষ না হতেই ট্রাম্প এবং ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়া যুদ্ধবিরতি না মানলে দেশটির ওপর যেন বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, এমন দাবি করেছেন তিনি।

এমন বাস্তবতায় ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন জানান, মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে ইইউ।

৩. যুদ্ধবিরতির আগে আরও আলোচনা চায় রাশিয়া

ইউক্রেন তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চাওয়ার পাশাপাশি ফলপ্রসূ আলোচনার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে আরও শান্তি আলোচনা চেয়েছে। কূটনৈতিক উপায়ে যুদ্ধ বন্ধের ইচ্ছার কথা জানিয়ে মস্কো বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন ও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। দেশটি বলেছে, সেনাদের বিশ্রাম, সেনা সমাবেশ এবং আরও পশ্চিমা অস্ত্র পাওয়ার উপায় হিসেবে যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগাতে পারে ইউক্রেন।

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আলোচনার অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে ইউক্রেন ও মিত্ররা। তাদের ভাষ্য, পুতিন শান্তি চাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী নন।

৪. শান্ত পরিবেশ

ইউ আকৃতির একটি টেবিলে পরস্পরের মুখোমুখি বসে আলোচনাকারী দল দুটি। রাশিয়ার প্রতিনিধিদের পরনে ছিল স্যুট। অন্যদিকে ইউক্রেনের অর্ধেকের বেশি প্রতিনিধির গায়ে ছিল সামরিক পোশাক।

বৈঠকের পর তুরস্কের এক কর্মকর্তা জানান, আলোচনার সময় পরিবেশ ছিল শান্ত।

তার ভাষ্য, পরবর্তী ধাপের আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থানের বিষয়ে সম্মত হয়নি দুই দেশ। আলোচনার বিষয়ে দুই পক্ষই আগে তাদের নেতাদের ব্রিফ করবে। ইউক্রেনের একটি সূত্র জানায়, দেশটির প্রতিনিধিরা একজন দোভাষীর মাধ্যমে নিজেদের ভাষায় কথা বলেন। যদিও ইউক্রেনে রুশ ভাষা বহুল প্রচলিত এবং সেটি বোঝেন ইউক্রেনীয়রা।

আলোচনা সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানায়, রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতা ভ্লাদিমির মেদিন্সকি জানান, যতদিন প্রয়োজন যুদ্ধ করতে প্রস্তুত রাশিয়া। ওই সময় সুইডেনের বিপক্ষে জার পিটার দ্য গ্রেটের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মেদিন্সকি। ১৭ শতকের শুরুর দিককার ওই যুদ্ধ ২১ বছর স্থায়ী হয়েছিল।

৫. ফের বৈঠকে উভয় পক্ষের ‘সম্মতি’র কথা জানাল তুরস্ক

আলোচনায় সভাপতিত্ব করা তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, ‘ফের বৈঠকে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে’ দুই পক্ষ। তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে চিন্তাগুলো লিখিত আকারে উপস্থাপন করবে।

তুর্কি, রুশ ও ইউক্রেনী পতাকা সামনে রেখে আলোচনার টেবিলের সম্মুখভাগে বসেন ফিদান। তার কথায় পরবর্তী আলোচনার সম্ভাবনা উঠে এলেও প্রথম দিনের আলোচনায় মৌলিক বিষয়গুলোতে উন্নতি দৃশ্যত সামান্য।