বাঁ-হাতি এই পেইসারের বোলিং তোপে মঙ্গলবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪৫.২ ওভারে ১২৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ৯ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া শরিফুল। জবাবে অধিনায়ক লিটন দাসের হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৫৯ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় বাংলাদেশ। লিটন ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

তিনটি পরির্বতন নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তিন পেইসার এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় একাদশে সুযোগ হয় দুই পেইসার তাসকিন-শরিফুল ও স্পিনার তাইজুলের।

তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন শরিফুল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ১ রানে বিদায় দেন ইব্রাহিম জাদরান। একই ওভারের পঞ্চম বলে রহমতশাহকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে আবারও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান শরিফুল। মুশফিককে ক্যাচ দেওয়া রহমতশাহ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।

শরিফুলের জোড়া আঘাতের পর প্রথম উইকেটের দেখা পান তাসকিন। নিজের তৃতীয় ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ৬ রানে থামিয়ে দেন তিনি। এবারও উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন মুশফিক।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবারও সাফল্য পান শরিফুল। রাউন্ড দ্য উইকেটে বোলিং করে মোহাম্মদ নবিকে (১) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন শরিফুল।

চাপে পড়া আফগানিস্তানকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হাসতউল্লাহ শাহিদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। সাবধানে খেলতে থাকেন তারা। কিন্তু এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি সাকিব আল হাসান। ১৬তম ওভারে নাজিবুল্লাহকে ফেরান সাকিব। ১০ রানে নাজিবুল্লাহ আউট হলে ভেঙ্গে যায় ৪৫ বলে ১৭ রানের জুটি।

এরপর আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে নিয়ে জুটির চেষ্টা করেন শাহিদি। ২২তম ওভারে তাইজুলের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি (২২)।

নিজের অষ্টম ওভারে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আব্দুল রহমানকে ৪ রানে থামিয়ে চতুর্থ উইকেট নেন শরিফুল। ৬৮ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে এক শর নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে আফগানরা।

লোয়ার-অর্ডার ব্যাটার নিয়ে লড়াই করেন আজতুল্লাহ ওমারজাই। অষ্টম উইকেটে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরেক ক্রিকেটার জিয়া-উর-রহমানের সঙ্গে ২১ রান যোগ করেন ওমারজাই। ৫ রান করা জিয়াউরকে তাইজুল বোল্ড আউট করলে ভেঙ্গে যায় জুটি।

নবম উইকেটে মুজিব-উর-রেহমানকে নিয়ে এই ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি গড়ে আফগানিস্তানের রান এক শ পার করেন ওমারজাই। জুটি গড়তে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ওমারজাই। ৪৫তম ওভারে মুজিব ও ওমারজাই জুটি ভাঙ্গেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১১ রান করে মিরাজের শিকার হন মুজিব।

৪৬তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে ৫৬ রান করা ওমারজাইকে থামিয়ে আফগানিস্তানের ইনিংসের ইতি টানেন তাসকিন। ১২৬ রানে শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৯ ওভারে ২১ রানে ৪ উইকেট নেন শরিফুল। এছাড়া তাসকিন-তাইজুল ২টি করে এবং মিরাজ-সাকিব ১টি করে উইকেট নেন।

১২৭ রানের সহজ টার্গেটে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তান পেসার ফজলহক ফারুকির বলে বোল্ড হন মোহাম্মদ নাইম (০)।

নাজমুল হোসেন শান্ত এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। ১১ রান করে ফারুকির বলে বোল্ড হন তিনি। এ অবস্থায় অধিনায়ক লিটন দাসের সাথে জুটি বাঁধেন সাকিব। দ্রুত রান তুলে অষ্টম ওভারে দলের স্কোর ৫০ পার করেন তারা। ১৭ ওভার শেষে দলের রান ৮৯তে নেন লিটন-সাকিব।

১৮তম ওভারের প্রথম বলে লিটন-সাকিব জুটি ভাঙ্গেন নবি। ৫টি চারে ৩৯ বলে ৩৯ রান করে নবির শিকার হন সাকিব। তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৬১ রান যোগ করেন লিটন-সাকিব জুটি।

সাকিব যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৮ রান দূরে বাংলাদেশ। তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৩৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি গড়ে ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন লিটন। ৫৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। ১৯ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। আফগানিস্তানের ফারুকি ২টি ও নবি ১টি উইকেট নেন।

১৪ জুুলাই থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।