
মধ্যপ্রাচ্যে টানা সফরে কীভাবে প্রাণশক্তি ধরে রেখেছেন ট্রাম্প?

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৬ ২০২৫, ২০:৩১ হালনাগাদ: নভেম্বর ১১ ২০২৫, ১৫:১২

সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে শুক্রবার আবুধাবিতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়েন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
- 0
অ্যামেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭৮ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হয় ট্রাম্পের। এ বয়সে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ সফরে তিনি দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কর্মব্যস্ত ছিলেন। শেষ গন্তব্য আবুধাবিতেও সমানভাবে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে চার দিনের সফরের শেষ গন্তব্য হিসেবে বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে পা রাখেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেখান থেকে শুক্রবার দেশের পথে রওনা হন তিনি।
সফরে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশে ট্রাম্পের একের পর এক কর্মসূচি এবং প্রাণশক্তি ধরে রেখে কীভাবে তিনি সেগুলো সম্পন্ন করেছেন, তা তুলে ধরেছে আবুধাবিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল।
প্রায় বিরতিহীন কর্মসূচি
সৌদি আরবের রিয়াদে মঙ্গলবার বিমান থেকে নামার পর প্রায় বিরতিহীন কাজ করে গেছেন সত্তরোর্ধ্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার সফরসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল একের পর এক বৈঠক, কোনো অনুষ্ঠান বা ফোরামে মূল বক্তব্য প্রদান ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ।
সৌদির রিয়াদ ও কাতারের দোহায় জনসমক্ষে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি দেশ দুটির গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক গন্তব্যগুলোতে যান তিনি।

দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কর্মব্যস্ততা
অ্যামেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭৮ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হয় ট্রাম্পের। এ বয়সে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ সফরে তিনি দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কর্মব্যস্ত ছিলেন। শেষ গন্তব্য আবুধাবিতেও সমানভাবে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্য সফরের শুরুতে ১৪ ঘণ্টা ভ্রমণ করে ওয়াশিংটন থেকে রিয়াদে যান ট্রাম্প। এ যাত্রায় সাতটি টাইম জোন পাড়ি দেন তিনি।
যাত্রাপথে চ্যালেঞ্জ
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়লেও সফরে ট্রাম্পের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘ পথ পাড়ি। যাত্রাপথে জ্বালানি নেওয়ার জন্য তার বিমান যুক্তরাজ্যেও যাত্রাবিরতি নেয়। একইভাবে আমিরাত থেকে অ্যামেরিকা যাওয়ার পথেও যুক্তরাজ্যে থামবে তার বিমান।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য
সুস্থতা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বয়স যাই হোক না কেন, এত দীর্ঘ যাত্রা ও বিরামহীন সফরসূচি মেনে চলতে সহিষ্ণুতা ও নিজের প্রতি খেয়াল রাখার প্রয়োজন হয়।
দুবাইয়ের ওয়েলথ ক্লিনিকের কার্যকর ওষুধ ও নন্দনতত্ত্ব কনসালট্যান্ট ডা. কারিমা আরুদ বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ সফর ও দ্রুত টাইম জোন পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে।
তিনি বলেন, মেলাটোনিন উৎপাদন হ্রাস, কোষের পুনরুদ্ধারে ধীরগতি এবং দেহঘড়ির ছন্দে পরিবর্তনের মতো বয়সজনিত বিষয়গুলো ভ্রমণকে শরীরের জন্য বেশি ক্লান্তিকর করে তুলতে পারে, তবে সঠিক কৌশলের মাধ্যমে বিদেশ সফরের সময় শরীরের সহিষ্ণুতা ও সুস্থতা ধরে রাখা পুরোপুরি সম্ভব।
দুবাইয়ের অ্যাস্টার ক্লিনিকের বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিরাঞ্জনা শ্রীদেবী নন্দকুমার জানান, টাইম জোন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দীর্ঘ বিমান ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও ঘুমে ব্যাঘাত।
তিনি বলেন, দেহের প্রাকৃতিক অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম আলো, তাপমাত্রা ও মেলাটোনিনের মতো সংকেতের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক আলোর সান্নিধ্য, শারীরিক কর্মকাণ্ড ও মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট পরিস্থিতির সঙ্গে দেহের মানিয়ে নেওয়া সহজ করতে পারে। একই সঙ্গে এগুলো ভালো মানের বিশ্রামে সহায়ক হতে পারে।
ডা. আরুদের মতে, পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নেওয়া সহজ করার আরেকটি উপায় হলো আগেভাগে প্রাকৃতিক আলোর সংস্পর্শে আসা। এর ফলে দেহঘড়ি নতুন করে সচল হয়। ট্রাম্প মঙ্গলবার সকালে রিয়াদে নামেন।
এ বিশেষজ্ঞের মতে, শরীরে পুষ্টির জোগানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সন্ধ্যার দিকে ম্যাগনেশিয়াম গ্লিসাইনেট ঘুমের মানের উন্নতিতে সহায়তা করে।
আরুদ আরও বলেন, শরীরকে যথেষ্ট আর্দ্র রাখা, দুপুরের পর ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল কম গ্রহণ এবং নতুন টাইম জোনের সঙ্গে মিল রেখে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ শরীরের শক্তির স্তরে ভারসাম্য রাখতে সহায়তা করে। এটি হজমেও সহায়ক হয়। এ ছাড়া ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের নিদ্রা রাত্রিকালীন বিশ্রামকে প্রভাবিত না করে দিনের বেলার অবসাদ দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
সফরের বেশির ভাগ সময় ট্রাম্পকে বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে। তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্যে অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা দোহার আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে বক্তব্য দেন তিনি। এরপর তার নামের সঙ্গে যুক্ত ‘ট্রাম্প ড্যান্স’ দেন তিনি।