সার্ফবোর্ড কেড়ে নিচ্ছে সামুদ্রিক ভোঁদড়
টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ১৪ ২০২৩, ৩:৩৬
- 0
ক্যালিফোর্নিয়ার বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা ৫ বছর বয়সী একটি সামুদ্রিক ভোঁদড়কে (সি অটার Enhydra lutris) ধরার চেষ্টা করছেন। প্রাণীটির অপরাধ সে সার্ফারদের সার্ফবোর্ড কেড়ে নিয়ে করে তা দিয়ে সার্ফিং করার চেষ্টা করে!
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্রুজে গত কয়েক বছর গ্রীষ্মের সময়ে অসংখ্য সার্ফার সমুদ্রে ‘সার্ফ বোর্ড ছিনতাই’ এর শিকার হয়েছে। এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই ভোঁদড়টি আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা সোমবার বলেন, তারা এ ধরণের আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফের (সিডিএফডব্লিউ) এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেন, ‘বাড়তে থাকা জননিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে সামুদ্রিক ভোঁদড় ধরা ও পরিচালনায় প্রশিক্ষিত সিডিএফডব্লিউ ও মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ামের একটি দল এটিকে ধরা ও পুনর্বাসনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রাণীটিকে অটার-এইট ফোর ওয়ান নামে অভিহিত করেছেন। ভোঁদড়টি তার সাহসী মনোভাব ও সার্ফবোর্ড দিয়ে কলাকৌশল দেখানোর জন্য সুপরিচিত। কর্মকর্তারা এখন এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন যা বন্য প্রাণীদের কাছে মানুষের যাওয়ার কারণে প্রাণীরা কিভাবে তাদের স্বাধীনতা হারাচ্ছে বা কিভাবে প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিচ্ছে তা চিত্রিত করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সামুদ্রিক ভোঁদড় একটি বিপন্ন প্রজাতি যা কেবল ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলেই পাওয়া যায়। একসময় এখানে হাজার হাজার ভোঁদড় এখানকার পানিতে ঘুরে বেড়াত।
বর্তমানে তিন হাজারের মতো ভোঁদড় টিকে আছে। যেগুলোর অনেকেই কায়াকার, সার্ফার, প্যাডেল বোর্ডারদের এলাকায় বসবাস শুরু করে দিয়েছে।
মানুষের এত কাছে আসার পরেও ভোঁদড় ও মানুষের সম্পর্ক এখনও সেভাবে গড়ে উঠেনি। সান্তা ক্রুজের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশবিদ টিম টিঙ্কার বলেন, ‘বন্য প্রাণীদের মানুষের প্রতি সহজাত ভয় রয়েছে। সাধারণত তারা আমাদের এড়িয়ে চলার জন্য দূরত্ব বজায় রেখে চলে। মানুষের কাছে একটি সামুদ্রিক ভোঁদড়ের আসা স্বাভাবিক নয়।’
তিনি জানান, গর্ভাবস্থার সময় সাধারণত হরমোনের প্রভাবে ভোঁদড় মানুষের কাছে আসে। সে সময় মানুষেরা তাদের দিকে যায় ও তাদের খাবার খাওয়ায়। অটার-এইট ফোর ওয়ানের মায়ের ক্ষেত্রে সম্ভবত এমনটাই ঘটেছিল।
অটার-এইট ফোর ওয়ানের মা অনাথ ও বন্দী অবস্থায় বেড়ে উঠেছিল। তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়ার পরে মানুষ তাকে স্কুইড খেতে দেয়া শুরু করে। দ্রুত সে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কিছুদিন পর তাকে আবার তাকে আবার সান্তা ক্রুজের মেরিন ওয়াইল্ডলাইফ ভেটেরিনারি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে সরিয়ে আনা হয়।
গবেষকরা এর পর দ্রুতই বুঝতে পারেন সে গর্ভবতী। বন্দী অবস্থায় কিছুদিন থাকার পরেই সে ওটার-এইট ফোর ওয়ানকে জন্ম দেয়।
দুধ ছাড়ানোর আগ পর্যন্ত ভোঁদড়টিকে তার মা-ই লালন পালন করে। তারপরে মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ামে স্থানান্তরিত হয় প্রাণীটি। মুক্তির পরে মানুষের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করা থেকে বিরত রাখার জন্য এর তত্ত্বাবধায়করা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তার চারপাশে থাকার সময় চেহারাকে অস্পষ্ট করে এমন মুখোশ ও পঞ্চো পরার ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।
এতকিছুর পরও মানুষের প্রতি ভয় হারিয়ে ফেলে অটার-এইট ফোর ওয়ান। যার কারণ বিশেষজ্ঞদের কাছে অজানা।
মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ামের সি-অটার প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেসিকা ফুজি বলেন, ‘এক বছর বনে উন্মুক্ত থাকার পর আমরা সার্ফার, কায়াকার এবং প্যাডেল বোর্ডারদের সঙ্গে তার সখ্যতার খবর পেতে শুরু করি। আমরা জানি না কিভাবে এটা হয়েছে। তাকে খাওয়ানোর কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে গত কয়েক গ্রীষ্মকাল ধরে এটি অব্যাহত রয়েছে।’
সান্তা ক্রুজে ওয়াটার ক্রাফটে ২০২১ সালে ওটার-এইট ফোর ওয়ানকে প্রথম চড়তে দেখা যায়। আচরণটি বিরল হলেও সময়ের সঙ্গে ভোঁদড়টি আরও সাহসী হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহের শেষে ভোঁদড়টিকে তিনবার সার্ফবোর্ড চুরি করতে দেখা গেছে।
সান্তা ক্রুজের জনপ্রিয় সার্ফ স্পট স্টিমার লেনে সোমবার সার্ফিং করছিলেন ৪০ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুন লি।
তিনি বলেন, ‘আমি ভোঁদড়টি থেকে দূরে যাওয়ার জন্য প্যাডেল করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এটি কামড়ে পা কাঁটার আগে খুব বেশি দূর যেতে পারিনি।’
লি তার বোর্ড ছেড়ে দিয়ে আতঙ্কের সঙ্গে দেখেন ভোঁদড়টি তার বোর্ডে উঠে শক্তিশালী চোয়াল দিয়ে সেটি টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার সার্ফবোর্ড দূরে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এটি শক্তভাবে আমার সার্ফবোর্ড ধরে রাখে।’
সান্তা ক্রুজের কাওয়েল বিচে গত মাসে ১৬ বছর বয়সী নোয়া ওয়ার্মহুট এক বন্ধুর সঙ্গে সার্ফিং করছিলেন। সে সময় অটার-এইট ফোর ওয়ান সঙ্গে সাঁতার কাটছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে এটি আরও কাছে চলে আসে। তখন আমি আমার বোর্ড থেকে লাফিয়ে পড়ি। তখন এটি আমার বোর্ডে উঠে পড়ে। বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি সে সময়। চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা ছিল।’
তরুণ এ সার্ফার তখন পানি থেকে ভোঁদড়টির সার্ফিং করা দেখতে থাকেন।
ভোঁদড়কে সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা সি-অটার স্যাভির পরিচালক ও বিজ্ঞানী জেনা বেনটাল বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। ভোঁদড়দের তীক্ষ্ণ দাঁত ও চোয়াল কামড়ে ঝিনুক ভেঙ্গে ফেলার মতো শক্তিশালী।’
মানুষের সংস্পর্শও ওটারদের জন্য বিপজ্জনক। যদি ভোঁদড় কোন মানুষকে কামড়ায় তাহলে স্টেইটের আইনে সেটিকে হত্যা করা ছাড়া আর উপায় নেই। তবে কম সামুদ্রিক ভোঁদড় অবশিষ্ট থাকায়, একটি প্রাণীর ক্ষতিও প্রজাতিটিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কর্তৃপক্ষ যদি অটার-এইট ফোর ওয়ানকে ধরতে সফল হয়, তবে এটিকে আগে মন্টেরে বে অ্যাকোয়ারিয়ামেনিয়ে আসা হবে। পরবর্তীতে অন্য কোনোখানে সরিয়ে নেয়া হবে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তাকে ধরার একাধিক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কোনটিই সফল হয়নি।
যতক্ষণ না ভোঁদড়টিকে ধরা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপার্টমেন্ট অফ ফিশ এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ফারদের এটিকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।