চার্জারের বিদায়, এক ডায়মন্ড ব্যাটারি চলবে টানা ৫,৭০০ বছর

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬ ২০২৫, ৭:১৭ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৩ ২০২৫, ১৯:৩৫

৫,৭০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম ডায়মন্ড ব্যাটারি। ছবি: উনিয়োঁ রায়ো

৫,৭০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম ডায়মন্ড ব্যাটারি। ছবি: উনিয়োঁ রায়ো

  • 0

চিকিৎসার ক্ষেত্রে, পেসমেকারে এমন ব্যাটারি থাকলে তা রোগীর পুরো জীবন চলতে পারে। কয়েক বছর পরপর সার্জারির মাধ্যমে বদলানোর দরকার হবে না।

ভাবুন তো, এমন একটি ব্যাটারি যেটি কোনোদিন চার্জ দিতে হবে না! এখানে পাওয়ার ব্যাংক বা কয়েকদিন চার্জ না দিয়েও চলা ব্যাটারির কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না। এটি এমন কিছু যা টানা ৫,৭০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিজ্ঞানীরা সত্যিই তৈরি করছেন এমন এক ডায়মন্ড ব্যাটারি, যেখানে ব্যবহার হচ্ছে কার্বন-১৪।

সায়েন্স ও প্রযুক্তি ভিত্তিক স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম উনিয়োঁ রায়ো জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ার স্টার্টআপ এনডিবি ইনকর্পোরেটেডের সাথে যৌথভাবে ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রকল্পটি শুরু করেছেন।

ধারণাটি সহজ মনে হলেও আসলে এটি বড় এক উদ্ভাবন। এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে পারমাণবিক বর্জ্য, যেটিকে ল্যাবে তৈরি কৃত্রিম হীরার ভেতরে রাখা হয়। এর ফলে তৈরি হয় এমন এক শক্তির উৎস, যা নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং প্রায় চিরদিন চলতে সক্ষম।

এই উদ্ভাবনের মূল রহস্য হলো কার্বন-১৪। এটি একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যা নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের গ্রাফাইট ব্লকে থাকে। এটি প্রতি সময় ক্রমাগত শক্তি উৎপাদন করে এবং এর অর্ধেক- জীবন প্রায় ৫,৭৩০ বছর। যখন এটিকে কৃত্রিম হীরার মধ্যে রাখা হয়, তখন হীরা কাজ করে শিল্ড হিসেবে এবং একই সঙ্গে রেডিয়েশনকে বিদ্যুতে রূপান্তর করার যন্ত্র হিসেবে।

এ ধরনের ব্যাটারির ব্যবহার সবচেয়ে কাজে আসবে মহাকাশ অনুসন্ধানে। সূর্যের কাছাকাছি না হলে সোলার প্যানেল ভালো কাজ করে না, আর এখনকার জেনারেটরগুলো প্লুটোনিয়াম-২৩৮-এর ওপর নির্ভরশীল, যা খুবই কম পাওয়া যায়।

ডায়মন্ড ব্যাটারি ব্যবহার করলে একটি যন্ত্র শত বছর ধরে চলতে পারবে, কখনো বন্ধ হওয়ার ভয় ছাড়াই। এটি দূরের মহাকাশযান পাঠানো বা দীর্ঘ দূরত্ব থাকা গ্রহে অভিযানের সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। এই কারণেই নাসা এই আবিষ্কারে দিক মনোযোগ দিচ্ছে। কারণ এটি তাদের ভবিষ্যতের মিশনের জন্য নতুন শক্তির উৎস খুঁজে পাওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই ব্যাটারি শুধুই মহাকাশে নয়, পৃথিবীতেও এর অনেক ব্যবহার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসার ক্ষেত্রে, পেসমেকারে এমন ব্যাটারি থাকলে তা রোগীর পুরো জীবন চলতে পারে। কয়েক বছর পরপর সার্জারির মাধ্যমে বদলানোর দরকার হবে না। দূরবর্তী বা বিপজ্জনক স্থানে সেন্সর কিংবা হাসপাতালে জেনারেটরের জন্য বা যেখানে সম্পদ কম বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, সেখানে এই ব্যাটারি অবিরাম কাজ করতে পারবে।

এছাড়া, এনডিবি জানায় ভবিষ্যতে এই ব্যাটারি ফোন বা ল্যাপটপেও চালাতে পারে।

তবে বড় পরিসরে কৃত্রিম হীরা তৈরি এখনো ব্যয়বহুল, আর তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার কঠোর নিয়ন্ত্রণের অধীনে। সঙ্গে মানুষকে বোঝানোও একটি সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। কারণ কেউ চাইবে না নিউক্লিয়ার ব্যাটারি নিজের পকেটে বহন করতে। তবে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেন, এটি যে রেডিয়েশন ছাড়ে তা মানবদেহের চেয়ে কম, তাই এটি নিরাপদ।

সম্ভাবনা বিশাল হলেও এই প্রযুক্তি অতি শীঘ্রই জনপ্রিয় হচ্ছে না। অন্তত এক দশক সময় লাগবে এই ব্যাটারি সাধারণ ব্যবহারে আসতে।

যদি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা যায় এবং ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জন করা যায়, তবে এই ডায়মন্ড ব্যাটারি হতে পারে এমন একটি উদ্ভাবন, যা আমাদের শতাব্দীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হয়ে উঠবে যা বর্জ্যকে রূপান্তর করবে চিরস্থায়ী শক্তিতে।