ব্ল্যাক সি উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে গমের দাম

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২০ ২০২৩, ১২:৫৭

ব্ল্যাক সি উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে গমের দাম
  • 0

ব্ল্যাক সি শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়া ও পর পর তিন রাত ইউক্রেইনের বন্দশহর ওডেসায় হামলার মধ্যেই বিশ্ববাজারে বেড়েছে গমের দাম।

ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের চেয়ে বুধবার ৮.২ শতাংশ বেড়ে প্রতি টন ২৮৪ ডলার হয়েছে। ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫.৪ শতাংশ।

অ্যামেরিকায় এদিন সিবিওটি হোয়েট ফিউচারের দাম ৮.৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০২২ সালে ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেইনের খাদ্য শস্য রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জাতিসংঘ ও তুর্কিয়ের মধ্যস্থতায় গত বছরের জুলাই মাসে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে ‘ব্ল্যাক সি শস্যচুক্তি’ নামে চুক্তিটি সই হয়। এরপর আরও কয়েকবার চুক্তিটি নবায়ন করা হয়েছে এবং এর অধীনে ইউক্রেইন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টন শস্য ও অন্যান্য খাদ্য সরবরাহ করেছে।

চুক্তিটি নবায়নের শেষ দিন ছিল সোমবার। তবে রাশিয়া এ দিন চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এর পর টানা তিন রাত ইউক্রেইনের ওডেসাসহ কয়েকটি বন্দরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেইন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক টুইটারে বলেন, ‘রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে শস্য টার্মিনাল এবং বন্দর অবকাঠামো লক্ষ করে হামলা চালাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেইনের শস্য রফতানির সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা।’

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউক্রেইনিয়ান বন্দরের উদ্দেশে ব্ল্যাক সি দিয়ে যাওয়া সব নৌযানকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে। এসব নৌযান মিলিটারি কার্গো বহন করছে এবং যুদ্ধে কিয়েভের পক্ষ নিচ্ছে- এমন ধরে নিয়েই হামলা চালাবে মস্কো।

এসব ঘটনায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাডাম হজ বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘ব্ল্যাক সি শস্য চুক্তি থেকে বের হওয়ার রাশিয়ার সিদ্ধান্ত খাদ্য অনিরাপত্তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিপর্যস্ত করবে।’

ইউক্রেইনের ওডেসা পোর্ট এলাকায় রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা


এর মধ্যে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেন, পশ্চিমা বিশ্ব শস্য চুক্তিকে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইলিংয়ে আর ইউক্রেইন ব্ল্যাক সি গ্রেইন রুটকে যুদ্ধের উদ্দেশে ব্যবহার করছে।

তিনি জানান, দাবি পূরণ হলে অবিলম্বে শস্য চুক্তিতে ফিরে আসবে মস্কো। আর এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাশিয়ান শস্য ও সার বিক্রির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং রাশিয়ার এগ্রিকালচারাল ব্যাংককে বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা- সুইফটের সঙ্গে ফের যুক্ত করা।

বৃটেইনভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের প্লাটফর্ম ম্যারেক্সের বিশ্লেষক চার্লি সেরন্যাটিনগার বলেছেন, রাশিয়ার হামলার হুমকির কারণে ব্ল্যাক সি দিয়ে সব ধরনের শস্য রফতানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক সিয়ের শস্যবহনকারী নৌযান ও ওডেসা বন্দর রক্ষায় ইউকে, ইউএস, ফ্রান্স ও তুর্কিয়ের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেইনিয়ান এমপি ওলেকসি গনচ্যারেনকো।

তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই পুতিনের লক্ষ্য হলো খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত করা এবং বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া। এটি উন্নত দেশগুলোকে মূল্যস্ফীতির দিকে ধাবিত করবে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সামাজিক অস্থিতিশীলতা, অনাহার ও অভিবাসীদের ছোটাছুটি বাড়িয়ে তুলবে।’

এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস বলেছেন, বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ বিপাকে পড়তে যাচ্ছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রধান গোজি ওকোনজো-ইওয়েলা টুইট করে বলেন, ‘ব্ল্যাক সি দিয়ে খাদ্যশস্য, পশুখাদ্য ও সার বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, চুক্তি নবায়ন না করায় গরিব মানুষ ও গরিব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন