বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় কারও দিকে তাকায় না অ্যামেরিকা
টিবিএন ডেস্ক
মে ১৭ ২০২৩, ১৭:১৬
- 0
অ্যামেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তা আফরিন আখতার বলেছেন, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণে রাশিয়া, চীন বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক বিবেচনায় নেয় না।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সফরকালে দেশটির জাতীয় সংবাদ সংস্থা- বাসসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
আফরিন অ্যামেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান আফ্রিকান (এসসিএ) ফর নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভুটান অ্যান্ড দ্য মালডিভস- এর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। তিনি ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর সম্মেলনে (আইওসি) যোগ দিতে চলতি সপ্তাহে দুইদিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন।
বাসসের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অ্যামেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্ক চীন, রাশিয়া ও অন্য কোনো দেশ দিয়ে নির্ধারিত হয় না… বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সম্পর্কে আবদ্ধ বাংলাদেশ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।'
সম্প্রতি ঢাকার প্রকাশিত ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের (আইপিও) সঙ্গে ইউএস ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির (আইপিএস) মিল আছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ব্যাপকভাবে দুইদেশের নথিপত্র, আমাদের স্ট্র্যাটেজি ও আপনাদের (বাংলাদেশের) আউটলুকের মধ্যে অনেক মিল পেয়েছি। আমরা দুপক্ষই অবকাঠামো ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি গড়ে তোলার দিকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের আইপিওতে ‘সমুদ্র নিরাপত্তা’ বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে যা অ্যামেরিকা ও অন্যান্য কোয়াড সদস্যদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করব… অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ আইপিওর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেখানে বাংলাদেশের জন্য অ্যামেরিকা শীর্ষ রফতানি গন্তব্য এবং বাংলাদেশে শীর্ষ বিনিয়োগকারী। সুতরাং আমরা আবারও আগামী বছরগুলোতে এটি তৈরি করতে চাই।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা
অ্যামেরিকান এই কূটনীতিক জানান, বাংলাদেশের অপরাধ বিরোধী এলিট বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞার পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে’ যাওয়া দেখে ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, ’আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে যাওয়াকে স্বাগত জানাই... তবে আমাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রবণতার স্থায়িত্ব, র্যাবের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দরকার… আমি বলব যে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিগত পরিবর্তন দেখতে হবে।
বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং কোথায় এই অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হচ্ছে তা নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তা সহযোগিতা
ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন বলেছেন, অ্যামেরিকা এখন জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (জিএসওএমআইএ) অবশিষ্ট বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এটি ব্যাপক সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি (জিএসওএমআইএ) আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে।’
জিএসওএমআইএ হলো অ্যামেরিকা ও অন্যান্য সরকারের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত গোপন সামরিক তথ্য সুরক্ষার একটি পারস্পরিক আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি।
আফরিন বলেন, ‘অ্যামেরিকা তার ইন্দো-প্যাসিফিক মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়ারনেস ইনিশিয়েটিভ (আইপিএমডিএ)-র অধীনে সমুদ্র এলাকায় একটি অভিন্ন পরিচালনা কার্যক্রম উন্নয়নে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে রাডার প্রযুক্তি সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।’
বিনিয়োগ পরিকল্পনা
আখতার জানান, অ্যামেরিকান সরকার বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতের ওপর জোর দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার সুযোগ খুঁজব ও জ্বালানি খাতে সহায়তার জন্যে অপেক্ষা করব… অ্যামেরিকার বেসরকারি খাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। যদিও অ্যামেরিকান ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক পরিবেশ আরও উন্নত করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের বাণিজ্য অ্যাটাশে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্বচ্ছ ও অ্যামেরিকার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে.. এখানকার অ্যামেরিকান শ্রম অ্যাটাশেও ইউনিয়ন নিবন্ধন ও শ্রম আইনের অভিন্ন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’