অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন
ইরানে হামলার আগে ৮ মাস গোপনে প্রস্তুতি নেয় ইসরায়েল

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৩ ২০২৫, ১৮:১২

ইরানের রাজধানী তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পাশে উদ্ধারকারীরা। ছবি: ওয়েস্ট এশিয়া নিউজ এজেন্সি/রয়টার্স

ইরানের রাজধানী তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পাশে উদ্ধারকারীরা। ছবি: ওয়েস্ট এশিয়া নিউজ এজেন্সি/রয়টার্স

  • 0

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচিকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তেহরানের দুই ধরনের স্থাপনায় যুগপৎভাবে ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনাটি আসে গত বছরের অক্টোবরে। ওই মাসে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ইরান।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ক্ষেত্র, বিজ্ঞানী ও জেনারেলদের ওপর শুক্রবার হামলা করে ইসরায়েল।

এ আক্রমণের আগে তেল আবিব আট মাস ধরে গোপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় বলে এক প্রতিবেদনে জানায় অ্যাক্সিওস।

অ্যামেরিকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের সূচনা করে, যার অংশীদার হয়ে যেতে পারে অ্যামেরিকা। ফলে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চুক্তির আশা শেষ হয়ে যাবে।

এ হামলা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান সরকারের ওপর একক সবচেয়ে বড় ধাক্কা। এটি এখনও শেষ হয়নি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, অভিযান অন্তত কয়েক দিন চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস করতে চায় ইসরায়েল। দেশটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সামরিক অভিযান কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।

অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলা শুরুর সময়ে পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার চেষ্টা করে ইসরায়েল। দেশটির মতে, এ বিজ্ঞানীরা পরমাণু বোমা তৈরি করতে জানেন।

তেল আবিবের লক্ষ্য ছিল প্রায় ২৫ জন বিজ্ঞানীকে হত্যা। তাদের মধ্যে অন্তত দুজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ছাড়া ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের মধ্যে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের প্রধান, সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং অন্য একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযানে শুধু বিমান হামলা করে থেমে থাকেনি ইসরায়েল। ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট ছিল। তারা গোপনে ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রগুলোতে নাশকতামূলক অভিযান চালায়।

আসন্ন দিনগুলোতে অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর পাশাপাশি ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হামলার পরিকল্পনা

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচিকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তেহরানের দুই ধরনের স্থাপনায় যুগপৎভাবে ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনাটি আসে গত বছরের অক্টোবরে। ওই মাসে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ইরান।

অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেপণাস্ত্র এবং গত বছর ইসরায়েলি পাল্টা হামলার পর দেশটির দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে হামলার পরিকল্পনা শুরুর নির্দেশ দেন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, ইরানে হামলার বিষয়ে অন্য যে বিষয়টি কাজ করে, সেটি হলো পরমাণু অস্ত্র নিয়ে তেহরানের গবেষণা ও উন্নয়ন। ইসরায়েল বুঝতে পেরেছিল যে, সিদ্ধান্ত নিলে খুব দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে ইরান।

আসন্ন সপ্তাহগুলোতে একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার উদ্বোধনের পরিকল্পনা ছিল ইরান। এটি অ্যামেরিকার বিশাল বাঙ্কার বাস্টার বোমা থেকেও সুরক্ষিত। এ সংক্রান্ত তথ্য ইরানে ইসরায়েলের হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে।

ট্রাম্পের চুক্তির পরিকল্পনা সত্ত্বেও হামলার প্রস্তুতি

ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে ট্রাম্পের ইচ্ছা সত্ত্বেও তেহরানের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকে তেল আবিব। ইসরায়েল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, যুদ্ধের রসদ মোতায়েন ও মহড়া দিতে থাকে।

এ ধরনের প্রস্তুতি হোয়াইট হাউসে কাউকে কাউকে বিচলিত করে। তাদের উদ্বেগ ছিল, ট্রাম্পের সবুজ সংকেত না পেলেও হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারেন নেতানিয়াহু।

হামলা না করার বিষয়ে ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন নেতানিয়াহু। হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে নেতানিয়াহুকে জানানো হয়, ইরানে হামলা করলে ওয়াশিংটনকে পাশে পাবে না তেল আবিব।

সাম্প্রতিক দিনগুলো, এমনকি হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেও ট্রাম্প জানান, ইরানে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে তিনি। কারণ এ হামলা চুক্তিকে শেষ করে দেবে, তবে হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা রিপোর্টারদের জানান, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করেই সব করা হয়েছে।

দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসের কাছে দাবি করেন, প্রকাশ্যে ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতার ভান করছিলেন ট্রাম্প ও তার মিত্ররা, কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে তারা এর বিরোধিতা করেনি।

এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে অ্যামেরিকার স্পষ্ট সবুজ সংকেত ছিল।’

এ কর্মকর্তাদের মতে, জনসমক্ষে হামলার বিরোধিতা করে অ্যামেরিকার শীর্ষ কর্মকর্তারা ইরানকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন যে, হামলা আসন্ন নয়। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের লক্ষ্যে থাকা ইরানিরা যাতে নতুন কোনো অবস্থানে না যেতে পারে, সেটিও নিশ্চিত করা হয়।

নেতানিয়াহুর সহকারীরা ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলি রিপোর্টারদের জানান, সোমবার এক কলে ট্রাম্প দৃশ্যত ইসরায়েলি হামলা ঠেকানোর কথা বললেও আদতে সেটি ছিল হামলার আগে সমন্বয়।

যদিও এসব তথ্যের কোনোটিই নিশ্চিত করা হয়নি অ্যামেরিকার তরফ থেকে।

হামলার আগে ও পরের ঘণ্টাগুলোতে প্রকাশ্য বিবৃতি এবং মিত্রদের কাছে দেওয়া গোপন বার্তায় ইসরায়েলি অভিযানের আলোচনা থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

হামলার পরপরই সেক্রেটারি অব স্টেইট মার্কে রুবিও বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা ছিল ‘একতরফা’ এবং এতে অ্যামেরিকার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প হামলা পরিকল্পনার কথা জানতেন বলে নিশ্চিত করেন, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামলায় অ্যামেরিকার কোনো ধরনের সামরিক সংশ্লিষ্টতা নেই।

ইসরায়েলের এ অভিযানে অ্যামেরিকার গোয়েন্দা, আনুষঙ্গিক এবং প্রতিরক্ষাগত সহায়তা কতটা ছিল, সেটিই এখন দেখার বিষয়।