
ভুয়া লেনদেনে হাওয়া ৩৫ কোটি রুপি

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭ ২০২৫, ২৩:১৪

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর এআই নির্মিত চিত্র। ছবি: এনডিটিভি
- 0
মতুঙ্গা ওয়েস্টের বাসিন্দা ভারত হরকচাঁদ শাহর অভিযোগ, গ্লোব ক্যাপিটাল মার্কেটস লিমিটেড নামের একটি ব্রোকারেজ কোম্পানি তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে চার বছর ধরে অনুমোদনহীন লেনদেন করেছে।
পুঁজিবাজারে ভুয়া লেনদেনের মাধ্যমে প্রতারণকারীরা আত্মসাৎ করেছেন ৩৫ কোটি রুপি। এ লেনদেন চলেছে চার বছর ধরে। অথচ পুরো সময়ে বিষয়টি সম্বন্ধে জানতেন না মুম্বাইয়ের ৭২ বছর বয়সী এক বিনিয়োগকারী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার জানায়, ভুক্তভোগী মুম্বাই শহরের মতুঙ্গা ওয়েস্টের বাসিন্দা ভারত হরকচাঁদ শাহ।
তার অভিযোগ, গ্লোব ক্যাপিটাল মার্কেটস লিমিটেড নামের একটি ব্রোকারেজ কোম্পানি তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে চার বছর ধরে অনুমোদনহীন লেনদেন করেছে।
কী ঘটেছিল
মুম্বাইয়ের প্যারেল এলাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কম ভাড়ার একটি গেস্ট হাউস পরিচালনা করতেন হরকচাঁদ শাহ। ১৯৮৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে একটি শেয়ার পোর্টফোলিওর মালিক হন তিনি, কিন্তু পুঁজিবাজার সম্বন্ধে হরকচাঁদ কিংবা তার স্ত্রীর জ্ঞান না থাকায় তারা কখনও সক্রিয়ভাবে লেনদেনে যুক্ত হননি।
এ দম্পতির সঙ্গে প্রতারণার শুরু হয় ২০২০ সালে। এক বন্ধুর পরামর্শে হরকচাঁদ গ্লোব ক্যাপিটাল মার্কেটস লিমিটেডে একটি ডিম্যাটারিয়াইলাইজড ও লেনদেনের অ্যাকাউন্ট খোলেন। এরপর কোম্পানিটির কাছে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া শেয়ার হস্তান্তর করেন তিনি।
শুরুতে কোম্পানির সঙ্গে হরকচাঁদের সোজাসুজি যোগাযোগ চলছিল। কোম্পানির প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে বেশ কিছু আকর্ষণীয় নিশ্চয়তা দিতেন।
তারা হরকচাঁদকে জানান, লেনদেনের জন্য তার বাড়তি বিনিয়োগের দরকার হবে না। জামানত হিসেবে রাখা শেয়ারগুলোর মাধ্যমে নিরাপদে লেনদেন করা যাবে।
কোম্পানির প্রতিনিধিরা হরকচাঁদকে জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে তাকে ‘ব্যক্তিগত পরামর্শক’ দেওয়া হবে। সেই সুযোগে পরামর্শকের বেশধারী কোম্পানির দুই কর্মী অক্ষয় বাড়িয়া ও করণ সিরোয়ার ওপর দায়িত্ব পড়ে হরকচাঁদের পোর্টফোলিও ‘ব্যবস্থাপনা’র। এভাবে হরকচাঁদ ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় কোম্পানিটি।
থানায় হরকচাঁদের করা ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট-এফআইআর অনুযায়ী, পোর্টফোলিওর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। দুই প্রতিনিধি শুরুতে প্রতিদিনই হরকচাঁদকে কল দিয়ে কোন অর্ডারটা দিতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতেন, কিন্তু শিগগিরই কর্মীরা হরকচাঁদের বাড়িতে আসা শুরু করেন এবং তাদের নিজস্ব ল্যাপটপ থেকে ইমেইল পাঠাতে শুরু করেন।
হরকচাঁদ শাহ জানান, তাকে ভুল বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছেন কোম্পানির লোকজন। তিনি প্রতিটি ওটিপিতে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া প্রতিটি এসএমএস ও ইমেইলের জবাব দেন। হরকচাঁদকে কেবল তার যতটুকু জানা দরকার, সে তথ্যটুকু দেওয়া হতো।
হরকচাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিস্তৃত পরিসরে লেনদেনের বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন না এ বিনিয়োগকারী। তিনি ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে যেসব বার্ষিক বিবৃতি পেয়েছেন, সেগুলোর সবকটিতে ‘মুনাফা’ দেখানো হয়েছে।
প্রতিবারই স্বচ্ছ বিবৃতি আসায় হরকচাঁদ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ করেননি।
প্রতারণা উন্মোচন যেভাবে
প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। গ্লোব ক্যাপিটালের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে হরকচাঁদকে কল দিয়ে বলা হয়, তিনি ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টগুলোতে ডেবিট ব্যালেন্স এসেছে ৩৫ কোটি রুপি। এটি দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে তাদের মালিকানাধীন শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেওয়া হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হরকচাঁদ কোম্পানিটির অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, বিশাল পরিমাণে অনুমোদনহীন লেনদেন হয়েছে তার অ্যাকাউন্টে। তার কোটি কোটি রুপি মূল্যের শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। একই পক্ষ থেকে অসংখ্যবার লেনদেনের ফলে অ্যাকাউন্টটি বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে।
প্রতারণার এ ঘটনায় হরকচাঁদ ‘সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতি’র অভিযোগ করে ভানরাই থানায় এফআইআর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ৪২০ ধারায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরবর্তী তদন্তের জন্য মামলাটি হস্তান্তর করা হয়েছে মুম্বাই পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ উইংয়ে।