শাহজাদা দাউদকে পাকিস্তানের অন্যতম ধনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এনগ্রো করপোরেশন লিমিটেডে এবং কেমিক্যাল উৎপাদক কোম্পানি দাউদ হারকিউলিস করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে তিনি ইউকে ভিত্তিক প্রিন্স ট্রাস্ট চ্যারিটির বোর্ড সদস্য।
দাউদ জন্মসূত্রে পাকিস্তানের নাগরিক। ইউনিভার্সিটি অফ বাকিংহাম থেকে আইন নিয়ে পড়াশনা করতে বৃটেইনে পাড়ি জমান। তিনি ফিলাডেলফিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে গ্লোভাল টেক্সটিং মার্কেটিং থেকে স্নাতকোত্তর করেন।
শাহজাদা দাউদ গত রোববার তার ছেলেকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে সাবমেরিনে চড়েন। তবে যাত্রা শুরু করার মাত্র পৌনে দুই ঘণ্টা পরেই মাদার ভেসেলের সঙ্গে টাইটান নামের সাবমেরিনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দাউদের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা যেভাবে উদ্বেগ দেখিয়েছেন সেজন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং এ সময়ে পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা ও তাদের নিরাপদে ফেরার জন্য প্রার্থনা করতে সবাইকে অনুরোধ করছি। পরিবারের বাকি সবাই ভালো আছেন এবং দুজনের নিরাপদে ফিরে আসার জন্য তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন।’
দাউদ পরিবার পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি। এই পরিবারের সঙ্গে বৃটেইনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শাহজাদা দাউদ তার স্ত্রী ক্রিস্টিনের সঙ্গে সারে ম্যানশনে থাকেন। দাউদ ও ক্রিস্টিন দুটি সন্তান রয়েছে, যার মধ্যে ছেলে সুলেমান এবার বাবার সঙ্গে সাবমেরিন অভিযানে রয়েছে। শাহজাদা দাউদের আরেক কন্যা সন্তানের নাম আলিনা।
টাইটান সাবমেরিনটিতে আরও আছেন ৫৮ বছর বয়সী বৃটিশ ধনকুবের ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং। হার্ডিং একজন বিখ্যাত অভিযাত্রী। এর আগে মহাকাশ মিশনে গিয়ে তিনবার তিনি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
সাবমেরিনে আছেন ৭৭ বছর ফ্রেঞ্চ পল-হেনরি নারজিওলেট। নারজিওলেট ফ্রেন্স নেভির একজন সাবেক কর্মকর্তা ও ডুবুরি। তার মুখপাত্র ম্যাথিও জোহান বলছেন, নিখোঁজ সাবমেরিনের বাকি আরোহীদের মনোবল চাঙা রাখতে নারজিওলেট সাহায্য করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
সাবমেরিনটির চালক হিসেবে আছেন ওশানগেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী স্কটনরাশ।
উদ্ধার তৎপরতায় জড়িত মঙ্গলবার জানান, নিখোঁজ সাবমেরিনটিতে আর ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেনের জোগান রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে সেটি উদ্ধার না করা না গেলে আরোহীদের কেউ জীবিত থাকবেন না।
অ্যামেরিকান কোস্ট গার্ড মঙ্গলবার জানিয়েছে, কানাডার নিউফাউল্যান্ড উপকূলে ডুব দেয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর রোববার সকালে সাবমেরিনটি স্থলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। এতে ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেনের জোগান রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে সেটি উদ্ধার না করা না গেলে আরোহীদের কেউ জীবিত থাকবেন না।
বৃটেইনের মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র জানান, সাবমেরিনটি ন্যাটো সাবমেরিন রেসকিউ সিস্টেমের (এনএসআরএস) আওতার চেয়ে অনেক বেশি গভীরে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডেভিড মারকুয়েট বলেন, ‘এসব উদ্ধার অভিযান অনেক জটিল, কারণ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এমন ডুবোজাহাজ অ্যামেরিকা বা কানাডা কারোর নেই।’
সাবমেরিনের অবস্থান অনেক গভীরে হওয়ায় উদ্ধার কাজ সহজ হবে না বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।