
বিচারকদের ওপর আক্রমণ বাড়িয়ে কী অর্জন করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১ ২০২৫, ১৮:০১ হালনাগাদ: নভেম্বর ১৭ ২০২৫, ৯:৫৯

ইলাস্ট্রেশনে অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: লাইভ ল ডট ইন
- 0


প্রকাশিত: মে ৩১ ২০২৫, ১৮:০১ হালনাগাদ: নভেম্বর ১৭ ২০২৫, ৯:৫৯

ইলাস্ট্রেশনে অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: লাইভ ল ডট ইন
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা গড়াচ্ছে আদালত পর্যন্ত। সেখানে আইনি চ্যালেঞ্জে হারার পর বিচারকদের ওপর আক্রমণ ক্রমশ বাড়াচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কীভাবে সেটি করা হচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে প্রশাসন কী অর্জন করতে চায়, তা জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকার বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তর কর্তৃত্ব আছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের। অথচ বেশির ভাগ অ্যামেরিকান জানেনই না বিষয়টি। গত বুধবার সন্ধ্যায় সেই আদালতের তিন বিচারকের প্যানেল ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কের বিরুদ্ধে রায় দিলে তার প্রতিক্রিয়াটি ছিল একই সঙ্গে তাৎক্ষণিক ও পরিচিত।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘বিচারিক ক্যু’ আখ্যা দেন।
মিলার বৃহস্পতিবার বাণিজ্য আদালতের তিন বিচারকের ছবি আবার পোস্ট করে বলেন, ‘আমরা বিচারিক উৎপীড়নের মধ্যে বসবাস করছি।’
বাণিজ্য আদালতের বিচারকদের মধ্যে দুজন ছিলেন রিপাবলিকান মনোনীত।
বিচার বিভাগের ওপর আস্থা খর্বের কৌশলগত চেষ্টা
ট্রাম্প প্রশাসনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন আটকে দেওয়া আদালতের রায়গুলোর বিষয়ে চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউস তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এটি দৃশ্যত বিচার বিভাগের ওপর আস্থা খর্বের কৌশলগত চেষ্টা।
এ বিষয়ে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাকে আইনি সহায়তা দেওয়া আইনজীবী টাই কব বলেন, ‘বিচারকদের ওপর ট্রাম্পের আক্রমণগুলো ক্ষমতার পৃথকীকরণকে বাতিল করার একটি চেষ্টা। এটি সমমর্যাদার তিনটি শাখার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি প্রভাবশালী শাখা তৈরির চেষ্টা।’
অ্যামেরিকাজুড়ে আলাদা মামলাগুলোতে দেওয়া রায়ে আদালত জানিয়েছে, অনেক বিষয়ে গ্রহণযোগ্য মাত্রা ছাড়িয়েছে হোয়াইট হাউস।
বিচারকদের ভাষ্য, একজন প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক এখতিয়ার কিংবা কংগ্রেস গৃহীত আইনি সীমা বহির্ভূত কাজ করেছেন ট্রাম্প।
প্রায় ১৮০টি আদেশে প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ করেছেন বিচারকরা। যদিও অনেক মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বহাল থেকেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আটকে দিয়ে বাণিজ্য আদালত যে রায় দেয়, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় হোয়াইট হাউস। সে ক্ষোভের রেশ না কাটতেই বৃহস্পতিবার শুল্কবিরোধী রায়টি স্থগিত করে দেয় ফেডারেল আপিল আদালত।
মামলায় পরাজয়ের সঙ্গে বাড়ছে আক্রমণ
আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের পরাজয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ। এর শিকার হওয়া বিচারকদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান প্রশাসন, এমনকি খোদ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নিযুক্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
ট্রাম্প সপ্তাহটা শুরু করেন মেমোরিয়াল ডেতে বড় হাতের অক্ষরে বিচারকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ওই বার্তায় দ্রুত বিতাড়ন আটকে দেওয়ার রায়ের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘অ্যামেরিকাবিদ্বেষী বিচারকরা এমন মতাদর্শ ধারণ করেন, যা অসুস্থ।’
ইউএস কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বুধবার রায়ে বলে, শুল্ক আরোপ করতে ১৯৭৭ সালের আইনের ভুল প্রয়োগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ওই বিচারকদের ‘অনির্বাচিত বিচারক’ আখ্যা দেন।
হোয়াইট হাউযের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বৃহস্পতিবার রিপোর্টারদের বলেন, ইউএস কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের তিন বিচারক অসম্মতি জানিয়েছেন এবং নির্লজ্জভাবে তাদের বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
প্রেস সেক্রেটারির মতে, বিচারকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্তৃত্ব জোরপূর্বক কেড়ে নিতে চাইছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রেসিডেন্টকে দেওয়া জনগণের রায় বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না।
লেভিট আদালতের আরও কিছু রায় তুলে ধরেন, যেগুলোকে তিনি ‘কট্টরপন্থি’ ও ‘হাস্যকর’ মনে করেন। এসব রায়ের মধ্যে আছে ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই আটকে দেওয়া এবং শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়া ঠেকানো।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেন, এক মাস অফিস করে ট্রাম্প যে পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা দেখেছেন, তা তিন বছরেও দেখেননি জো বাইডেন।
আক্রমণে ভিন্নতা
অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্প ছাড়াও কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল আদালতের রায়ের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। ফ্র্যাংলিন ডি. রুজভেল্ট কিংবা বারাক ওবামা রায় নিয়ে তাদের দ্বিমত জানিয়েছেন, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে ভিন্নতা।
এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ও সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারি ফ্রিডম্যান বলেন, আদালতের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নাখোশ হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতিকর।
এ অধ্যাপকের মতে, সুনির্দিষ্ট বিচারকদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণের পাশাপাশি তাদের পরিচয় এমনভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ইঙ্গিত রয়েছে। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়।